অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে ঘুষ বাণিজ্য এক মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন যেকোনো কাজ করতে গিয়ে প্রতিটি সেক্টরের পিয়ন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা পর্যন্ত পদে পদে ঘুষ দিতে হয়। বলা যায় ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে যায় না।
আর সোনার হরিণ নামের সরকারি চাকরির নাম উচ্চারণ করলেই আগে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করতে হয়। চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ অনুযায়ী ঘুষের রেট। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ঘুষের সর্বনিম্ন রেট চলছে ৫ লাখ করে। ডিগ্রী পাস একজন ছেলে পিয়ন পদে চাকরি নিতে গেলেও তাকে নগদ ৫ লাখ টাকা গুনতে হয়। আর পুলিশের কনস্টেবল পদে বর্তমান রেট চলছে সর্বনিম্ন ৮ লাখ। ছেলে-মেয়েরা ২৫ বছর টাকা খরচ করে পড়ালেখা করার পরও আবার চাকরির জন্য বাবার অবশিষ্ট জমি, গরু-ছাগল কিংবা মা-বোনের গহনা বিক্রি করে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের প্রতিটি সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যে লিপ্ত। সাধারণ মানুষ তাদের কাছ থেকে সেবার পরিবর্তে এখন চরম হয়রানি শিকার হয়ে থাকে। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রে রিপোর্ট হলেও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং সরকারের মন্ত্রীরা আরও তাদেরকে উৎসাহ দিয়ে থাকেন।
গত দুই বছর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রকাশ্যে সভায় বলেছিলেন, এটা স্পিড মানি। কাজটি দ্রত করার জন্য লোকজন কিছু টাকা দিয়ে থাকে। এটা দোষের কিছু না। এটাকে ঘুষ বলা ঠিক না।
জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীর সেই বক্তব্যের পর থেকে বিভিন্ন সেক্টরে ঘুষের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এটাকে তাদের পাওনা টাকার মতো মনে করেই নিচ্ছেন।
দেশের সকল সেক্টরে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের কারণে সাধারণ মানুষ যখন অতিষ্ট ঠিক তখনই এই অনৈতিক কাজের বৈধতা দিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
রোববার শিক্ষাভবনে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই নয় মন্ত্রীরাও দুর্নীতি করেন। তাই ঘুষ না নিতে বলার সাহস তাঁর নেই। স্কুল পরিদর্শনে গেলে খাম রেডি করাই থাকে। উনারা যেয়ে খেয়ে দেয়ে খাম নিয়ে এসে রিপোর্ট দেন।
নাহিদ বলেন. আপনাদের অনুরোধ করেছি, আপনারা ঘুষ খান, কিন্তু সহনীয় হয়ে খান। কেননা আমার সাহসই নেই বলার যে, ঘুষ খাবেন না। তা অর্থহীন হবে। নানা জায়গাই এমন হইছে, সব জায়গাই এমন হইছে। খালি যে অফিসাররা চোর তা না, মন্ত্রীরাও চোর। আমিও চোর। এ জগতে এমনই চলে আসছে। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্য আজ রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরে আলোচনার কেন্দ্রে। বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তীব্র ভাষায় সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও।
মানুষ বলছেন, প্রশ্নফাঁসের মতো শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য বন্ধেও শিক্ষামন্ত্রী চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দমন করতে না পেরে শিক্ষামন্ত্রী কার্যত আজ ঘুষের মতো একটি অনৈতিক কাজের বৈধতাই দিলেন। সাধারণ মানুষ এমনিতেই অতিষ্ট। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাতো আজ থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। শিক্ষামন্ত্রীর বিষয়ে সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত।