অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেয়া পর্যবেক্ষণ নিয়ে টানা কয়েক মাস বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও বিচার বিভাগের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। এ পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্র করে সরকারের চাপের মুখে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। এমনকি বিদেশ থেকেই তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। সেই বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি।
কিন্তু, এরই মধ্যে পিলখানার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের রায়ে হাইকোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার এক পর্যবেক্ষণ দিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তবে, পর্যবেক্ষণ যেহেতু সরকারের পক্ষে আছে তাই ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়ে বিচারপতি সিনহার মতো তাকে দেশ ছাড়তে হবে না বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।
গত সোমবার পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে তিন বিচারপতি আলাদা পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার তার পর্যবেক্ষণে অনেক কথা বলেছেন। পর্যবেক্ষণের এক জায়গায় তিনি বলেছেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ছিল সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র। দেশকে অস্থিতিশীল করতে এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর অসমর্থিত সূত্রের বিভিন্ন অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ২০০৯ সালের প্রথমে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরই তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় দীর্ঘ দিন থাকার ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলানোর পরিকল্পনা করে। এজন্য তারা ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের পরামর্শ নেয়। আর ভারতের কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মধুর সম্পর্ক স্বাধীনতার পর থেকেই। ভারতও তখন সুযোগের যথাযথ সদব্যবহার করে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর বিষয়ে ভারতের নেতিবাচক ধারণা আগ থেকেই ছিল। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা ভারত অনেক আগ থেকেই করে আসছে।
জানা গেছে, ভারত শেখ হাসিনাকে তখন পরামর্শ দিয়েছে যে, বিএনপি-জামায়াতপন্থী সেনা কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। আর এদেরকে সরিয়ে না দিলে আপনার বাবার হত্যাকারীদের বিচারও করতে পারবেন না। সেনাবাহিনীতে এখনও ফারুক-রশিদদের প্রভাব আছে। যেকোনো মুহূর্তে বিদ্রোহ হতে পারে। ৭৫‘র মতো আবারো কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এইভাবেই বন্ধুদেশ ভারত এক ঢিলে দুই পাখি মারার পরিকল্পনা করে।
ভারতের এই পরামর্শেই আওয়ামী লীগ সরকার সেদিন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদেরকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে বলে মনে করেন অনেকে। এমনটাও শোনা যায় তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’।
ধারণা করা হয়, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ঘটনার আগেই সব জানতো। যেহেতু ঘটনাটি সরকারের পরিকল্পনায় হচ্ছে তাই তারা এ বিষয়ে আর মুখ খুলেনি।
এখন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের রায়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের দেয়া পর্যবেক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, যেখানে সরকারের পরিকল্পনায় পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সরকার উৎখাতের বিষয় আসবে কেন? সরকারকে খুশী করতেই বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার তার পর্যবেক্ষণে এ মন্তব্য করেছেন।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, নজরুল ইসলাম আপিল বিভাগের বিচারপতি হতে সরকারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।
Discussion about this post