মায়ানমারের সামরিক বাহিনী ও চরমপন্থী বৌদ্ধদের অত্যাচার-নির্যাতনের সংবাদ বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়া তুলে ধরছে। তবে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো ভিন্নভাবে এটি উপস্থান করে ঘৃণা ছড়াচ্ছে।
তারা বলছে, বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সামনে রোহিঙ্গারা ‘কুমিরের কান্না’ কাঁদছে।
রোহিঙ্গাদের এ পরিস্থিতিতে মায়ানমারে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা শনিবার একটি কার্টুন প্রকাশ করে।
দেশটির শীর্ষস্থানীয় কার্টুনিস্ট উইন নেইং এর আঁকা ওই কার্টুনে দেখা গেছে, কয়েকটি কুমির একটি নদীর মধ্যে আছে। এর এক পাশে কিছু প্রাণী দাঁড়ানো। অন্যপাশে একটি কুমির এক বিদেশি সাংবাদিকদের বলছে, আমি আমার মাতৃভূমিতে ফিরতে চাই। ওই কার্টুনের নিচে ক্যাপশন দেয়া হয়েছে ‘কুমিরের কান্না’।
কার্টুনটির বিষয়ে ৫৮ বছর বয়সের ওই কার্টুনিস্ট বলেন, ‘আমি আমার দেশের অবস্থা তুলে ধরতে চেয়েছি। রোহিঙ্গারা যা বলে তার অনেক কথাই সত্য নয়। দেশপ্রেমের জায়গা থেকেই আমি কার্টুনটি এঁকেছি।’
মায়ানমারের এ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতেও কিছু মুক্তবুদ্ধির মানুষ রয়েছেন। তারা রোহিঙ্গাদের সঠিক বিষয়টি বুঝতে পারলেও তা সামরিক বাহিনী ও সরকারের ভয়ে প্রকাশ করতে পারছে না।
এদিকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নিপীড়নের মধ্যেই এই ইস্যুতে মায়ানমারবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান।
তিনি বলেছিলেন, রোহিঙ্গারা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি চায়। কিন্তু মায়ানমারে এই জাতিসত্তার কোনো অস্তিত্ব নেই। রোহিঙ্গারা যে আদতে বাঙালি এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই দেশে তাদের কোনো শেকড় নেই।
রোহিঙ্গারা কয়েক প্রজন্ম ধরে ময়ানমারে বসবাস করে আসলেও তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি এমনকি মৌলিক অধিকারগুলোও দেয়া হয়নি। তারা বঞ্চিত হয়ে আসছিল চলাফেরার স্বাধীনতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে।
গত ২৫ আগস্ট কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি ও সেনা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের উপর অভিযান শুরু করে মায়ানমার সেনাবাহিনী।
এতে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে অন্তত চার লাখ রোহিঙ্গা।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অভিযোগ রাখাইন রাজ্য থেকে তাদেরকে সমূলে উৎখাত করতে পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। হত্যা, ধর্ষণ, বেপরোয়া গুলিবর্ষণের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মায়ানমারের সাধারণ বৌদ্ধরা সামরিক বাহিনী ও সু চির ভূমিকার প্রশংসা করছে। তারাও মনে করে, রোহিঙ্গারা বহিরাগত। সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মিয়ানমারের জন্য তারা বড় হুমকি।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ডটকম
ভাষান্তর: আরটিএনএন
Discussion about this post