অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুর নরম হয়ে আসছে সরকারের। বিগত দিনগুলোতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতিমানবিকতার স্লোগান দিলেও ধীরে ধীরে এখান থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে এবং দেশের বাইরে গিয়েও একাধিকবার বলেছেন, ১৬ কোটি মানুষকে খাবার দিতে পারলে ৫-৭ লাখ মানুষকেও খাবার দিতে পারবো। আমরা প্রয়োজনে একবেলা কম খেয়ে সেই খাবার রোহিঙ্গাদেরকে দেবো। কিন্তু, সেই অবস্থান থেকে এখন তারা সরে আসছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সোমবার চট্টগ্রামে বলেছেন, রোহিঙ্গাদেরকে দিন দিন টেনে নেয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রী যেদিন রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, এর পরের দিনই বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছিল যে আওয়ামী লীগ বড় ধরণের কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য এখন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নোবেলের জন্য ওই সময় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলেও অনেকে মনে করেছিলেন। এনিয়ে তখন মানুষ সমালোচনাও করেছে।
মানুষের সমালোচনার কারণ ছিল, প্রথম দিকে মিয়ানমার বাহিনীর হাতে হত্যা-নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করলেও সরকার তাদেরকে আশ্রয় দেয়নি। বরং সরকার বিজিবিকে নির্দেশ দিয়েছিল রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করতে না পারে। আর এটা শুধু এখন নয়, ২০১২ সালেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদেরকে কোনো প্রকার সহায়তা করা হবে না। নির্যাতিত রোহিঙ্গা যখন রাখাইন থেকে পালিয়ে এসে সীমান্তের জিরো পয়েন্টেও বাচঁতে পারেনি, তখন দেশি-বিদেশি চাপ আসে সরকারের ওপর। সরকার তার অবস্থানে অনড়। কিন্তু, হঠাৎ করেই একদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবিকে বললেন সীমান্ত শিথিল করে দিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে। এর একদিন পর দলীয় নেতাকর্মীদেরকেও নির্দেশ দিলেন রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে।
এরপর রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজার চলে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। কিছু ত্রাণ বিতরণ ও কান্নাকাটি করে আসলেন। আর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের থেকে গেলেন কক্সবাজারেই। এরই মধ্যে লন্ডনের অখ্যাত একটি অনলাইনে শেখ হাসিনার উদারতা নিয়ে একটি আর্টিক্যাল প্রকাশ করা হয়। যেটাতে শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। এরপর আরেকটি অনলাইনে প্রকাশ করা হয় যে, বিদেশি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদরা নোবেল কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর নাম প্রস্তাব করেছেন। এটাকে কেন্দ্র করে সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আ.লীগ নেতাকর্মীরা সকলে একসঙ্গে জারি গান শুরু করেন যে, শেখ হাসিনা এখন মানবিকতার মা। তিনি এখন উচ্চ শিখরে পৌছে গেছেন। তার তুলনা শুধু তিনি নিজেই।
এসব থেকে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয় যে, শুধু নোবেলের জন্যই শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। বিএনপি নেতারাও প্রকাশ্যে বলেছেন, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের কান্না ও রক্তকে পুজি করে শেখ হাসিনার নোবেল পাওয়ার চেষ্টা করছেন। নোবেলের জন্য লবিস্ট নিয়োগ করে রাষ্ট্রে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।
এছাড়া নোবেল পুরস্কার ঘোষণার আগ পর্যন্ত ওবায়দুল কাদের কক্সবাজার থেকে ঢাকা আসেননি। ওইখানে বসে বসে প্রতিদিন গণমাধ্যমের কাছে শেখ হাসিনার উচ্চ প্রশংসা করতেন। কিন্তু, যখনই জানতে পারলেন যে নোবেলের তালিকায় শেখ হাসিনার নাম নেই তখনই তাদের সুর নরম হয়ে আসতে থাকে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আন্তর্জাতিক মহলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। চাপ সৃষ্টি না করায় জাতিসংঘের সমালোচনা করছেন ওবায়দুল কাদের। আর গতকাল পরিষ্কার করেই বলেছেন, দিন দিন রোহিঙ্গাদেরকে টেনে নেয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়।
কাদেরের এ বক্তব্য এখন আবার নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বস্তরেই সমালোচনা হচ্ছে যে, নোবেলও নেই আওয়ামী লীগের মানবিকতাও নেই। একটি নোবেলের জন্যই শেখ হাসিনা এতদিন এসব নাটক করেছে। এখন রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতেও শেখ হাসিনা কোনো কুণ্ঠাবোধ করবে না।
Discussion about this post