অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে পদের সঙ্গে দেশও ছাড়তে হবে মর্মে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক যে বক্তব্য দিয়েছিলেন অবশেষে তাই হয়েছে। বিচারপতি মানিক ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা সরকারকে বলেছিলেন, সিনহা আবার পদে বসতে পারলে সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করবেন। সরকারও সেই আলোকেই ব্যবস্থা নিয়েছে।
জানা গেছে, সিঙ্গাপুর থেকে ১০ নভেম্বর বিচারপতি সিনহা দেশে ফিরতে প্রটোকলের জন্য সুপ্রিমকোর্টকে চিঠি দিয়েছিলেন। এ তথ্য জানার পর সরকার তাকে সিঙ্গাপুরেই আটকে দিয়েছে। দেশের ফেরার অনুমতি তাকে দেয়া হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছিল যে, পদত্যাগ ছাড়া তার সামনে অন্য কোনো পথ খোলা নেই। সেজন্য বাধ্য হয়ে তিনি সিঙ্গাপুর থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে কানাডায় চলে যান।
এদিকে, সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়েও আরেক নতুন সংকটে পড়েছে সরকার। আর সেটা হলো নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এসকে সিনহার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। কিন্তু, আজ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারছেন না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবিধানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছেন যে, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে সময়ের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। রাষ্ট্রপতি যখন চাইবেন তখনই নিয়োগ দিতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি কবে নিয়োগ দেবেন সেটা তার বিষয়। তবে, আইনমন্ত্রী যাই বলুক না কেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি যে সরকার প্রধানের অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু করতে পারবে না সেটা একজন সাধারণ মানুষও ভাল করে বুঝে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আপাতত নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাকী আড়াই মাস এভাবে চালাবে।
কারণ হিসেবে অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞাকেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। কারণ, জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হওয়ার পরও এর আগে একাধিকবার ওয়াহহাব মিঞাকে বাদ দিয়ে সরকার তার আস্থাভাজনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এনিয়ে অনেক সমালোচনাও হয়েছে। সরকার এবার আর সেই বিতর্কে যেতে চাচ্ছে না। আর সরকার ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেও না। ওয়াহহাব মিঞা এক সময়ে আওয়ামীপন্থী আইনজীবী প্যানেল থেকে দুই বার সুপ্রিমকোর্ট বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও সরকার এখন আর তাকে নিজেদের লোক মনে করে না। আর যুদ্ধাপরাধের মামলার কয়েকটি রায়ে আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। এমনকি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে তিনি খালাসও দিয়েছেন। এসব কারণে, সরকার এখন আর তার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। সরকারের ধারণা, সুযোগ পেলে ওয়াহহাব মিঞাও বিচারপতি সিনহার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে পারেন।
অন্যদিকে সরকার চাচ্ছে আব্দুল ওয়াহহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রেখেই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউয়ের কাজটি সেরে ফেলতে। এসকে সিনহার ঘটনার পর সব বিচারপতিরাই এখন সরকারের প্রতি একটু নমনীয়। এ মুহূর্তে যদি অন্য কাউকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে আব্দুল ওয়াহাব মিঞা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারেন। তখন রায় রিভিউয়ের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়া অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তারও সমাধান হবে না।
এসব কারণে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে সরকার এখন নতুন সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।
Discussion about this post