সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেছেন, প্রশ্নফাঁসের জন্য কোনোভাবেই শিক্ষকরা দায়ী নন। কর্তাব্যক্তি না চাইলে কেউ সাহস পাবে না প্রশ্নফাঁস করার। বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ সৎ, নির্ভীক, দায়িত্ববান, দক্ষ, কর্তব্যপরায়ণ ও নিষ্ঠাবান। একই সঙ্গে সময়ের আজ্ঞাবহও। আমি তো এই শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়েই দেশ নকলমুক্ত করেছিলাম। আমি তো ভারত বা আমেরিকা থেকে শিক্ষক আমদানি করিনি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এহছানুল হক মিলন বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা দেখেছিলাম শিক্ষাঙ্গনের অস্থির ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। এমনও হয়েছিল যে, পাবলিক পরীক্ষার সময় নকল সরবরাহ করতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছিল। আর পরীক্ষা কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। এ সময় এসব শিক্ষকের মাধ্যমেই নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ শিক্ষায় সব অনিয়ম হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই শিক্ষক সমাজই দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে পাবলিক পরীক্ষায় নকলের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিল।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, গুলি, কামান, আনসার, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব কিংবা দুদক ব্যবহার করে যেমন নকল প্রতিরোধ করা অসম্ভব, তেমনি প্রশ্নফাঁসের ক্ষেত্রেও। শিক্ষক সমাজের সচেতনতা, আন্তরিকতা ও ন্যায়নিষ্ঠতা থাকলে প্রশ্নফাঁস বন্ধ করা অসম্ভব কিছু নয়। শিক্ষকতা অন্যান্য পেশার মতোই জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি সম্মানজনক ও মহান পেশা। কিন্তু যদি নির্দেশ আসে ‘পাসের হার বাড়াতে হবে’ তাহলে শিক্ষকরা কোথায় যাবেন? বুঝতেই পারছেন ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’। সুতরাং সরকারের সৎ ইচ্ছা থাকলে সবকিছুই সম্ভব। প্রশ্নফাঁস বন্ধ করা অসম্ভব নয়। সরকার চাইলে শিক্ষক সমাজ প্রশ্নফাঁস বন্ধে সহযোগিতা করতে বাধ্য।
সাবেক এ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। যে কোনো জাতিকে মেধাহীন করতে চাইলে, ধ্বংস করতে চাইলে শিক্ষাব্যবস্থায় আঘাত করতে হবে। বাংলাদেশ ধ্বংস করার নীলনকশা হিসেবে প্রশ্নফাঁস করা হচ্ছে। প্রশ্নফাঁসের ফলে মেধাশূন্য জাতি ভবিষ্যতে অস্তিত্ব সংকটে ভুগবে। প্রশ্নফাঁসের ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে মাকাল ফলের অবাধ অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকার যদি প্রশ্নফাঁস বন্ধে ওয়াদাবদ্ধ হয় এবং তাদের যদি এমন পরিকল্পনা থাকে তাহলেই প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভব। সরকারকে আগে প্রশ্নফাঁস বন্ধের ‘প্রমিজ’ করতে হবে। পরে সে অনুযায়ী পলিসি তৈরি করতে হবে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
Discussion about this post