আগামী নির্বাচনে একতরফা খেলা হবে না এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া নির্বাচন হবে না বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।
এ অবস্থায় অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠনে সংলাপে বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার দুপুরে রাজধানীতে কল্যাণ পার্টি আয়োজিত ‘রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তন এবং আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আজকে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। এবং সেই নির্বাচন না কি সংবিধান অনুয়ায়ী হবে। প্রশ্ন হচ্ছে কোন সংবিধান? যে সংবিধান (আওয়ামী লীগ) ভেঙেচুরে, কেটে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, এটা সংবিধান নয়। এটা আপনাদের (আওয়ামী লীগ) মনগড়া কাগজ তৈরি করেছেন।
ফখরুল বলেন, আপনার আমাদের নির্বাচন করতে বলছেন- নির্বাচন হলে কী করবেন? আপনারা সেখানে রেফারি ও লাইন্সম্যান। সুন্দরভাবে খেলে যাবেন, অন্য কাউকে খেলতে দেবেন না। আপনারা একতরফা গোল দিয়ে যাবেন।
এভাবে কী খেলা হয় প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, একতরফা খেলা হবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া নির্বাচন হবে না। সে জন্য আমরা বলেছি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজন হবে। কিন্তু কীভাবে হবে? আসুন- আমরা সংলাপ করি, কথাবার্তা বলি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির প্রস্তাবগুলো নিয়ে কথা বলেন, আলোচনা করেন। জানি তাও করবেন না। কারণ কথা বলতে গেলেই সত্যটা চলে আসবে। সত্য মেনে নিতে হবে সেই অনুয়ায়ী নির্বাচন দিতে হবে কিন্তু আপনারা সেটা করবেন না। সেটা করলে আপনাদের পরাজয় হবে।
পয়লা মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি সভা সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। আমরা জেলাগুলোতে কর্মীসভা ও সম্মেলন করতে হলরুম পাই না।
সভা-সমাবেশের কড়াকড়ির কথা তুলে ধরে বিএনপির এ নেতা বলেন, এখন কনফারেন্স রুমের জন্য অনুমতি নিতে হয়। তা না হলে বলা হয়- নাশকতা করছিল। এটা দেশ হতে পারে না, রাষ্ট্র হতে পারে না।
সরকারের জঙ্গিদের ধরে সত্য উদ্ঘাটন না করে তাদের মেরে ফেলছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, আপনারা এখন পর্যন্ত একজন জঙ্গিকে ধরে সত্য উৎঘাটন করতে পারেননি। যাদেরকে জঙ্গি সন্দেহে আটক করেছেন তাদের প্রত্যেককে গুলি করে মেরে ফেলছেন। এই নিয়ে গোটা জাতি একটি রহস্য ও ধুম্রজালের মধ্যে রয়েছি।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা তিস্তা নদীর পানির সমস্যা সমাধান হবে। কিন্তু সেই সমস্যা সমাধান হয়নি। সম্ভাবনাও নেই।
তিনি বলেন, যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা দর কষাকষি করতে পারতাম সেগুলো আগেই দিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এ কথাগুলো বললেই আমরা ভারত বিরোধী।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলছি আমি, আমার দল ও জোট ভারত বিরোধী নয়। ভারত আমাদের প্রতিবেশী, বন্ধু। যুদ্ধের সময় সহযোগিতা করেছে। তার অর্থ এই নয় নতজানু হয়ে আমাদের সবকিছু বিলিয়ে দিতে হবে।
ফখরুল বলেন, প্রধান বিচারপতি বলেছেন, দেশে আইনের কোনো শাসন নেই। এটা অত্যন্ত বড় একটা অভিযোগ। এর অর্থ হলো সরকার বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের তিন বিভাগকে সমন্বয় করে কাজ করতে পরামর্শ দিয়েছেন উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, বিচার কী সমন্বয় করে হয়? বিচার কখনও সমন্বয় করে হতে পারে না।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- বিএনপি নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ, কল্যাণ পার্টি নেতা অ্যাডভোকেট আজাদ মাহমুদ, সাইদুর রহমান তামান্না, এম এম আমিনুর রহমান প্রমুখ।
সূত্র: যুগান্তর
Discussion about this post