অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত ৩১ অক্টোবর কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ফেনীর মহিপাল এলাকায় বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে পেট্রলবোমা হামলা ও দুটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পরপরই পুলিশ হামলার সাথে জড়িত থাকার কারণে ঘটনাস্থল থেকে যুবলীগ কর্মী পিয়ার আহমেদকে গ্রেফতার করেছিল। সেই খবর দৈনিক ইত্তেফাকে এসেছিল। এরপর আর কোন ফলোআপ পাওয়া যায়নি। আজ জানা গেল, এই হামলার ঘটনায় গতকাল রাতভর অভিযান চালিয়ে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে ফেনী মডেল থানা পুলিশ!
এর আগে ২৮ অক্টোবর কক্সবাজার যাওয়ার পথে একই স্থানে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন মিডিয়ার ভিডিও ও ছবিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদেরকে হামলায় অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। যুগান্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় হামলায় অংশগ্রহনকারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নাম পদবীসহ প্রকাশও করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি।
অবাক করা ব্যপার হলো, পুলিশ ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার তো করেইনি বরং উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা করেছে। পুলিশ খালেদার গাড়িবহরে ও বহরের সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের গাড়িতে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় বিএনপির সাবেক দুই সাংসদের দোষ খুঁজে পেয়েছে। গত মঙ্গলবার পুলিশের পক্ষ থেকে করা মামলার এজাহারে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, বিএনপির সাবেক সাংসদ জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল) এবং রেহানা আক্তার রানুর মধ্যে বিরোধের কারণে ওই হামলা হয়।
মামলাটি হয়েছে ফেনী সদর মডেল থানায়। এজাহারে দুই সাংসদের বিরোধের কথা উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী ফেনী জেলা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক এ কে নজিবুল ইসলাম। তিনি গত ২৮ অক্টোবর ফেনীর ফতেপুর ও আশপাশের এলাকায় (খালেদা জিয়ার গাড়িবহর যে পথ দিয়ে গেছে) নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।
অন্যদিকে ফেনীর মহিপালে দুটি বাস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায়ও ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে ফেনী সদর মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করে। এতে ফেনী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নঈম উল্যাহ চৌধুরীসহ ২৫ নেতা-কর্মীসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরাসহ এ মামলায় মোট আসামি ৬৫ জন।
এদিকে পুলিশের মামলার পরপরই বিএনপির সাবেক দুই সাংসদ ভিপি জয়নাল এবং রেহানা আক্তার রানু একত্রে বসে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাঁরা দুজনই দলে কোনো বিরোধ বা কোন্দল নেই বলে জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন।
লিখিত বক্তব্যে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, এ যুগে কোনো ঘটনা সহজে লুকিয়ে রাখা যায় না, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যাঁদের ছবি দেখা গেছে তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মী বলে দাবি করেন তাঁরা। ২৮ অক্টোবর সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও ৩১ অক্টোবরে বাস পোড়ানোর ঘটনায় পুলিশের করা মামলাকে আইনের শাসনের পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেন বিএনপি নেতারা। তাঁরা বলেন, পুলিশ প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করতে এবং সন্ত্রাসীদের রক্ষা করার জন্য কাল্পনিক মামলা করেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি জয়নাল হাজারী তার সম্পাদিত হাজারিকা প্রতিদিন পত্রিকায় একটি ভিডিও প্রকাশ করে সুস্পষ্টভাবেই বলেছেন, এ হামলার পেছনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত। ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর নির্দেশে দলের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে। ‘কাদের সাহেব, প্রমাণ চান? তাহলে নিজামের ভিডিওটি দেখুন’ শিরোনামে লেখা একটি কলামে জয়নাল হাজারী এসব কথা লিখেছেন।
জয়নাল হাজারীর প্রকাশিত ভিডিওটিতে দেখা যায়- ফেনীর বর্তমান আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি নিজাম হাজারী নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আজকের ঘটনার(খালেদার গাড়িবহরে হামলা) জন্য কেন্দ্র থেকে ফোন করে আমাকে এবং আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। খালেদা জিয়া আবার মঙ্গলবার আসবেন। ওই দিনও আপনাদেরকে থাকতে হবে। আপনাদেরকে নির্দেশ দেয়া হবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী আপনারা কাজ করবেন। এরপরই অনুসারীরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘নেতা আছে, নিজাম ভাই, নিজাম ভাই’ বলে।
ইলেকট্রনিক মিডিয়ার এই যুগে এতসব সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্বেও ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতাকর্মীদের গ্রফতার না করে পুলিশ উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, জনগনের টেক্সের টাকায় পরিচালিত পুলিশ বাহিনী বা প্রশাসন যখন একটি দলের দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হয় তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? কোথায় পাবে তারা আইনের শাসন কিংবা ন্যায়বিচার?
Discussion about this post