অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষা এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সংকোচিত। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ইসলামী শিক্ষাকে বিতাড়ণের পর সরকারের নজর এখন কোনো রকমে টিকে থাকা মাদরাসাগুলোর ওপর। বর্তমান সরকার মাদরাসার সিলেবাসেও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। জঙ্গিবাদের অজুহাত দেখিয়ে সিলেবাস থেকে কুরআন-হাদীসের অনেক মৌলিক বিষয় বাদ দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে মাদরাসাগুলোতে কুরআন-হাদীসের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষারও ব্যাপক সমন্বয় ঘটেছে। স্কুলের সবগুলো বিষয়ই মাদরাসার সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার যোগ হয়েছে ক্যাডেট সিস্টেমের মাদরাসা। ক্যাডেট মাদরাসার শিক্ষার মান যেকোনো স্কুল-কলেজের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত কয়েক বছরের প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে মাদরাসার শিক্ষার্থীরাই মেধা তালিকার প্রথম দিকে স্থান করে নিয়েছে। এসব কারণে মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে।
শত বাধা আর প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মাদরাসাগুলো যখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ঠিক তখনই আরেক নতুন আইন জারি করেছে সরকার। রোববার এক আদেশে মাদরাসার নামকরণ থেকে ‘ক্যাডেট’ ও ‘ইন্টারন্যাশনাল’ শব্দ দুটি বাদ দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটিতে একজন করে জেলা বা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতিনিধি রাখতে হবে।
সরকারের এ সিদ্ধান্তকে মাদরাসার বিরুদ্ধে আবার নতুন ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। তাদের মতে, ক্যাডেট স্কুলগুলোর মতো ক্যাডেট মাদরাসাগুলোও ভালো করছে। মাদরাসাগুলোর নামের আগে ও পরে ক্যাডেট ও ইন্টারন্যাশনাল থাকার কারণে মাদরাসা শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহও বেড়েছে। দেশের ক্যাডেট মাদরাসাগুলো দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠার কারণেই এক শ্রেণির বামপন্থী ও ধর্মবিদ্বেষীরা সহ্য করতে পারছে না। ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করতেই তারা এখন নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে বলে মনে করছেন অনেকে।
মূলত কয়েক বছর ধরে দেশে কথিত জঙ্গি আস্তানার সন্ধান ও জঙ্গি হামলা বেড়ে যাওয়াতে মাদ্রাসাগুলোর উপর নজরদারি বৃদ্ধি করে সরকার। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এমপিরা তাদের বক্তৃতা বিবৃতিতে মাদ্রাসা বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসাগুলোকে জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র নামে অভিহিত করে। কিন্তু পরবর্তীতে যখন নর্থসাউথ ও স্কলাষ্টিকার মত ইংরেজী মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের জঙ্গি হামলায় যুক্ত থাকা ও তাদের জঙ্গি পরিচয় প্রকাশ পেতে শুরু করে তখনই সেই মন্ত্রী এমপিদের মুখে কুলুপ পড়ে।
এসব ঘটনার পর সরকারের কিছু মন্ত্রী এমপি মাদ্রাসায় জঙ্গি তৈরি হয়না বলে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেফাজতসহ কওমী নেতৃবৃন্দকে গনভবনে ডেকে নিয়ে তাদের সাথে মত বিনিময় করেন এবং কওমী সনদের স্বীকৃতিও দেন। এসব কার্যক্রমে সরকারের মাদ্রাসা বিরোধী অবস্থান অনেকটা পরিবর্তন হতে দেখা যায়।
কিন্তু এখন আবার মাদ্রাসার নামের আগে ক্যাডেট ও ইন্টারন্যাশনাল শব্দ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে বিশ্লেষকরা মনে করছেন কওমী সনদ ও মাদ্রাসার পক্ষের বক্তব্য ছিলো সরকারের রাজনৈতিক খেলারই একটি অংশ। সরকার বার বার মাদ্রাসাগুলোকে আধুনিকায়নের কথা বললেও ক্যাডেট ও ইন্টারন্যাশনাল নামের আধুনিক মাদ্রাসাগুলোর উপরই এখন খড়গ চাপাচ্ছে। এটা সরকারের দ্বিচারিতারই বহি:প্রকাশ।
Discussion about this post