অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণ ইউনেসকোর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আজ শনিবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহনের জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে চিঠি দিয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকায় শোভাযাত্রা শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনও।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশু-কিশোররাও অংশ নিবে এই শোভাযাত্রায়। জানা গেছে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে শিশু কিশোর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্নস্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোমলমতি শিশু কিশোরদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা রোদে দাঁড়িয়ে থেকে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে বাধ্য করতে দেখা গেছে।
এছাড়া জনপ্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক কর্মী ও দলীয় নেতাকর্মীরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলো বিভিন্ন অধিদপ্তরকে একই নির্দেশ দিয়েছে।
কর্মসূচির কারণে দুপুর থেকে রাজধানীর বেশ কিছু রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ বলতে শোভাযাত্রা শুরুর আগেই সেই রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগ নগরবাসীকে শোভাযাত্রার ‘রুট ম্যাপ’ দেখে চলাচলের অনুরোধ জানিয়েছে।
কর্মসূচি অনুযায়ী ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে দুপুর ১২টায় ঢাকা মহানগরের অনুষ্ঠান শুরু হবে। দুপুর ১২টার আগেই সেখানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়ো হবেন। এ ছাড়া অন্যান্য স্থান থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থলে যাবেন। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিনব্যাপী কর্মসূচি চলার কারণে শাহবাগ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকার সব সড়কগুলোতে আজ যান চলাচল প্রায় বন্ধ থাকবে। ডিএমপি থেকে পাওয়া ম্যাপ অনুযায়ী আজ আনন্দ শোভাযাত্রাটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে শুরু হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রার রুট হলো বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর থেকে শুরু করে মিরপুর রোডের রাসেল স্কয়ার দিয়ে কলাবাগান হয়ে সায়েন্স ল্যাব থেকে বাঁয়ে মোড় নিয়ে বাটা সিগন্যাল-কাঁটাবন ক্রসিং হয়ে শাহবাগ। শাহবাগ থেকে ডানে মোড় নিয়ে চারুকলা অনুষদের বিপরীত পাশে ছবির হাট হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের ক্ষেত্রে ছবির হাট গেট (চারুকলার বিপরীতে), টিএসসি গেট (বাংলা একাডেমির বিপরীতে), কালীমন্দির গেট ও তিন নেতার মাজার গেট ব্যবহার করবেন অংশগ্রহণকারীরা।
বেশ কয়েকটি রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে চরম জনভোগান্তি সৃষ্টি করে সরকারি তথা আওয়ামী লীগের প্রোগ্রামে সব ধরণের প্রোটোকল দেয়া হচ্ছে ডিএমপির পক্ষ থেকে। জনগনকে অন্য রাস্তা দিয়ে চলাচলের জন্য অনুরোধও জানাচ্ছে তারা। অথচ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশেষ করে বিরোধী দল বিএনপিকে জনভোগান্তির উসিলা দিয়ে সমাবেশ করার অনুমতিটুকু পর্যন্ত দেয়না ডিএমপি। সর্বশেষ জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস উপলক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বিএনপিকে দীর্ঘদিন পর একটি সমাবেশের অনুমতি দিলেও তাদেরকে ২৩টি শর্ত বেঁধে দেয় ডিএমপি।
ডিএমপি ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের এমন দ্বিমুখী আচরণের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, এমনিতেই যানজটের এই নগরীতে ভোগান্তি লেগেই থাকে, তার উপর দু’দিন পর পর সরকারি দলের অমুক তমুক প্রোগ্রামের নামে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে জন দুর্ভোগ কয়েকগুণে বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
কেউ কেউ বলছেন, বিএনপির সমাবেশের কাউন্টার প্রোগ্রাম করতে গিয়ে এবং বেশি মানুষের উপস্থিতি দেখাতে গিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিশু কিশোরদেরকে জোরপূর্বক বাধ্য করা হচ্ছে সমাবেশ ও শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করার জন্য। নাগরিক সমাবেশ কিংবা সরকারি কর্মচারিদের শোভাযাত্রা বলা হলেও এগুলো মূলত রাজনৈতিক সমাবেশ ও শোভাযাত্রা। তারা প্রশ্ন রাখেন- সরকারি কর্মচারি আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশু কিশোরদেরকে কেন রাজনৈতিক সভা সমাবেশে ব্যবহার করা হবে?
Discussion about this post