অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এক মাসের ছুটি, অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়া ও তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বত্র যে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল তা ধীরে ধীরে কমে আসছে। তবে, উত্তাপ কমার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান বিচারপতি সিনহাকে নিয়ে সরকারের সুরও নরম হয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়ার একদিন পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, উত্থাপিত অভিযোগের সুরাহা না করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা তার চেয়ারে বসতে পারবেন না। তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ দুদক তদন্ত করবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আইনমন্ত্রী আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আপিল বেঞ্চের পাঁচজন বিচারপতি যেখানে তার সঙ্গে এক বেঞ্চে বসতে রাজি নন, সেখানে তার দায়িত্বে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
একই দিন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলমও বলেছেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দায়িত্বে ফিরে আসা সুদূরপরাহত।
কিন্তু, দুই দিন পরই সরকারের সুর পাল্টে গেছে। এখন আবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রধান বিচারপতি স্বেচ্ছায় ছুটিতে গেছেন। ফিরে এসে আবার দায়িত্ব নেবেন।
সোমবার ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা যখনই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হবেন, তখনই নিতে পারবেন। এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। তিনি যদি কাল সকালে আবার দায়িত্ব নিতে চান আমার ধারণা, তাতে কোনও সমস্যা হবে না।’
হাইকমিশনার মোয়াজ্জেম আলী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিতভাবে ছুটির আবেদন করেছেন। স্বভাবতই রাষ্ট্রপতি তা মঞ্জুরও করেছেন। এখন যদি তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন কিংবা পুরোপুরি সুস্থ না হয়েও কাজে যোগ দিতে চান, তবে তিনি আবার কাজে যোগ দেবেন। এই তো ব্যাপার।’
অপরদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও বলেছেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা স্বেচ্ছায় ছুটিতে গেছেন, তিনি ফিরে এসে আবার দায়িত্ব নেবেন।
তবে অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, হঠাৎ করে সরকারের এই সুর বদলের পেছনে রয়েছে ভারতের চাপ। প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরের দিনই ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যম এনিয়ে রিপোর্ট করেছে যে, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সংখ্যালঘু হিন্দু হওয়ার কারণেই তাকে জোরপূর্বক ছুটি নিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এঘটনার পর বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
জানা গেছে, এসব রিপোর্টের পরই বাংলাদেশ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ভারত। তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর এনিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ভারতের এই চাপের কারণেই দেশটিতে থাকা বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী সাংবাদিকদের বলেছেন প্রধান বিচারপতি ফিরে এসে আবার দায়িত্ব নেবেন। একই সঙ্গে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন প্রধান বিচারপতি ফিরে এসে আবার দায়িত্ব নেবেন। মূলত ভারতকে বুঝানোর জন্যই সরকারের এই সুর বদল হয়েছে।
Discussion about this post