অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রী নির্বাহী কমিটির সভায়। ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান সভাপতি-সেক্রেটারির বিরুদ্ধে ওই বৈঠকে অর্থআত্মসাতসহ অনেক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। সভাপতি-সেক্রেটারির ফ্ল্যাট ও গাড়ির কেনার টাকার উৎস কী সভায় তাও জানতে চেয়েছেন। গণমাধ্যমে এসব সংবাদ প্রকাশের পরই রাজনৈতিক, মিডিয়াপাড়া ও শিক্ষাঙ্গনসহ সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন ছাত্রলীগকে টাকা দেয় মর্মে যে তথ্যটি প্রকাশিত হয়েছে এটাতেই সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে নাড়া দিয়েছে। এ যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার মতো।
কারণ, মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তমা কনস্ট্রাকশান। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের শুরুতে শেষ করার কথা থাকলেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে একাধিকবার সময় বাড়িয়েছে। এর সঙ্গে অতিরিক্ত ব্যয় বাড়িয়েছে আরও কয়েক হাজার কোটি টাকা। দুর্নীতি-লুটপাট করতেই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশান বার বার সময় ও নির্মাণ খরচ বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সভায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন জানতে চান-ছাত্রলীগকে কারা টাকা দেন। এর জবাবে সায়েম খান বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন রাসেল টাওয়ারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও তমা কনস্ট্রাকশন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তমা কনস্ট্রাকশনের মালিক হলেন আতাউর রহমান মানিক। তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। অভিজ্ঞতা ছাড়াই দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কাজ বাগিয়েছিল তমা। কাজ পাওয়ার জন্য তমার লবিংয়ের কাছে খোদ এলজিইডিও ছিল অসহায়। ফ্লাইওভার প্রকল্পটি অনুমোদন থেকে শুরু করে বাস্তবায়নের বিভিন্ন ধাপে ধাপে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছে তমা কনস্ট্রাকশন।
অভিযোগ রয়েছে, নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশেই ঘটেছে দরপত্র কেলেংকারি। এই প্রকল্পের মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ অংশের প্রথম দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১১ সালের ২২ মার্চ। যোগসাজশের মাধ্যমে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আহূত দরপত্র বাতিলের দাবি জানায় দাতাসংস্থা। তা না হলে প্রতিশ্রুত অর্থ না দেয়ার হুমকি দেয় সংস্থাটি। পরবর্তীকালে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ একই কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু ওই সময় বড় অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে সুকৌশলে পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘তমা কন্সট্রাকশন’কে কাজ পাইয়ে দেয়া হয়। যদিও তাদের আবেদনের যোগ্যতা নিয়ে তখনই প্রশ্ন ছিল। কারণ, তমা কন্সট্রাকশনের ইতিপূর্বে এ ধরনের বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা ছিল না। তমা কন্সট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান মানিক একজন প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে যোগ্যতা না থাকার পরেও কাজ বাগিয়ে নেন।
এরপর ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু করার পর থেকেই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন শুরু করে লুটপাট। প্রতিষ্ঠানটি ইচ্ছে করেই নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের শেষ করেনি। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সময় বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে নির্মাণ ব্যয়ও।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও বসে থাকতো তাদের সময় ও ব্যয় বাড়ানোর আবেদনের জন্য। তমার নির্মাণ ব্যয় নিয়ে কখনো প্রশ্ন তুলেনি স্থানীয় সরকার বিভাগ। শুধু লুটপাট করতেই ফ্লাইওভার প্রকল্পের নির্মাণ সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
আর গতকাল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় তমা কনস্ট্রাকশনের নাম আসায় স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবার থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। ফ্লাইওভার থেকে লুটে নেয়া টাকার অংশ তমা কনস্ট্রাকশন ছাত্রলীগকে দিচ্ছে বলেও তাদের ধারণা।
কেউ কেউ মনে করছেন, ছাত্রলীগের কারসাজিতেই তমা কনস্ট্রাকশন বার বার ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় ও ব্যয় বাড়িয়েছে।
Discussion about this post