অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রোববার সংলাপ করেছে বিএনপি। সংলাপের শুরুতেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও দলটির অতীতের কর্মকণ্ডের প্রশংসা করে ভাসিয়ে দিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মুখে প্রশংসা শুনে বিএনপি নেতারাও বেশ খুশী বলে মনে হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বেশ আশাবাদী বলেও জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মুখে প্রশংসা শুনে বিএনপি নেতারা খুশী হলেও এনিয়ে রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সিইসি নুরুল হুদার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। যিনি একজন আমলা হয়েও খালেদা জিয়ার সরকারকে উৎখাতে জনতার মঞ্চ তৈরি করে আন্দোলন করেছিলেন সেই নুরুল হুদার মুখে জিয়াউর রহমানের প্রশংসা শুনে মানুষের মনে নানা সন্দেহ-সংশয় দেখা দেয়াটাই স্বাভাবিক।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, নুরুল হুদা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ইউনিয়নের ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত নাট্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।
এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর তৎকালীন বিএনপি সরকারকে উৎখাতে সচিবালের সামনে জনতার মঞ্চ তৈরি করেছিলেন আওয়ামী লীগপন্থী কিছু সরকারি আমলা। ঐ মঞ্চের সঙ্গে নুরুল হুদা জড়িত ছিলেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সরকারি চাকরি বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছিল। আর জনতার মঞ্চের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণেই নুরুল হুদার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল বলেও দাবি করেছেন সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিম। গত বছর বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের টকশোতে মোফাজ্জল করিম দাবি করেছেন যে, জনতার মঞ্চে উঠে নুরুল হুদা নৃত্য করেননি, কিন্তু এর নেপথ্যে তার ভুমিকা ছিল। এটার বহু এভিডেন্স আছে। এছাড়া ওই সময় তিনি কুমিল্লার ডিসির দায়িত্বে ছিলেন। তখন ডিসি অফিস থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবি নামানো হয়েছিল। বিষয়টি তিনি শুনেছিলেন বলে স্বীকারও করেছেন। একজন ডিসির অফিস থেকে তার অনুমতি ছাড়া কোনোভাবেই প্রধানমন্ত্রীর ছবি নামানোর সাহস কেউ দেখাতে পারে না।
তারপর, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ছিলেন, সে তথ্যও বেরিয়ে এসেছে অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তোলা তার একটি ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আর ধানমন্ডিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু গবেষণা সেল নামে যে প্রতিষ্ঠান আছে, নুরুল হুদা এর সদস্য ছিলেন।
অপরদিকে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে যে সব প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল রাষ্ট্রপতি এসব প্রস্তাবকে পাত্তাই দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া প্রস্তাব অনুয়ায়ীই কে এম নুরুল হুদাকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
সেই নুরুল হুদার মুখে জিয়াউর রহমান ও বিএনপির প্রশংসাকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলছেন, সিইসি নিজ থেকে এসব কথা বলেন নি। নুরুল হুদার অধীনে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে এটা সরকারের একটা কৌশল। বিএনপি যদি সরকারের এ ফাঁদে পা দেয় তাহলে আগামীতে আরও ৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকতে হবে দলটিকে।
Discussion about this post