অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত ১৫ আগস্ট সকালে পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে পুলিশের অভিযানে কথিত জঙ্গি সাইফুল ইসলাম আত্মঘাতী হয়। পুলিশের ভাষ্য, জঙ্গি সাইফুল নব্য জেএমবির সদস্য এবং তার টার্গেট ছিলো শোক দিবসের মিছিলে হামলা চালিয়ে শত শত মানুষ হত্যা করা।
পান্থপথের যেই হোটেলে এই আত্মঘাতি হামলার ঘটনা ঘটে সেই হোটেলটির মালিক ফিরোজুর রহমান ওলিও। তার নামানুসারেই হোটেলের নামকরণ করা হয়। জানা গেছে, ফিরোজুর রহমান ওলিও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা। জাতির জনক পরিষদের সভাপতি তিনি। পান্থপথে ওই হোটেলের সামনেই শুক্রাবাদের ৮/সি নম্বর এফআর টাওয়ারেরও মালিক তিনি। সেখানে ওলিও ড্রিম হ্যাভেন নামে তাঁর আরেকটি হোটেল আছে। আছে একটি বার হাউজও।
পান্থপথের ঘটনা নিয়ে জনমনে নানা সন্দেহ ও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে শুরু থেকেই। বিশেষ করে আত্মঘাতি হয়ে নিহত সাইফুলকে আইজিপির শিবির দাবি করা, হামলার পর পরই সাইফুলের পুরো পরিচয়, গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পিতার নাম, পিতার রাজনৈতিক পরিচয় ইত্যাদি বলে দেয়া এবং পুলিশের বক্তব্য ও পরিবারের বক্তব্যের অমিলের কারনে এই ঘটনা নিয়ে জনমনে অনেক সন্দেহের তৈরি করেছে। এসবের সাথে হোটেল মালিকের রাজনৈতিক পরিচয় সন্দেহকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
অতীতে পুলিশের অধিকাংশ জঙ্গি অভিযানই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিলো। এজন্য পুলিশের যেকোনো অভিযান বা বক্তব্যের প্রতি আস্থা হারিয়েছে সবাই। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে অভিযানে নিহত কথিত জঙ্গিকে একমাস বা দু’মাস আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছিলো।
পান্থপথে নিহত সাইফুলের বেলায় পুলিশ বলেছে- `চলতি মাসের ৭ আগস্ট খুলনা থেকে ঢাকায় আসে সাইফুল। এরপর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থানের পর শোক দিবস উপলক্ষে ৩২ নম্বরে হামলার জন্য বলা হয় সাইফুলকে’। কিন্তু সাইফুলের বোন ইরানি খাতুন জানায়, ‘চাকরি না করার কারণে শুক্রবার(১১ আগস্ট) তাঁর বাবা আবুল খায়ের সাইফুলকে বকা দেন। এরপর শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে ঢাকায় যাওয়ার কথা বলেন তিনি। বিকেলে বাড়ি ছাড়েন। রোববার ফোন করে সাইফুল জানান যে সোমবার বিকেলে গ্রামে ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি ফিরে আসেননি।’
জানা গেছে, ফিরোজুর রহামানের মালিকানাধিন অন্য হোটেলটিতে ব্যপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকলেও এই হোটেলটিতে কোনো প্রকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা রাখা ছিলো না। যে কারনে হোটেলে সাইফুলের আসা যাওয়া কিংবা সাইফুলের সাথে আর কেউ এসেছিলো কিনা তাও দেখার সুযোগ হয়নি। ১৫ আগস্টের শোক দিবসের নিরাপত্তার জন্য তিন দিন আগে থেকেই পুলিশ সেখানকার সব হোটেলে বোর্ডার না নেওয়ার জন্য বলা সত্বেও সাইফুল কিভাবে সেই হোটেলে উঠেছে সেটা নিয়েও রহস্য তৈরি হয়েছে।
অনেকেরই ধারনা পান্থপথের জঙ্গি অভিযান পুলিশের সাজানো ঘটনা ছিলো। এবং নিহত সাইফুলও জঙ্গি ছিলো কিনা সেটা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। কারন তার এলাকার লোকজন এমনকি আওয়ামী লীগের লোকজনও তার জঙ্গি পরিচয়ে অবাক হয়েছে। তারা কেউই বিশ্বাস করতে পারছে না সাইফুল জঙ্গি হতে পারে। তাছাড়া সে বাড়ি থেকে ঢাকায় এসেছিলো মূলত বাবার বকুনি খেয়ে চাকরি খোঁজার জন্য। এজন্য অনেকের সন্দেহ সাজানো অভিযানের সুবিধার্থেই পুলিশ সিসি ক্যামেরা বিহীন এই হোটেলটি বেছে নিয়েছে এবং তাদেরকে সহযোগীতা করেছে হোটেলের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজুর রহমান।
Discussion about this post