ড. দিলারা চৌধুরী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর। বাংলাদেশ অ্যান্ড দি সাউথ এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল সিস্টেম এবং কনস্টিটিউশন্যাল ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ : স্ট্রেসেস অ্যান্ড স্ট্রেইনস এ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের লেখক। একজন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক হিসেবে ড. দিলারা চৌধুরী দেশ ও বিদেশের কয়েকটি প্রফেশনাল জার্নালে নিয়মিত লিখে থাকেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৮৯-৯০ সালে একবার এবং ১৯৯০-৯১ সালে আবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং স্কলার ছিলেন। সে দেশের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডে তিনি সিনিয়র ফুলব্রাইট স্কলার ছিলেন ১৯৯৬-৯৭ সালে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রায়ন প্রক্রিয়ার সাথে তিনি জড়িত। ড. দিলারা চৌধুরী কাজ করেছেন ইউএসএইড, সিডা ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের সাথে। তিনি ১৯৯২ সালে ইউএসএইডের ডেমোক্র্যাসি অ্যাসেসমেন্ট টিমের সদস্য ছিলেন এবং এর রিপোর্টের প্রণেতাদের তিনি অন্যতম। ২০০২ সালে তিনি কমনওয়েলথ পর্যবেক্ষণ গ্রুপের সদস্য হিসেবে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। বিভিন্ন কাজে ব্যাপকভাবে সফর করেছেন এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলো। দিলারা চৌধুরী সম্মানজনক জাতীয় পুরস্কার, রোকেয়া পদক ২০০৪ এবং ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড ২০০৫ অর্জন করেছেন। প্রফেসর দিলারা চৌধুরী কয়েক বছর ধরে ঢাকার নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। নয়াদিগন্তের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলফাজ আনাম
নয়া দিগন্ত : নির্বাচন কমিশন যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে এর অংশ হিসেবে নাগরিক সমাজের সাথে সংলাপে বসেছে । আপনিও এই সংলাপে ছিলেন। রোডম্যাপের মধ্য দিয়ে কি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে বলে মনে করেন?
দিলারা চৌধুরী : রোডম্যাপ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে খুব একটা সাহায্য করবে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু এ উদ্যোগটি ভালো। বলা যায়, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হলো। নির্বাচন কমিশন এখন বিভিন্ন মহলের সাথে কথা বলবে। তাদের মতামত নেবে। এর মাধ্যমে জনমতের অবস্থা কী, তা বুঝতে পারবে। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধন করে আইনে পরিণত করার চেষ্টা করবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে- ধরুন সবই করা হলো, এরপর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলল, আমরা এগুলো মানি না। সুতরাং সংলাপে বসে এমন অনুভূতি আসে, যে সুপারিশগুলো করা হচ্ছে তা বাস্তবায়নের কতটুকু সম্ভাবনা আছে? আমরা যদি বাংলাদেশের রাজনীতি দেখি, শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তাই হয়। ফলে সব চেষ্টা ব্যর্থ মনে হয়।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচন কমিশন তো এগিয়ে যাচ্ছে?
দিলারা চৌধুরী : এই নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ। যে প্রক্রিয়ায় এই নিয়োগগুলো হয়েছে সেটি কি প্রশ্নবিদ্ধ নয়? সেখানে সংলাপে বসে এই প্রশ্ন তো মনের মধ্যে জাগতে থাকে। এই নির্বাচন কমিশনার কত দূর যাবে; কতখানি সাহস দেখাবে। নির্বাচন কমিশনের সাহসিকতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। এর আগের রকীব কমিশন কোনো সাহস দেখাতে পারেনি। শেষের দিকে তারা নির্বাচন নিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন।
নয়া দিগন্ত : বিরোধী দলগুলো তো নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে জোরালো আপত্তি তোলেনি?
দিলারা চৌধুরী : নির্বাচন কমিশন যেভাবে গঠিত হয়েছে বিএনপি তা মেনে নিয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিন্তু একাধিক বিবৃতিতে এ কথাও বলেছেন, আমরা বাধ্য হয়ে নির্বাচন কমিশনকে মেনে নিয়েছি। তারা এও বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ। বিএনপি নির্বাচনে যাবে। যদি এই নির্বাচন কমিশনকে মেনে না নেয় তাহলে তো নির্বাচনে যেতে পারবে না। কাজেই তারা বাধ্য হয়ে অনেক কিছু মেনে নিচ্ছেন। যদিও অনেক কিছুই প্রশ্নবিদ্ধ। একটা পর্যায়ে এসে যদি তারা দেখেন কোনো উপায় নেই তখন তাদের সিদ্ধান্ত কী হবে জানি না। তবে তারা প্রবল চেষ্টা করছেন, যাতে নির্বাচনে যেতে পারেন।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচন কমিশন আইনগতভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কমিশন তো বলতে পারে তারা আইন অনুযায়ী চলবেন।
দিলারা চৌধুরী : না, আইন দিয়ে কোনো কাজ হবে না। আইন তো অনেক আছে, প্রয়োগ হয় না। সুতরাং আইন করে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করা যাবে বলে মনে হয় না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। নাগরিক সমাজের সাথে সংলাপের সময় ড. সাদাত হুসাইন গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন, উনি বলেছেন সরকারের ১০০টা হাত। আমি বলব সরকারের এক হাজার হাত। সরকার যেকোনো জায়গায় হাত দিতে পারে। যদি সরকারের সদিচ্ছার অভাব থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনকে সরকারের কথা শুনে কাজ করতে হবে। যতক্ষণ না নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী ভূমিকায় দাঁড়িয়ে বলে, এটা আমি করবই। এটা আমার করার কথা, আমি করবই, ভয়-ডর তুচ্ছ করে। না হলে রাজনৈতিক যে সরকার থাকবে, তাদের কথায় চলতে হবে।
নয়া দিগন্ত : তাহলে তো আবার নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রশ্নটি সামনে চলে আসছে?
দিলারা চৌধুরী : হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে বলছি, নির্বাচন কমিশন যদি দুঃসাহসী ভূমিকা না নেয়, তাহলে তাদের সরকারের কথা শুনে চলতে হবে। তাতে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। শ্রীলঙ্কায় সংসদে যত দল আছে তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, প্রেসিডেন্টের দু’জন প্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজ থেকে প্রতিনিধি নিয়ে সবাই মিলে নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেয়। এমনকি পাকিস্তানেও নির্বাচন কমিশন গঠনে বিরোধী দলের সাথে আলোচনা করা হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমাদের সংসদও একদলীয়। বর্তমান যে বিরোধী দল সংসদে আছে সেটি তো সরকারের অংশ। আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংস করে ফেলেছি।
নয়া দিগন্ত : আরেকটা বিতর্ক শুরু হয়েছে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে, ক্ষমতাসীন দল বলছে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। অপর দিকে বিরোধী দলগুলো সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে মত দিচ্ছে।
দিলারা চৌধুরী : প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এ পর্যন্ত যারা মতামত দিয়েছেন তাদের ৯০ শতাংশই বলছেন সেনা মোতায়েন করা উচিত। যারা এর পক্ষে মত দেননি, তারা বলছেন সেনাবাহিনীর রাজনীতিকায়ন হবে, এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। যেখানে গণতন্ত্র সুসংহত সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয় না। আমাদের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে মত দেয়া উচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আগামী নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা হবে। ২০১৪ সালেও অনেক সহিংসতা হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তারাও আক্রান্ত হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৫০ জন লোক মারা গেছে। আগামী নির্বাচনে সহিংসতা আরো ব্যাপক হওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে, সহিংসতা শুধু দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে হবে না; দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে সহিংসতা হবে। নির্বাচন কমিশন পেশিশক্তি ও টাকার ব্যবহার কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। টাকার খেলা কতটা বন্ধ করা যাবে। আমি এমন কোনো মেকানিজম দেখি না, যার মাধ্যমে সন্ত্রাস ও টাকার খেলা তারা মোকাবেলা করতে পারবেন। আইন হয়তো থাকবে, কিন্তু তার কোনো প্রয়োগ হবে না। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা ভীষণভাবে জরুরি। যাতে ভয়ভীতি ছাড়া নাগরিকেরা তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। কারণ, সন্ত্রাসের আবহ তৈরি হলে অনেক ভোটারই বাড়ি থেকে বের হবেন না। বিশেষ করে নারী ভোটারেরা।
আরেকটা বিষয় আমরা তুলনামূলকভাবে দেখতে পারি : যখন সেনা মোতায়েন হয়েছে তখন নির্বাচন কেমন হয়েছে, আর সেনা মোতায়েন ছাড়া নির্বাচন কেমন হয়েছে। যেসব নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হয়েছে সেসব নির্বাচন সহিংসতা ছাড়া হয়েছে বা সহিংসতা কম হয়েছে।
নয়া দিগন্ত : প্রশাসনের ওপর নির্বাচন কমিশন কতটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে বলে মনে করেন?
দিলারা চৌধুরী : নাগরিক সমাজের সাথে সংলাপে এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা পরামর্শ দিয়েছি কয়েকটি মন্ত্রণালয় যেমন- স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এসব মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত থাকবে। জনপ্রশাসনকে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে রাখার এটি একটি উপায়।
নয়া দিগন্ত : ‘না’ ভোট নিয়েও তো আলোচনা হয়েছে।
দিলারা চৌধুরী : ‘না’ ভোটের ব্যাপারে সংলাপে সবাই থাকা উচিত বলে মত দিয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউ এটা চায় না। আমি মনে করি, ‘না’ ভোটের বিধান থাকা উচিত। এটাও নাগরিকের অধিকার। জনগণ যাতে বলতে পারে আমি দু’জনের কাউকে পছন্দ করি না। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ‘না’ ভোট চায় না এ কারণে যে, তারা এমন সব প্রার্থী দেয় যাদের অনেককে মানুষ পছন্দ করে না। ‘না’ ভোটের সংখ্যা যদি এই প্রার্থীদের পাওয়া ভোটের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে তো আবার নির্বাচন করতে হবে। এ কারণে দুই দল এ ব্যাপারে একমত।
নয়া দিগন্ত : বিএনপি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কথা বলছে। সহায়ক সরকার সম্পর্কে আপনার মত কী?
দিলারা চৌধুরী : সহায়ক সরকার নিয়ে বিএনপি এখনো কোনো রূপরেখা দেয়নি। অপেক্ষা করতে হবে, তারা কী রূপরেখা দেয়। সহায়ক সরকার গঠন করতে হলে তারা কী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো সরকার চাচ্ছে নাকি শেখ হাসিনা যে গত বছর প্রস্তাব দিয়েছিলেন সর্বদলীয় সরকার, সে-জাতীয় সরকারের কথা বলছে। বিএনপির রূপরেখা না দেখে বলা যাবে না।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচনের সময় সংসদও বহাল থাকবে, এর প্রভাব নির্বাচনে কতটা পড়বে?
দিলারা চৌধুরী : এটা অবাক বিষয়। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময় সংসদ বিলুপ্ত হবে না। সংসদ রেখে নির্বাচন হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে পারি, এ অবস্থায় কোনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় তার সাথে আরেকজন সাধারণ প্রার্থী কিভাবে নির্বাচন করবেন? বিশ্বের কোনো সংসদীয় সরকারে এভাবে নির্বাচন হয় না।
নয়া দিগন্ত : অনেক দেশে নির্বাচিত সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে।
দিলারা চৌধুরী : দেখুন, যারা ক্ষমতায় আছেন তারা এ ব্যাপারে একটি ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছেন। তারা বলে থাকেন, ভারতে বা অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাচিত সরকার নির্বাচন করে। হ্যাঁ, নির্বাচিত সরকার অন্তর্বর্তী সরকার হয়। অবশ্যই আছে। ব্রিটেনে নির্বাচনকালীন সরকারকে অন্তর্বর্তী বা কেয়ারটেকার সরকার বলে। এসব দেশে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়ে বলবেন, পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে দেয়া হোক এবং নির্বাচন দিতে হবে। প্রেসিডেন্ট বলবেন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত রুটিন কাজ চালিয়ে যেতে, কিন্তু কেউ আর এমপি থাকবেন না। সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত ছোট মন্ত্রিপরিষদ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবেন। ভারতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে এমনকি রাজ্যসভার সদস্য থাকতে পারেন না। অন্তর্বর্তী সরকার মানে সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার পরের সরকার। আর কেউ এমপি থাকবেন না। সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই সরকার কী করতে পারবে না পারবে তা ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা কানাডায় স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকে। বাংলাদেশে অদ্ভুত ব্যবস্থা আনা হয়েছে।
নয়া দিগন্ত : সংসদ বিলোপের বিধান ফিরিয়ে আনতে হলে আবার সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কী করণীয় আছে?
দিলারা চৌধুরী : রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যখন নির্বাচন কমিশন অলোচনা করবে, তখন এ বিষয়টি উঠাবে। এই সাহস নির্বাচন কমিশন দেখাতে পারবে কি না জানি না। নির্বাচন কমিশনের যদি মেরুদণ্ড না থাকে, তাহলে কিভাবে নির্বাচন করবে? আমি তো মনে করি, জোরালোভাবে উঠানো উচিত। সমপ্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করতে হলে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করা যায় না।
নয়া দিগন্ত : প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন, তফসিল ঘোষণার আগে কমিশনের তেমন কিছু করার নেই।
দিলারা চৌধুরী : আমি তার সাথে পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করছি। নির্বাচনপ্রক্রিয়া তো শুধু তফসিল ঘোষণা বা নির্বাচনের দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। নির্বাচনের আগে এবং পরে কমিশনকে সোচ্চার থাকতে হয়, যাতে সমপ্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পায়। এখন ক্ষমতাসীন দল প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে। শান্তিপূর্ণ সদস্য সংগ্রহ অভিযানে বাধা দেয়া হচ্ছে। অপর দিকে যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা দুই বছর আগে থেকে ভোট চাইছেন। এসব ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব আছে। তাদের এসব নিয়ে কথা বলা বা বিবৃতি দেয়া উচিত। নির্বাচন কমিশনের কাজ তো তফসিলবন্দী নয়। এর বাইরে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য অনেক কাজ আছে। তবে এ জন্য সাহসের প্রয়োজন।
এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে তারা কোনো কথা বলেননি। ফলে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। যদি আমরা দেখি, সরকারের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য কোনো কথা বলছেন না, তাহলে ধরে নিতে পারেন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। আসলে কী ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা আগে ঠিক করতে হবে। তখন নির্বাচন কমিশন বুঝতে পারবে, কী কাজ তাদের করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত মাথার ওপর খাঁড়া ঝুলবে ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারের কথা তারা শুনবে। তখন সাহস দেখাবে যখন তারা বুঝবে সরকারের প্রভাব নেই বা ক্ষমতা কমে গেছে।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post