আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর কারণ নির্বাচন আগাম হতে পারে, আবার নির্ধারিত সময়ের পরেও হতে পারে। দলটির নীতিনির্ধারকরা এমন তথ্য জানিয়ে বলছেন, নিজেদের জনপ্রিয়তা মজবুত থাকলে ও বিএনপিকে অসংগঠিত রাখতে পারলে আগাম নির্বাচনের দিকে ঝুঁকতে চান তারা।
নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হলে বিএনপি সংগঠিত হয়ে যাবে, এমন সম্ভাবনা থাকলেও ক্ষমতাসীনরা আগাম নির্বাচনের পথে হাঁটবে বলে জানান আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। দলটির সম্পাদকমণ্ডলীরা জানান, নির্বাচন কখন হলে সুফল পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত হয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
নির্বাচন কখন হলে আওয়ামী লীগের জন্য সুবিধাজনক হবে তা নির্ণয় করতে এখন কাজ করছে ক্ষমতাসীনরা। এজন্য দফায় দফায় জরিপ চলছে। এছাড়া সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাই আর নিজ নিজ এলাকায় সংসদ সদস্যদের ভাবমূর্তি কী, এসবও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে দলটির ভেতরে এখন চলছে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের কাজ।
জানা যায়, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন হলে কী সুফল আসবে, আবার নির্ধারিত মেয়াদ শেষে নির্বাচন হলে কী হবে, এখন সেই পর্যালোচনা চলছে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। তারপর ঠিক করা হবে আগাম নাকি নির্ধারিত সময় শেষে নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এমন আভাস পাওয়া গেছে। অবশ্য তারা জানিয়েছেন, আগাম নির্বাচনের ভাবনাও আছে আওয়ামী লীগে।
তবে জনপ্রিয়তা স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হলে পূর্ণ মেয়াদ শেষ করেই নির্বাচন হবে, এমন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলছে আওয়ামী লীগ। দলটির অন্য কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্যও জানা গেছে। তারা বলছেন, ‘নির্বাচনের এখনও এক বছর বাকি। তবে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার অবনতির দিকে গেলে নির্বাচন আগামও হতে পারে।’
সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাদের আগাম নির্বাচন হতে পারে এমন আভাস দিয়েছেন বেশ কয়েকবার।’
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘একটা নির্বাচন পেরিয়েই পরের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে আওয়ামী লীগ।’
গত ২৯ নভেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা জানান, আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতিও রয়েছে কমিশনের। এই বক্তব্যের ফলেই আগাম নির্বাচনের কথা আলোচনায় এসেছে আবারও।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানান— বিএনপি আপাতত যাতে নির্বাচনের বাইরে কোনও চিন্তা-ভাবনা করতে না পারে সেজন্য আগাম নির্বাচনের আওয়াজ তোলা হয়েছে। কয়েকজন নেতার ভাষ্য, ‘এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচনের আওয়াজ মূলত বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল। এর অংশ হিসেবে আবারও আগাম নির্বাচনের আলোচনা মাঠে এসেছে।’
এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগও আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এক মাসের নোটিশেও আমরা নির্বাচন করতে পারবো। তবে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত নেই। নির্বাচনের আওয়াজ মাঠে এসেছে মূলত বিএনপিকে আন্দোলন বিমুখ রাখতে। আওয়ামী লীগের এই মুহূর্তের কৌশল বিএনপি নির্বাচনভিত্তিক রাজনীতিতে থাকুক। বিএনপিকে আন্দোলনমুখী রাজনীতিতে আশা করে না ক্ষমতাসীনরা।’
দলের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন না-ও হতে পারে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি চাইলে যে কোনও সময়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন ডাকতে পারেন। এটা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। আর আওয়ামী লীগ সবসময়ই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। সুতরাং নির্বাচন যখনই হোক, আমরা প্রস্তুত।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post