অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার বাহিনী অল্প কিছু দিনের মধ্যে কমপক্ষে ৬ বার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। প্রথম দফায় গত ২৭ ও ২৮ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার বাহিনী ৩ বার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে। এ ঘটনা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে প্রতিবাদ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিবাদকে পাত্তাই দেয়নি মিয়ানমার বাহিনী।
গত ১০, ১২ ও ১৫ সেপ্টেম্বর আবারো ৩ দফা আকাশসীমা লঙ্ঘন করে মিয়ানমার বাহিনী। শুক্রবার সন্ধ্যায় আবারো মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আগের মতোই নামকা ওয়াস্তে প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। এছাড়া বান্দরবান সীমান্তে বাংলাদেশের বসতবাড়ি লক্ষ্য করে কয়েক দফা গুলি বর্ষণও করেছে মিয়ানমার বাহিনী।
মিয়ানমার বাহিনীর বার বার আকাশসীমা লঙ্ঘন ও বাংলাদেশের হালকা প্রতিবাদের ঘটনায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারের মতো একটি দেশের সেনা বাহিনী বার বার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘনের সাহস পায় কী করে? এমন প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।
বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, আকাশসীমা লঙ্ঘনের মাধ্যমে মিয়ানমার বাহিনী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করেছে। সরকারের দুর্বলতার কারণেই মিয়ানমার বাহিনী বার বার এসব করার সাহস পাচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখনই ভারত ও মিয়ানমার বাহিনী আকাশ ও স্থলসীমা লঙ্ঘন করার সাহস পায়। ২০১৪ সালে মিয়ানমার বাহিনী যা করেছিল।
অতীত থেকে জানা যায়, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর পাদুয়া ক্যাম্পটি ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। দীর্ঘদিন যাবত তারা বাংলাদেশের পাদুয়া গ্রামটি দখল করে রাখছিল। ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাদুয়া গ্রামটি ছেড়ে দেয়ার জন্য বিএসএফকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কোন সাড়া দেয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের তৎকালীন বিডিয়ার জোয়ানরা ২০০১ সালের ১৫ এপ্রিল রাতে পাদুয়া গ্রাম পুনরুদ্ধার করে এবং সেখানে ৩টি ক্যাম্প স্থাপন করে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে। ভারতীয় বাহিনী সেদিন একটি টু-শব্দ করারও সাহস পায়নি।
পরে ভারতীয় বাহিনী পাদুয়ার প্রতিশোধ নিতে ঘটনার তিনদিন পর ১৮ এপ্রিল বেআইনিভাবে বড়াইবাড়ী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে বড়াইগ্রামে নগ্ন হামলা চালিয়েছিল। তাদের এই হামলার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছিল বিডিয়ার জোয়ান আর বীর জনতা। দেশের স্বাধীনতা ও ভূখণ্ড অক্ষুন্ন রাখতে সেদিন আমাদের ৩ জন বিডিয়ার জোয়ান শাহাদাত বরণ করলেও ভারতীয় বাহিনীর দাম্ভিকতা চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছিল। বিএসএফের ১৬ জন সদস্য নিহত হয়েছিল। সেদিন ভারতীয় বিএসএফ আমাদের বিডিয়ারদের কাছে শুধু পরাজয়ই বরণ করেনি নিহত বিএসএফ সদস্যদের লাশ ফেলে রেখে তারা পালিয়ে গিয়েছিল। এছাড়া ২০০৪ সালেও রৌমারি সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীকে পরাজিত করেছে বিডিয়ার জোয়ানরা।
ঘটনাটি ভারত ও তার বিশাল সামরিক বাহিনীর ইজ্জতের উপর একটা বড় ধরনের আঘাত ছিল। এর পর থেকেই ভারত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে বাংলাদেশের উপর। তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের একটি মহলও ভারতের মত বিডিয়ারদের এই ভূমিকায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়। এরপরই বাংলাদেশের সরকার প্রধান ২২ এপ্রিল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারীর সাথে ফোনে বিডিয়ারের এই ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনার সেই দুঃখ প্রকাশ নিয়েও তখন সারাদেশে সমালোচনার ঝড় উঠে। বিশ্লেষকরাও তখন বলেছেন, বিডিয়ার জোয়ানরা জীবনের ঝুকি নিয়ে ভারতীয় বাহিনীকে হঠিয়ে বাংলাদেশের ভূমি দখল করলেও সরকার প্রধান ভারতের কাছে নতি স্বীকার করেছেন।
এরপর, অতীতে মিয়ানমারের সৈন্যরা দুইবার বাংলাদেশের বীর জোয়ানদের কাছে পরাজিত হয়েছে। প্রথম ১৯৯১ সালে মিয়ানমার বাহিনী বাংলাদেশের সৈন্যদের বিডিয়ার জোয়ানদের কাছে পরাজিত হয়। তারপর ২০০০ সালে তো মিয়ানমারের ৬ শতাধিক সৈন্য নিহত হয়েছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিডিয়ার জোয়ানদের সামনে মিয়ানমার বাহিনী দাঁড়াতেই পারেনি।
কিন্তু, ১৪ বছর পর নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমারের কাছে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। তারা অন্যায়ভাবে গুলি করে বাংলাদেশের একজন সৈনিককে হত্যা করে লাশ নিয়ে গেছে। চারজন সৈনিককে অপহরণ করেছে। সমঝোতা বৈঠকের কথা বলে বাংলাদেশের সৈনিকদেরকে কাছে নিয়ে তাদের উপর উপর্যুপরি গুলি বর্ষণ করেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেনি।
সেই মিয়ানমার বাহিনী আবারো বার বার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে। সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশের বাড়িঘর লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। কিন্তু, সরকার নির্বাক। মিয়ানমার বাহিনীর এই অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো প্রতিবাদ করছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষে যাবে না এটা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। বান্দরবান সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়ে বিজিবি প্রধান যে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন, সেটার জন্য সরকারের কাছে কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। যার কারণে মিয়ানমার বাহিনী বার বার আকাশসীমা লঙ্ঘন করলেও বিজিবি বা সেনাবাহিনী কোনো কিছু বলছে না।
জানা গেছে, যে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন, সেই কারণেই মিয়ানমার বাহিনীর অন্যায় আচরণেও কোনো শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে না বাংলাদেশ। আর সেটা হলো প্রধানমন্ত্রীর একটি নোবেল। সরকার নিরব থেকে আন্তর্জাতিক মহলকে বুঝানো চেষ্টা করছে যে, আমরা যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই। এই অঞ্চলে আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। সরকার দলীয় লোকজন ইনিয়ে বিনিয়ে নোবেলের বিষয়টি বিভিন্ন ফোরামে তোলারও চেষ্টা করছেন। এমনকি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম আজ প্রকাশ্যেই দাবি করেছেন যে, শেখ হাসিনাকে শান্তিতে নোবেল দেয়া উচিত। এনিয়ে সরকারের উচ্চ মহল থেকে জোর লবিং করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে, রাজনীতিক বিশ্লেষসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশের ক্ষতি করছেন, ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। দেশের সার্বভৌমত্বের চেয়ে নোবেলের মূল্য নিশ্চই বেশি নয়।
Discussion about this post