অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
অসাম্প্রদায়িকতার ছদ্মবেশ ধারণকারী কট্টর বামপন্থি ও ইসলাম বিদ্ধেষী মনোভাব পোষণকারী ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশের আলেম সমাজকে বিভিন্ন ছলে বলে কৌশলে কটাক্ষ করেই যাচ্ছে। তাদের বক্তৃতা বিবৃতিতে প্রায়ই আলেমদের কটাক্ষ করে বক্তব্য দিতে শোনা যায়। বাংলাদেশের আলেম সমাজের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার সম্মানিত মুহতামিম ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা আহমদ শফি। অসাম্প্রদায়িকতার ছদ্মবেশ ধারণকারী কট্টর সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিগন সুযোগ পেলেই এই সম্মানিত আলেমকে তেতুল হুজুর বলে কটাক্ষ করেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী আজ একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘২০১৮ সালের পাঠ্যপুস্তকে সেই তেঁতুল হুজুরের প্রেসক্রিপশনে যেগুলো আছে, তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। এত দিন ধরে আলোচনা, গবেষণা, উপস্থাপন করে তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার পরেও আমাদের পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ উৎপাটন করতে পারিনি।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের চতুর্থ সম্মেলনের প্রাক্কালে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
রাশেদা কে চৌধূরী সেই সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি হচ্ছে—সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিষবাষ্প; যে শিক্ষা জন্ম থেকে শিশু শিক্ষার্থীদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, উনি হিন্দু লেখক, উনি মুসলমান লেখক ইত্যাদি, সেই জায়গায় নীতিনির্ধারকদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে।’
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও তিনি নিজেই একজন সম্মানিত আলেমকে তেতুল হুজুর বলে কটাক্ষ করে চরম সাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দিয়েছেন। আল্লামা আহমদ শফির একটি ওয়াজের কিছু অংশকে বিকৃত করে এভাবেই তারা নিয়মিতই আলেম সমাজকে টার্গেট করে আক্রমন করে যাচ্ছে।
মজার ব্যপার হলো, পাঠ্যপুস্তকের যেই পরিবর্তনের জন্য তারা হেফাজত তথা হেফাজত আমিরকে দোষারোপ করে, সেটা আদৌ সত্য নয়। হেফাজতের আন্দোলনের ফলে নতুন কোনো কিছুই পাঠ্যবইয়ে সংযোজন করা হয়নি। দুই বছর আগেও এসব গল্প কবিতা পাঠ্যবইয়ে ছিলো। অসাম্প্রদায়িকতার ছদ্মবেশ ধারণকারী এই কট্টর সাম্প্রদায়িক রাশেদা কে চৌধুরী, সুলতানা কামাল গংদের প্ররোচনাতেই মূলত সরকার পাঠ্যবইয়ে আগে থেকেই লিপিবদ্ধ থাকা মুসলিম লেখকদের গল্প কবিতাসমূহ বাদ দিয়েছিলো। হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের কারণে বাদ দেয়া সেসব গল্প কবিতাগুলোই পূনরায় যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ নতুন কোনো গল্প কবিতা যুক্ত না করে কেবলই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে পাঠ্যবইকে। এই সত্যটি তারা জানা সত্বেও শুধু মাত্র ইসলাম বিদ্ধেষী মনোভাবের কারনেই তারা প্রত্যহ আলেম সমাজকে বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করে যাচ্ছে।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, রামেন্দু মজুমদার ও শিক্ষাবিদ অজয় রায়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিয়েও সাম্প্রদায়িকতার প্রকট আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘এখনই রুখে দাঁড়াতে না পারলে সেটা এমন একটা জায়গায় পৌঁছাবে, যেখানে ৭৫-পরবর্তী সময়ে যে ক্রমে ক্রমে প্রতিটি ক্ষেত্রে কূপমণ্ডূক, সাম্প্রদায়িক, রক্ষণশীল জঙ্গিবাদী শক্তি ঢুকে গেছে, ঠিক সেভাবে যে জায়গাগুলো অবশিষ্ট আছে, সেখানেও সাম্প্রদায়িকতা ঢুকবে।’
শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারনে নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত অসহায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিয়েও তারা সাম্প্রদায়িকতার প্রকট গন্ধ খুঁজে পায়।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে মূর্তি অপসারণ আন্দোলনের সময় হাসানুল হক ইনুর জাসদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে আলেমদের চরমভাবে কটাক্ষ করা হয়। গত ১২ এপ্রিলের জাসদের সেই বিবৃতিতে বলা হয়, “তেঁতুল হুজুর গোষ্ঠীর রাজনৈতিক অবস্থান শুধু সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধীই নয়, এই ‘তেঁতুল হুজুর গোষ্ঠী’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনবিরোধী অন্ধকারের শক্তি।” মূর্তিবিরোধী আলেম সমাজকে ‘তালেবান, আইএস, আল কায়দার বাংলাদেশি সংস্করণ’ আখ্যায়িত করে সেই বিবৃতিতে বলা হয়, “তেঁতুল হুজুর গোষ্ঠীকে সামান্য ছাড় দেওয়া হলে তারা আবারও বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সংবিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে।”
হাসানুল হক ইনুর প্রায় সব বক্তব্যেই আলেমদের কটাক্ষ করে তাদেরকে জঙ্গি সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। বামপন্থি গোষ্ঠী এভাবেই এদেশে ইসলাম ও মুসলমান তথা আলেম সমাজকে প্রতিনিয়ত সুকৌশলে কটাক্ষ করে যায়। সুযোগ পেলেই তারা তার পুরো সদ্ব্যবহার করে আলেম সমাজের চরিত্র হননের ও উস্কানি দেয়ার চেষ্টা চালায়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন এমন উস্কানি অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় সাম্প্রদায়িক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখতে সরকারকে অবশ্যই অসাম্প্রদায়িকতার ছদ্মবেশ ধারণকারী কট্টর সাম্প্রদায়িক সুলতানা-ইনু-রাশেদা-শাহরিয়ার কবির গোষ্ঠীর টুটি চেপে ধরতে হবে।
Discussion about this post