অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
‘সহনীয় মাত্রায় ঘুষ’ খাওয়া ও ‘অফিসাররা চোর, মন্ত্রীরা চোর, আমিও চোর’ বিষয়ক বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করলেও সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী গত ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষা ভবনের একটি অনুষ্ঠানের সংবাদ বেশিরভাগ গণমাধ্যমে যথোপযুক্তভাবে তুলে ধরা হলেও কতিপয় পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ায় তার বক্তব্য খণ্ডিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি তার সহনীয় মাত্রায় ঘুষ নেয়া ও নিজেসহ মন্ত্রীরাও চোর সম্পর্কিত বক্তব্যকে বিএনপি জামায়াত আমলের কথা বলে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেন। যদিও তার ভিডিও বক্তব্যে একবারের জন্যও তিনি বিএনপি জামায়াতের কথা উচ্চারণ করেননি।
২৪ ডিসেম্বর দেওয়া বক্তব্যে ‘মন্ত্রীরা চোর, আমিও চোর’ এই কথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের সময় আমরা শুনতাম ডিআইএ কর্মকর্তারা স্কুল পর্যায়ে ভিজিটে গিয়ে ঘুষ খেতেন। মন্ত্রী পর্যায়ে ঘুষ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। সে কারণে সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে ধারণা ছিল, মন্ত্রীরা চোর, আমিও চোর। এটাই আমি বোঝাতে চেয়েছি।”
আর সহনশীল মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার কথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের সময় ঘুষ এত বেশি পরিমাণে লেনদেন হত যে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। ফলে শিক্ষকরা বলতেন, ঘুষ খাবেন কিন্তু একটু সহনীয় হলে আমরা পরিবার নিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারি। সেই কথাই উদাহরণ হিসেবে এটা আমি বলেছিলাম। কিন্তু আমার সেই উদাহরণকে গণমাধ্যম খণ্ডিতভাবে তুলে ধরেছেন।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, সবদিক থেকে ব্যর্থ একজন শিক্ষামন্ত্রী তোপের মুখে পড়ে এখন তার বক্তব্যকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছেন। বিএনপি জামায়াতের আমলের কথা বলে নিজের ওপর থেকে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। তার বক্তব্যের ভিডিও অনলাইনে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ভিডিওতে কোথাও তিনি বিএনপি জামায়াতের কথা উচ্চারণ না করলেও এখন বলছেন তিনি এসব বক্তব্য বিএনপি জামায়াতের আমলের কথা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন।
মন্ত্রীর লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আজ কোনও কথা বলব না। যা বলার লিখিত দিয়েছি। আপনাদের জন্য লাঞ্চের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে; লাঞ্চ খান, গল্পগুজব করুন। আজ আর কিছু বলব না।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে তাঁর পদত্যাগ চায়। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তিনি আজ তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাই এর বাইরে আজ তিনি কিছু বলতে চান না।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষাভবনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তাদের ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী দুর্নীতি নিয়ে বলেছিলেন, ‘ঘুষ খান, কিন্তু সহনশীল মাত্রায় খান’। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘খালি যে অফিসার চোর, তা না, মন্ত্রীরাও চোর, আমিও চোর… সবাইকে আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।’ তার এমন বক্তব্যে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠে। তার জবাব দিতেই আজ প্রেস বিফিং ডাকেন মন্ত্রী।