অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নারায়ণগঞ্জ ও রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। বলা যায় দুইটি নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটাররাও তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। যদিও দুইটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। প্রধানমন্ত্রীও চান নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। ওবায়দুল কাদের ঠিক একই কথা বলেছেন রংপুর সিটি নির্বাচনের আগের দিনও। নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়েছে।
এদিকে, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, নির্বাচন কমিশন ও বিশিষ্টজনেরা সবাই খুশী। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব রংপুর এর বাস্তব প্রমাণ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও বর্তমান সরকারের অধীনে হবে এবং সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। আর প্রতিদিন টকশোতে সরকারপন্থী বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব রংপুর এর প্রমাণ। তবে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের আস্থা আসেনি।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ ও রংপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার পিছনে সরকারের ভিন্ন উদ্দেশ্যের কথা। সরকার তার বৃহত্তর স্বার্থেই পরিকল্পিতভাবে দুই সিটির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে।
প্রথমত: বর্তমান সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে নিয়ে আসা। নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের পরই তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাসহ অন্যান্য কমিশনাররা আওয়ামী ঘরনার লোক এটা সকলের কাছে পরিষ্কার। বলা যায় নুরুল হুদাকে নিয়ে বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। সেজন্য নুরুল হুদার প্রতি বিএনপির আস্থা ফেরানোর জন্য সরকার সিটি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেনি।
দ্বিতীয়ত: সরকারের জানা ছিল নারায়ণগঞ্জে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ ছাড়াই দলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বিজয়ী হবে। এখানে হস্তক্ষেপ করলেও আরও দুর্নাম হবে। এবং আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রণ অনিশ্চিত হয়ে যাবে। এরপর রংপুরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হবে এটাও সরকারের জানা ছিল। দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হস্তক্ষেপ করলে ভবিষ্যতের জন্য খারাপ নজির হয়ে থাকবে। এখন সরকার বলতে পারছে যে আমাদের অধীনেও নির্বাচন সুষ্ঠু হয়। বিএনপির অভিযোগ ভিত্তিহীন।
জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে যত নির্বাচন হবে সবগুলোকেই সরকার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবে। বিএনপিকে বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনার জন্য যা যা করা দরকার সরকার সবই করবে। কিন্তু, বিএনপিকে তারা ফাইনাল মাইরটি দেবে জাতীয় নির্বাচনে।
অনেকেই মনে করছেন, রংপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন সরকারের একটা কৌশল। বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতেই সরকার এ কৌশল অবলম্বন করছে। বিএনপি যদি সরকারের এই ফাঁদে পা দিয়ে শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে বড় ধরণের ভুল করবে।