অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৬ সালের শুরু থেকেই সরকার আগাম নির্বাচন দিতে পারে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো। বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকেও আগাম নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু, সরকার এসব গুঞ্জন ও দাবি নাকচ করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীরা বলেছেন আগামী নির্বাচন দেয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি দেশে সৃষ্টি হয়নি। নির্বাচন সময় মতোই হবে।
এরপর বিরোধী দলের পক্ষ থেকে আর কোনো দিন আগাম নির্বাচনের দাবি জানানো হয়নি। আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের জন্য বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে। জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে আবার হঠাৎ করেই দেশে আগাম নির্বাচনের কথাবার্তা শুরু হয়েছে। আর সেটার সূচনাও করেছেন খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। বুধবার সিইসি সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার আগামী নির্বাচন দিলে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত আছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের আজ শুক্রবার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে আগাম নির্বাচন দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এবিষয়ে আমার কোনো কথা হয়নি। তবে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি আছে। আগামীকাল নির্বাচন দিলেও আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব।
মেয়াদের শেষ মুহূর্তে এসে হঠাৎ কেন আগাম নির্বাচনের কথা উঠছে? আর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেই বা কেন এমন ইঙ্গিত দেয়া হলো? তা নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে নানান ধরণের গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ইঙ্গিত পেয়েই প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা সাংবাদিকদের সামনে আগাম নির্বাচনের প্রসঙ্গ এনেছেন।
একাদশ নির্বাচন নিয়ে সরকার ৩ পরিকল্পনায় এগুচ্ছে বলে জানা গেছে।
প্রথমত: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুই মামলার কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। চলতি ডিসেম্বরেই মামলা দুইটির রায় হতে পারে। রায় আদালত দিলেও মূলত নির্ধারিত হবে সরকারের উপর মহল থেকেই। জানা গেছে, সরকারের নীতিনির্ধারকদের অধিকাংশই খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার পক্ষে।
আর জার্মানির মিউনিখে জার্মান আওয়ামী লীগের সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হবেই। যদি সত্যি কোর্টের কাছে এভিডেন্স থাকে যে, চুরি করেছে, তাহলে শাস্তি হবে। সে জন্য তারা ইলেকশনই হতে দেবে না। একটা চোর এতিমের টাকা যে চুরি করে খায় তাকে রক্ষার জন্য ইলেকশন হতে দেবে না। কত আবদারের কথা, কত আহ্লাদের কথা! এত আহ্লাদ যখন, তখন গরিব মানুষের টাকা কয়টা দিয়ে দিলেই হতো। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার কিংবা জেলে পাঠানোর কোনো ভাবনা সরকারের নেই। আদালতে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে সে কারাগারে যাবে কি না, সে মাফ পাবে কি না সেটা আদালত বলতে পারবেন। সময় ও স্রোত যেমন কারো জন্য অপেক্ষা করে না, তেমনি বাংলাদেশের সংবিধান ও নির্বাচন কারো জন্য অপেক্ষা করবে না।
দ্বিতীয়ত: খালেদা জিয়ার সাজা হয়ে গেলে তখন সরকার আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারে। এই আগাম নির্বাচন ঘোষণা দেয়ার পেছনেও থাকবে সরকারের দুই টার্গেট। প্রথমে খালেদা জিয়াকে বন্দি করে সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোভাব বুঝার চেষ্টা করবে। সরকারের পক্ষ থেকে বুঝানোর চেষ্টা করবে যে, দুর্নীতির দায়ে আদালত সাজা দিয়েছে। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করবে সরকার। হয়তো নির্বাচনের সময় বিএনপির কিছু দাবি-দাওয়াও সরকার মেনে নেবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের লাভ হলো খালেদা জিয়া নির্বাচনের মাঠে নামতে না পারলে বিএনপি সুবিধা করতে পারবে না।
এরপর খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে আগাম নির্বাচনে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন না পায় তাহলে সরকার ভিন্ন চিন্তা করবে। আর সেটা হলো খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলবে। বিরোধীদলের আন্দোলনে সরকার নিজেই এজেন্সির লোক দিয়ে সহিংস ঘটনা ঘটাবে। দেশের পরিস্থিতি সহিংস রূপ ধারণ করলে সরকার অন্য কারো হতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তারা নিরাপদে চলে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে বন্দি ও আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ক্ষমতা সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার পক্ষেই বেশি মত দিয়েছে সরকারের নীতি নির্ধারনি ফোরামের অধিকাংশ সদস্য। তাদের মতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একদলীয় নির্বাচন করে আর ক্ষমতা ধরে রাখা ঠিক হবে না। বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করে যদি ক্ষমতায় আসা যায় তাহলে নির্বাচন দিতে হবে। আর বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করে যদি ক্ষমতায় না আসা যায় তাহলে সামনে বিপদে পড়তে হবে।
তৃতীয়ত: ২০১৮ সালের শেষের দিকে নির্বাচন করারও সরকারের পরিকল্পনায় আছে। সরকারের টার্গেট কিছু ছাড় দিয়ে হলেও বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসা। যেহেতু ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সরকারের ওপর বিভিন্ন ধরণের ব্লেইম দেয়া হচ্ছে তাই এবার আর এক তরফা নির্বাচন করার পরিকল্পনা সরকারের নেই। বিএনপিকে নির্বাচনে এনেই তারা আবার ক্ষমতায় আসার পরিকল্পনা করছে। এক্ষেত্রে তারা নির্বাচন কমিশনকে পুরোপুরি ব্যবহার করবে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদেরকে জেতানোর জন্য যত প্রকার মেকানিজম করা দরকার নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে তারা সবই করাবে।
জানা গেছে, সংসদ ভেঙ্গে যদি নির্বাচন দিতে হয় তাহলে সেই নির্বাচন তারা দিবে না। এমন কোনো নির্বাচন আওয়ামী লীগ দেবে না যে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করবে। তখন তারা দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাবে। পরিকল্পিতভাবেই দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে অন্য কারো হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরাপদে চলে যাবে।
Discussion about this post