জুনায়েদ আব্বাসী
২০১১ সালে উচ্চ আদালত নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে ঘোষণা দেয়ার পরই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দ্রুতগতিতে সংসদে সংবিধান সংশোধন করে জনপ্রিয় এ ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে দেয়।
কেয়ারটেকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত জোট কিছু দিন আন্দোলনও করে। কিন্তু, ক্ষমতাসীনরা বিরোধীদলের দাবিকে কোনো পাত্তাই দেয়নি। তারা দলীয় সরকার তথা শেখ হাসিনার অধীনেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে।
তাদের ওই নির্বাচনে অনেক নাটকীয়তার পর এরশাদের জাতীয় পার্টি অংশ নিলেও বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে। ফলে ১৫৩ জন এমপি নির্বাচিত হন বিনাভোটেই। দেশ-বিদেশের কারো কাছেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সকলের কাছেই এটা একতরফা ও একদলীয় নির্বাচন হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
এখন একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেটাও ৫ জানুয়ারির মতো শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের ভাষা, কেয়ারটেকার সরকার মরে গেছে। এটা আর দেশে আসবে না।
এদিকে, বিএনপি এখন কেয়ারটেকার সরকারের দাবি থেকে সরে এসে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি জানাচ্ছে। শেষ হাসিনার অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে।
কিন্তু, আওয়ামী লীগ বলছে পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সহায়ক সরকার নেই। বাংলাদেশেও হবে না। নির্বাচন তাদের অধীনেই হবে।
অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের ভাষায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশ থেকে অভাব-অনটন দূর হয়েছে। শিক্ষা ও বিদ্যুতের আলো ঘরে ঘরে পৌঁছেছে। সব মিলিয়ে বর্তমান সরকারের সফলতা কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে।
এখন রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষের প্রশ্ন, এত সফলতার পর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে আওয়ামী লীগ এতো ভয় পাচ্ছে কেন? জনগণ যদি তাদের জানমালের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করে থাকে তাহলেতো নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকেই ভোট দেবে। নির্বাচন যার অধীনেই হোক।
তাদের মতে, উন্নয়নের নামে আওয়ামী লীগ এতোদিন যা বলে আসছে তা সবই ফাঁকাবুলি। তাদের কল্পিত উন্নয়ন শুধু হাওয়ায় ভাসছে। জনগণ তাদের উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছে না। বরং বাস্তবে যা হয়েছে, বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার শুধু সংবিধানের মধ্যেই সুরক্ষিত। বাস্তবে সরকার দেশে একদলীয় স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিরোধী দলের সঙ্গে নির্মম নিষ্ঠুর আচরণ করছে। বিএনপি-জামায়াতের জনপ্রিয় নেতাকর্মীদেরকে বাসা-বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে খাল-বিল নদীতে লাশ ফেলে দেয়া হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের অধিকাংশ নেতাকর্মী এখন তাদের বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছে না। বিনা অন্যায়ে পুলিশ দিয়ে তাদেরকে হয়রানি করছে।
তারপর, লুটপাট-দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগার খালি করে ফেলেছে। টাকা যোগান দিতে এখন কয়দিন পর পর গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর দাম বাড়িয়ে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সারাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখল, খুন-হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা বুঝতে পেরেছেন যে, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জনগণের ভোটে আর ক্ষমতায় আসা যাবে না। আর ক্ষমতায় না আসতে পারলে তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। তাই, ক্ষমতার জন্য আওয়ামী লীগ আবারও মরিয়া হয়ে উঠেছে। এজন্য তারা নিজেদের অধীনেই ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে।
Discussion about this post