অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সুপ্রিমকোর্টের প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রিক দেবীর মূর্তিটি অপসারণ করা হলেও সেটাকে আবার এনেক্স ভবনের সামনে স্থাপন করা হয়েছে। এনিয়ে এখন আবার নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ক্ষোভে ফুসে উঠছে ওলামায়ে কেরামসহ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। বলা যায়, মূর্তির পক্ষে-বিপক্ষের লোকজন আবারো মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।
এনেক্স ভবনের সামনে মূর্তিটি স্থাপনে মৃণাল হককে কারা শক্তি যোগাচ্ছে বা কাদের ইন্ধনে তিনি মৃর্তিটি আবার স্থাপন করার সাহস পেলেন? এনিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে মূর্তিটি সরানোর পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্তে এটা সরানো হয়েছে। এখানে সরকারের কোনো হাত নেই। আর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও বলেছেন, প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তেই ভাস্কর্যটি সরানো হয়েছে।
আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দাবির মুখে ভাস্কর্যটি সরানো হলেও একদিন পরই সেটাকে আবার এনেক্স ভবনের সামনে স্থাপন করা হয়েছে। আজ রোববার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্যের বরাত দিয়ে রিপোর্ট করেছে যে, এনেক্স ভবনের সামনে ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপনের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল কিছুই জানেন না।
বিশিষ্টজনসহ সচেতন মানুষ বলছেন, ওবায়দুল কাদের বলছেন এখানে সরকারের কোনো হাত নেই। আর অ্যাটর্নি জেনারেল গণমাধ্যমকে বলছেন যে, তিনি এবং প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। সরকার এবং সুপ্রিমকোর্ট যদি কিছু না জানে তাহলে মৃণাল হককে মূর্তি স্থাপনের অনুমতি দিলো কে? সুপ্রিমকোর্ট হলো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এমন জায়গায় মূর্তি স্থাপনের সাহস মৃণাল হক পেলো কোথায়? সরকার এবং প্রধান বিচারপতির ইশারাতেই এনেক্স ভবনের সামনে মৃণাল হক মূর্তিটি আবার স্থাপন করেছে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।
হেফাযতে ইসলামীর আমির আল্লামা আহমদ শফি মূর্তি পুনঃস্থাপনকে অত্যন্ত হতাশাজনক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, মূর্তি পুনঃস্থাপনের সংবাদে সমগ্র দেশবাসীর সঙ্গে আমরা বিস্মিত হতবাক এবং বাকরুদ্ধ। থেমিসের মূর্তিটি সুপ্রিম কোর্টের সামনে থাকবে, নাকি পিছনে থাকবে, এইটা কোন ইস্যু কখনো ছিলো না। নামাযের সময় কালো কাপড়ে মুড়ে দেয়া হবে কি হবে না; এইটাও ইস্যু ছিলো না। ইস্যু ছিলো, থেমিস থাকবে কি থাকবে না। এইখানে মধ্যপন্থা নেয়ার কোন সুযোগ নাই।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টে মূর্তি পুনঃস্থাপিত করা নিয়ে ফের ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে ইসলামী দলগুলো। বিভিন্ন ইসলামী দল এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিছু সংগঠন রাজপথে বিক্ষোভও করেছে।
মূর্তি পুনঃস্থাপনের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে জামায়াতে ইসলামী এক বিবৃতিতে বলেছে, সুপ্রীম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে গ্রীক দেবীর মূর্তিটি পূনরায় স্থাপন করা হলো কার নির্দেশে? একটি দৈনিকে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের বরাত দিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘অ্যানেক্স ভবনের সামনে মূর্তি স্থাপনের ব্যাপারে তিনি(এটর্নি জেনারেল) এবং প্রধান বিচারপতি কিছুই জানেন না।’ দেশবাসীর প্রশ্ন, তাহলে সুপ্রীম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে গ্রীক দেবীর মূর্তিটি পূনরায় স্থাপন করা হলো কার নির্দেশে? যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া সেখানে মূর্তিটি স্থাপন করলো কে?’ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করে এ ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং গ্রীক দেবীর মূর্তিটি সুপ্রীম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে থেকে অপসারণ করে এ সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানায় জামায়াত।
অন্যদিকে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে পুলিশ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশিষ্টজনরা বলছেন, গুটিকয়েক বামপন্থী ও নাস্তিকদের দাবি রক্ষায় সরকার মূর্তিটি পুনঃস্থাপন করে বড় ভুল করেছে। সরকার এদেশের আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সরকারকে অবশ্যই এর পরিনতি ভোগ করতে হবে।
Discussion about this post