লিয়াকত হোসেন
বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ষ্টকহোমে দুদিনের রাষ্ট্রীয় ঝটিকা সফরের শেষ পর্যায়ে ১৫ই জুন বৃহস্পতিবার রাতে ষ্টকহোম সিটি কনফারেন্স সেন্টারে প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির দেয়া এক সর্ম্বধনায় বক্তব্য রাখেন। বিস্তারিত রির্পোট এসেছে ষোল তারিখের প্রথম আলোয়। বত্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নতুন কিছু বলেননি, সেই গতানুগতিক ডঃ ইউনুস, গ্রামীণ ব্যাংক, হিলারী ক্লিনটন, পদ্মা সেতু, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি যা সচরাচর বাংলাদেশ সংসদেও উৎগীরন করা হয়।
রাষ্ট্রীয় সফরের বিস্তারিত খবরা খবর আমরা পেয়েছি বাংলাদেশীয় পত্র-পত্রিকা বা টিভি মিডিয়ায়। সুইডেনের কোন পত্র-পত্রিকা এই সফর কভার করেনি। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে সুইডিশ মিডিয়া বয়কট করেছে বা বাংলাদেশ সুইডিশ মিডিয়াকে বয়কট করেছে, যেটাই হয়ে থাকুক কোনটিই ইতিবাচক নয়। সরকারীভাবে বলা হয়েছে ষ্টকহোম সিটি সেন্টারে প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির দেয়া সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু বেসরকারীভাবে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা ও টিভি মিডিয়া বলেছে প্রবাসের আওয়ামী লীগ সংগঠনের দেয়া সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী ভাষন প্রদান করেন। এখানে লক্ষনীয় বিষয় সরকারী বক্তব্য ও বেসরকারী বক্তব্য। সরকার বলছেন প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি আর বেসরকারীভাবে বলা হচ্ছে প্রবাসের আওয়ামী লীগ সংগঠন।
বাংলাদেশের সংবিধান মুতাবেক বাংলাদেশের ভূখন্ডের বাইরে প্রবাসে কোন বাংলাদেশীয় রাজনৈতিক সংগঠনের অঙ্গ সংগঠন থাকতে পারে না। যদি থাকে সেটা বেআইনি, সংবিধান বহির্ভুত ও সংবিধানের প্রতি অবমাননা। সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান খান দৈনিক প্রথম আলোর ৬ই মের সংখ্যায় বাংলাদেশ সংবিধানের ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০(গ) ধারাটি বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেছেন। সংবিধানের ৯০(গ) ধারাটি ষ্পষ্ট করে উল্লেখ করছে, কোন রাজনৈতিক দল নিবন্ধের জন্য যোগ্য বলে বিবেচ্য হবেনা, যদি তাদের গঠনতন্ত্রে বাংলাদেশের ভূখন্ডের বাইরে তাদের কোন কমিটি, শাখা বা কোন দপ্তর প্রতিষ্ঠা করার বিধান থাকে। আইন বলছে বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল গুলোর কোন অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশের ভূখন্ডের বাইরে থাকতেই পারবেনা। বাংলাদেশ সংবিধানের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০(গ) ধারা মতে প্রবাসে বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের প্রবাসী সংগঠন অবৈধ।
সংবিধান মতে প্রবাসে রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন সবই অবৈধ্য সংগঠন কারণ এই সংগঠন গুলোর শেকড় বাংলাদেশে। প্রতিটি মূল সংগঠনের অঙ্গ সংগঠন। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনকে অরাজনৈতিক বলা হলেও কর্মকান্ড রাজনীতির বাইরে নয়।
বাঙ্গালিরা রাজনৈতিক সচেতন জাতি। রাজনীাতি ও ক্রিকেটের বাইরে আমাদের আলোচনা অচল। প্রবাসে বন্ধু মহলে বা কোন অনুষ্ঠানে রাজনীতিই মূখ্য আলোচনার বিষয়। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্থান আছে পতন আছে, মুখরোচক কর্মকান্ড আছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলে রসবোধক উপাদান যতটুকু ততটুকু বিদেশী কোন রাজনৈতিক দলে নেই। এক এগারোর আনা অনেক আদেশই ২০০৮ সালের নির্বাচিত সরকার গ্রহণ করেনি তবে ৯০(গ) ধারাটি আওয়ামী লীগ সরকার রক্ষা করেছেন।
কাজেই সরকারের কাছে জোরালো আবেদন প্রবাসে যারা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে সচেতন, তাদের রাজনীতি করার বৈধ অধিকার দেয়া হোক। সংবিধান থেকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০(গ) ধারাটি বাতিল করা হোক।
প্রবাসে ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার বা অনান্য দেশের রাজনৈতিক দলের শাখা বা অঙ্গ সংগঠন না থাকলেও বাংলাদেশের বেলায় আমরা ব্যাতিক্রম সৃষ্টি করেছি। আমরা রাজনৈতিকভাবে এক সচেতন জাতি হিসেবে নিজেদের প্রমান করেছি। দূর্নিতির বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলেও আমরা দলীয় প্রধান বা দলের গায়ে আঁচড় লাগার বিরুদ্ধে নিদারুনভাবে সোচ্চার। আপনারা প্রবাসে পদার্পন করলে আমরাই বিমানবন্দর হতে হোটেল অবধি কাতার বেধে এগিয়ে যাই, হাত নেড়ে স্বাগত জানাই। পত্র-পত্রিকায় লিখেছে ২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৫৭ বিলিয়ন ডলার মাইগ্রেট হয়ে চলে গেছে। কি লিখে পত্রিকা এসব? টাকা আবার মাইগ্রেট করে কি ভাবে? টাকার কি হাত পা আছে? এই সব নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করবোনা। ঢাকা মাগুরা হাইওয়ে ৫৩ কিলোমিটার রাস্তার প্রতি কিলোমিটারে আমাদের খরচ ১১৮ কোটি টাকা, তাতে কি হয়েছে? আমাদের টাকা আমরা খরচ করবো তাতে পত্র-পত্রিকার কি? এই নিয়ে আমরা ইসু তৈরী করবোনা। বিশ্বব্যাংক বলছে রোড কনস্ট্রাকশান খরচে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম। বিশ্বব্যাংক এই সব বলার কে? তাদের বলার অধিকার দিয়েছে কে? বিশ্বেতো আমরা প্রথম হতেই চাই। হয়েছিও। আমাদের রিজার্ভ ফান্ড লুট হয়েছে, পূবালী-বেসিক ব্যাংক লুট হয়েছে, তাতে কি হয়েছে? গরীবরাইতো বড় লোকে বাড়ি হানা দেয়, এই নিয়ে বলার কিছু নাই শুধু বলবো আমরা আমাদের বৈধতা চাই। সংবিধানের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০(গ) ধারাটি বাতিল করে প্রবাসে আমাদের দেশীয় রাজনীতি করার বৈধ্য অধিকার চাই।
তথ্য সূত্রঃ
১. দৈনিক প্রথম আলো, ৬ই মে, ২০১৭
২. Dhaka Tribune , 30-7-2016
৩. Daily Sun, June 2017
৪. ছবিঃ ইন্টারনেটের সৈজন্যে
ষ্টকহোম, সুইডেন
২৭-৬-২০১৭
Discussion about this post