অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
উদ্ধারের পর অবশেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরে এসেছেন বিশিষ্ট কবি, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার। মঙ্গলবার বিকেল ৬ টায় তিনি নিজ জিম্মায় আদালত থেকে মুক্ত হয়ে একটি হাসাপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তবে, সোমবার ভোরে অপহরণ হওয়ার পর থেকে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের হাত থেকে মুক্ত হওয়া পর্যন্ত সময়ের ধারাবাহিক ঘটনাগুলো অনেক রহস্যের জন্ম দিয়েছে। ফরহাদ মজহারকে অপহরণ, মোবাইলে কথা বলা, থানায় জিডি, খুলনায় র্যাবের অভিযান, যশোরে বাস থেকে উদ্ধার, গফুর নাম দিয়ে টিকিট কাটা, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজির বক্তব্য ও কথিত ব্যাগ আবিষ্কার নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনা নিয়ে রাজনীতি বিশ্লেষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ করছেন। বিশেষ করে একটি প্রশ্নের জবাব কেউ মিলাতে পারছেন না।
ফরহাদ মজহার ও তার পরিবারের ভাষ্যমতে সোমবার ভোরে ওষুধ কিনতে বাইরে এলে কয়েকজন লোক তাকে চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তিনি তার ব্যবহৃত মোবাইল দিয়ে ফোন করে বাসায় জানিয়েছেন যে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। পরে পরিবারের সদস্যরা আদাবর থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। থানায় অভিযোগের পর পুলিশের কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ফরহাদ মজহারের বাসায় যান। পুলিশ কর্মকর্তারা তার বাসায় থাকা অবস্থায়ও তিনি একবার তার নাম্বার থেকে বাসায় ফোন করেছেন।
এখন লক্ষণীয় বিষয় হলো, ফরহাদ মজহারের অপহরণের বিষয়টি সকালেই পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশের সামনে একবার ফোনও করেছেন। কিন্তু, পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিং করে তার অবস্থান সনাক্ত করেছে সন্ধ্যার পর। জনমনে এখন এনিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে যে, পুলিশ সারাদিন কী করেছে? মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমেতো সকালেই তার অবস্থান সনাক্ত করা যেতো।
তারপর খুলনা শহর ঢাকার একেবারে কাছে নয়। পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ঢাকা থেকে খুলনা যেতে হয়। মাওয়া ঘাট কিংবা আরিচা যে পথেই যাক না কেন ফেরিঘাটে অনেক সময় বসে থাকতে হয়। কমপক্ষে দুপুর ২ টার আগে খুলনা পৌঁছানোর কোনো সুযোগ নেই। এরমধ্যে একাধিকবার ফরহাদ মজহার তার নাম্বার থেকে বাসায় ফোন করেছেন। হয়তো ওই সময় মোবাইল ট্র্যাকিং করলে রাস্তায়ই অপহরণকারীদের অবস্থান সনাক্ত করা যেতো। আর মাগুরা যাওয়ার পরও ফরহাদ মজহার একবার ফোন করেছেন। ঝিনাইদহ কিংবা যশোর মহাসড়কে গাড়ি চেক করলেই অপহরণকারীরা ধরা পড়ে যেতো। এখন জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরব ছিল কেন?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিকেলে ফরহাদ মজহারের অপহরণের বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানোর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা শুরু করে। সন্ধ্যার পর র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয় ফরহাদ মজহার খুলনায় আছেন। কিছুক্ষণ পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জানালেন অল্পসময়ের মধ্যেই ফরহাদ মজহারের অবস্থান সনাক্ত হবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এসব তৎপরতা সন্ধ্যার পর কেন?
এনিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকে মনে করছেন পুরো ঘটনাই ছিল পরিকল্পিত। অন্যথায়, সারাদিন নিরব থেকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সন্ধ্যার পর মোবাইল ট্র্যাকিং করবে কেন?
Discussion about this post