অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দেশে অব্যাহতভাবে চলছে গুম-খুন। কলেজ শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকে, ছাত্র, রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রদূত, সাবেক সেনা কর্মকর্তা কেউই রেহাই পাচ্ছেনা রাষ্ট্রশক্তির চেয়েও শক্তিশালী(!) এই গুম বাহিনীর হাত থেকে। প্রথম আলোর তথ্যমতে, গত আট বছর নয় মাসে নিখোঁজ হয়েছেন ৩৯৫ জন, পরে লাশ পাওয়া যায় ৫২ জনের, ফিরে আসে ১৯৫ জন, আর এখনো নিখোঁজ আছেন ১৪৮ জন। গত তিন মাসেই গণ্যমান্য ১৩ ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্য চারজনের খোঁজ মিলেছে। অন্যদের এখনো খোঁজ মেলেনি। বাসা থেকে বেরোলে সে আর বাসায় ফিরবে কিনা এই নিশ্চয়তা এখন বাংলাদেশের কারোরই নেই।
গুম-খুনের আতঙ্কের এই দেশেও ভিনদেশ থেকে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ভাড়ায় আনা এক পুতুল নিয়ে মিডিয়াজুড়ে মাতামাতি এবং মন্ত্রী এমপিদের অতি উল্লাশ দেখে রীতিমত অবাক হতে হয়েছে। যেই দেশ এই রোবট পুতুল সোফিয়াকে আবিস্কার করেছে তারাও এর শতভাগের এক ভাগ উল্লাশ করেছে কিনা সন্দেহ। ভাড়া করে একটি পুতুল এনে আমরা আমাদের ডিজিটালিত্বের মাত্রার উর্ধগমনের জানান দিচ্ছি!! কত হাস্যকর হতে পারে এই প্রচেষ্টা!!
অবশ্য সবার সাথে গা ভাসিয়ে না দিয়ে অনেকেই বাঙালির এই অতি হুজুগের সমালোচনা করেছেন। সাপ্তাহিক সম্পাদক ও টকশো ব্যক্তিত্ব গোলাম মোর্তোজা তার ফেসবুকে সোফিয়া মাতামাতিকে উদ্দেশ্য করে পরোক্ষভাবে লিখেছেন-
“বছর ১৫ আগে জাপানে ইলেকট্রনিক কমোট দেখেছিলাম। সঙ্গে একটি নিয়েও এসেছিলাম। বাথরুমে ঠুকলেই কমোডের ঢাকনা নিজে থেকে দাঁড়িয়ে যায়। ভেবে নিতে পারেন, আপনাকে সম্মান জানাল। কমোড গরম রাখার ব্যবস্থা আছে। রিমোট কন্ট্রোল পুশ করলে যাবতীয় কর্ম সম্পন্ন করে দেয়। উঠে দাঁড়ালে ফ্ল্যাশ হয়ে যায়। ঢাকনা নিজে থেকে নেমে আসে। এখন হয়ত কথা শুনে ধোয়া- মোছার কর্ম করে দেওয়ার প্রযুক্তিও চলে এসেছে। আমি বলছি ১৫ বছর আগের কথা।
‘কমোড দাঁড়িয়ে সম্মান জানায়’ এই শিরোনামে পত্রিকাগুলোর প্রথম পৃষ্ঠায় অর্ধ পৃষ্ঠা জুড়ে নিউজ তো হতেই পারে। টেলিভিশনগুলোও ফলাও করে সংবাদ প্রচার করতে পারে। হাজার হাজার মানুষ তা দেখার জন্যে ভিড় করতে পারে। দেখতে না পেয়ে হা- হুতাস করতে পারে। কর্তারা পত্রিকায় ‘দেশ এগিয়ে’ যাওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিনন্দন জানাতে পারে। জনসমস্যাহীন এই দেশে একটি কমোড নিয়ে আরও কত কিছু করার আছে…।”
এসএমজি রাসেল নামে একজন মন্তব্য করেছেন, “আমাদের এমপি মিনিস্টাররা যে কতটুকু শিশুমনের অধিকারী তা সোফিয়া পুতুল নিয়ে মাতামাতি দেখেই বুঝা যায়।”
জহিরুল ইসলাম নামে আরেকজন লিখেছেন, “এত বড় প্রযুক্তি পন্যর উদ্ভাবক দেশও নিজেকে ডিজিটাল ভাবতে কুন্ঠা বোধ করে , অথচ আমরা ১২ কোটি দিয়ে ভাড়া করে আনা রোবট দিয়ে ডিজিটাল হয়ে গেছি , সবাই পেল সোনার খনি আমি পেলাম চোরের ?”
ওবায়েদুর রহমান নামে একজন একটু রসাত্মক ভাষায় লিখেছেন, “সোফিয়া এত কিছু জানে, কে মাদার অফ হিউম্যানিটি তাও জানে বাহ বাহ, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন, ব্যাংক লুট আর শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেও কি বলে জানার খুব ইচ্ছা। ও হ্যাঁ, ছাত্রলীগ এর চরিত্র কেমন হতে পারে তা সোফিয়া বলতে পারবে? ভাগ্যিস গুম খুনের কথা কিচ্ছু বলে নাই, না হয় সোফিয়াকেও খুঁজে পাওয়া যেতোনা!”
জসিম উদ্দিন নামে একজন বাঙালির হুজুগ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, “৪৭ বৎসর আগে আমাদের পাশের গ্রামের মিথুন আলি তার চাদরের ভিতর রেডিও বাজিয়ে আমাদের পাড়া দিয়ে হেটে গেল, তখন কয়েক শত মহিলা পুরুষ তার পিছনে পিছনে হাটতে লাগল, সবার একটা প্রশ্ন গান গায় কেডা?”
মোস্তাফিজুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, “সোফিয়া কার নাতনীর নাম কি তাও বলতে পারে ! তাহলে গত কয় বছরে যত গুম খুন হয়েছে সোফিয়াকে জিজ্ঞেস করলেই গুমকারীদের নাম বলে দিতে পারবে। লুটপাট,গুম,খুন,ধর্ষন ও নির্যাতন থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে ডিজিটাল প্রতারনা।”
Discussion about this post