অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে যখন বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব টালমাটাল তখন নতুন আরেক ইস্যুর জন্ম দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। আর সেটা হলো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার ভুয়া সংবাদ। ভারতীয় গণমাধ্যম সংবাদটিকে এমন এক সময়ে প্রকাশ করেছে যখন রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর হত্যা-নির্যাতনের পেছনে ভারতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। নিউজ১৮ডটকম নামের ভারতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল শনিবার এ সংবাদটি প্রকাশ করে। আর প্রতিবেদনটিও তৈরি করেছেন আলোচিত ভারতীয় সেই সাংবাদিক সুবির ভৌমিক। আর ঘটনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাভাবিক কারণে এ রিপোর্ট বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। তবে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতীয় গণমাধ্যমের এই সংবাদকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও ভুয়া বলে দাবি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে জড়িয়ে একটি সংকটময় সময়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের এ রিপোর্ট নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এ রিপোর্ট করেছে বলেও মনে করছেন বিশিষ্টজনসহ সচেতন মানুষ। ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার ইশারাতেই সুবির ভৌমিক এ রিপোর্ট করেছে বলেও মনে করছেন তারা।
বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, ভারতীয় গণমাধ্যমের এ রিপোর্টের পেছনে ৩ টি কারণ থাকতে পারে।
প্রথমত: গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার বাহিনী গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে এবং বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে রোহিঙ্গাদেরকে দেশ ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য করেছে। মিয়ানমার বাহিনীর এ বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডকে অকুণ্ঠভাবে সমর্থন জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। মোদির সমর্থনের পর মিয়ানমার বাহিনী আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। মোদির এ সিদ্ধান্তে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় সরকারসহ বাংলাদেশের জনগণ। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র অ্যানালাইসিস বিডিকে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতারাও ভারতের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গত শুক্রবার নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। আর রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ভারত এখন খুব চাপের মধ্যে আছে।
তাই ধারণা করা হচ্ছে, রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে চাপা দিতেই ভারত পরিকল্পিতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করেছে। আর ভারতীয় পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী ঘটনা ঘটেছে গত ২৪ আগস্ট। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে তারা এক মাস গোপন রাখছে কেন? রোহিঙ্গা ইস্যুতে যখন বাংলাদেশে ভারতবিরোধী জনমত তৈরি হয়েছে তখনই কেন তারা এ রিপোর্ট প্রকাশ করলো? তাদের টার্গেট রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা।
দ্বিতীয়ত: ইন্ধিরা গান্ধির মতো প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজনই তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে দুর্বল করতেই ভারত পরিকল্পিতভাবে ২০০৯ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে পিলখানায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ৫৭ জন সাহসী ও দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলো। নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে এখনো যেসব সাহসী লোক আছে তাদেরকে শেষ করতেই পরিকল্পিতভাবে কথিত হত্যার চেষ্টার সংবাদ প্রকাশ করেছে। ভারতের ধারণা এমন একটা অভিযোগ উঠলেই শেখ হাসিনার সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবে।
তৃতীয়ত: ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা ষড়যন্ত্র বানচাল করে দিয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে মারাত্মকভাবে খাটো করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত শেখ হাসিনাকে এটা বুঝাতে চাচ্ছে যে, আপনার গোয়েন্দা সংস্থা ব্যর্থ। তারা অক্ষম। অথবা তারা জানলেও বিষয়টি গোপন রেখেছে। তারাও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। আমরাই আপনাকে বড় ধরণের বিপদ থেকে রক্ষা করেছি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ শেখ হাসিনার অতি নিকটে আসার চেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য খারাপও হতে পারে। ভারতীয় গোয়েন্দারা ভবিষ্যতে বড় ধরণের কোনো ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর দায় চাপাতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।
Discussion about this post