অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গাইবান্ধার সাবেক সংসদ সদস্য লিটন হত্যার দায় আবারও বিএনপি-জামায়াতের ওপর চাপিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও লিটন হত্যার মূলহোতা হিসেবে জাপা নেতা কর্নেল কাদের খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে জেলে আছেন।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনার পর কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই হত্যাকাণ্ডের দায়ভার বিএনপি-জামায়াতের ওপর চাপানোর চেষ্টা চালায় সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক সুন্দরগঞ্জ গিয়েই সাংবাদিকদের বলেছিলেন বিএনপি-জামায়াত এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গণভবনে এক সভায় বলে ফেললেন জামায়াত-শিবির এমপি লিটনকে হত্যা করেছে।
তাদের এই বক্তব্যের পর গাইবান্ধায় পুলিশ গণহারে বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের নিরপরাধ নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে। যদিও এমপি লিটনের ছোটবোন আফরোজা বারী একাধিকবার সাংবাদিকদের বলেছেন যে, জামায়াত-শিবির আমার ভাইকে হত্যা করেছে এটা আমরা নিশ্চিত না। এর সঙ্গে একাধিক কারণ থাকতে পারে। কিন্তু, লিটনের বোনের বক্তব্যকে পাত্তাই দেয়নি সরকার ও গাইবান্ধার পুলিশ প্রশাসন।
এরপর কিছুদিন পরই এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। সুন্দরগঞ্জের সাবেক এমপি ও জাপা নেতা কর্নেল কাদের খানের গাড়িচালক আবদুল হান্নান, তার ভাতিজা শাহীন মিয়া ও বাড়ির কেয়ারটেকার মেহেদীকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতারের পরই বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এমপি লিটনকে হত্যার জন্য কাদের খান এক বছর আগে পরিকল্পনা করেন। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া ৪ জনকে একটি গুদামে ৬ মাস ধরে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে বগুড়ার বাসা থেকে কাদের খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে লিটন হত্যার বিষয়ে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছেন কাদের খান।
ওই সময় রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কর্নেল কাদের খান শুধু এমপি লিটনকে হত্যা নয়, উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকেও হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিলেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, মূলত এমপি লিটন ও শামীম হায়দারকে সরিয়ে দিতে পারলে তিনি সুন্দরগঞ্জে আবারও এমপি নির্বাচিত হবেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার ইচ্ছা ও লোভ থেকেই এমপি লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।
তারপর, জাপা নেতা কাদের খানের গ্রেফতার ও তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর পর একেবারে চুপ হয়ে যায় সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও সরকারদলীয় নেতারা। লিটন হত্যার বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতকে নিয়ে আজ পর্যন্ত তাদের মুখ থেকে একটি শব্দও শুনা যায়নি।
কিন্তু, হঠাৎ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি লিটন হত্যার দায় আবার বিএনপি-জামায়াতের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। তিনি আজ শনিবার সকালে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করেছেন। বক্তৃতায় তিনি বলেন- ‘তারা (বিএনপি-জামায়াত) এভাবেই এমপি লিটনকেও হত্যা করেছে’।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী সমাবেশে আগতসহ পুরো গাইবান্ধায় এখন তার এ বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
লোকজন বলাবলি করছে, এমপি লিটন হত্যার মূল পরিকল্পকারী হিসেবে জাপা নেতা কাদের খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লিটন হত্যা তার পরিকল্পনাতে হয়েছে বলে কাদের খান স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন। এরপরও প্রধানমন্ত্রী কী করে বলতে পারেন বিএনপি-জামায়াত লিটনকে হত্যা করেছে। একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন জলজ্যান্ত মিথ্যাচার মানায় না।
Discussion about this post