“সোজা, সস্তা এবং ভোটের রাজনীতির জন্যই এখন উন্নয়ন হয়। এই উন্নয়নে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে অযৌক্তিক ফ্লাইওভারের কারণে, তা আর কোনো দিনই পূরণ হবার নয়।” বর্তমান সরকারের কথিত উন্নয়ন নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক।
সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবহন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়া খ্যাতনামা এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ।
এক প্রশ্নের জবাবে বর্তমান সরকারের কথিত উন্নয়নকে তিনি ‘ডিক্টেটেড উন্নয়ন’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এই উন্নয়নকে ডিক্টেটেড উন্নয়ন বলি। যার অর্থ নির্দেশিত বা স্বেচ্ছাচারী উন্নয়ন। তথ্য নেই, পরিকল্পনা নেই। ফ্লাইওভার একটিতে কাজ হচ্ছে না, তাহলে আরেকটি কর। প্রয়োজনে ফ্লাইওভার দিয়ে গোটা নগর ঢেকে দাও। পরিবহন এমন একটি জটিল বিষয়, যার পরিকল্পনা ২৫ বছর আগে নিয়ে রাখতে হয়।’
‘পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খল পরিকল্পনা করে শক্তি খাটিয়ে শৃঙ্খলা আনা যায় না’ শিরোনামে সাপ্তাহিকে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ অ্যানালাইসিস বিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
সাপ্তাহিক : সরকার তে যানজট নিরসনে নানা উন্নয়নও করছে। রাস্তা, ফ্লাইওভার করছে।
ড. সামছুল হক : সোজা, সস্তা এবং ভোটের রাজনীতির জন্যই এখন উন্নয়ন হয়। এই উন্নয়নে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। গণপরিবহনকে নির্দেশিত করে, চাপিয়ে দেয়া আদেশ দিয়ে একটি শহরের উন্নয়ন হতে পারে না। সরকারের মধ্যে পরিকল্পনা থাকলে পেশাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে উজ্জ্বল করে রাখত। তারাই সব দেখত। না পারলে পরে মন্ত্রণালয়ের কাছে যেত।
পরিকল্পনা থাকলে এই অপরিকল্পিত উন্নয়ন হতো না। এসটিপিতে প্রথমেই বলা ছিল বাসকে সুশৃঙ্খল কর। ফুটপাত পরিষ্কার কর। এর জন্য খরচ লাগে না। ইচ্ছা থাকলে আজই করা যায়। কিন্তু হবে না। কারণ এখানে রাজনীতি আছে।
যে অপেশাদার লোকগুলো এসি রুমে বসে ফ্লাইওভারের নকশা করছেন, তিনি তো আর ফুটপাতের দায় নিতে চাইবেন না। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হলে প্রতিদিন মাঠে থাকতে হবে। মাঠে থাকার লোক কই? সবাই তো ঠাণ্ডা ঘরে বসে ফ্লাইওভার, আরও আরও নতুন বাস কেনার পরিকল্পনা নিয়েই ব্যস্ত। এতে রাজনীতি থাকে, বিশেষ হিসাব থাকে, গাড়ি কেনারা নামে মন্ত্রণালয়ের পিয়ন থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত দেশের বাইরে রাষ্ট্রীয় খরচে ঘুরে আসার সুযোগ থাকে।
সরকারও তো হোয়াইট কালার জবে বিশ্বাসী। ফ্লাইওভার উদ্বোধন করতে ফিতা কাটা যায়। ফুটপাত দখলমুক্ত করে বা গণপরিবহনের সেবা বাড়িয়ে ফিতা কাটা যায় না। এখানে ঘাম ঝরে। সবই সিন্ডিকেটের অংশ। আগে ডিপার্টমেন্টগুলো মন্ত্রণালয়ের কাছে জবাবদিহি করত। এখন আর তা নেই। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে গিয়ে দেখুন, কি সর্বনাশ করা হয়েছে। কোনোই জবাবদিহিতা নেই।
সাপ্তাহিক : তাহলে এই উন্নয়নের মানে কি দাঁড়ায়?
ড. সামছুল হক : আমি এই উন্নয়নকে ডিক্টেটেড উন্নয়ন বলি। যার অর্থ নির্দেশিত বা স্বেচ্ছাচারী উন্নয়ন।
তথ্য নেই, পরিকল্পনা নেই। ফ্লাইওভার একটিতে কাজ হচ্ছে না, তাহলে আরেকটি কর। প্রয়োজনে ফ্লাইওভার দিয়ে গোটা নগর ঢেকে দাও। পরিবহন এমন একটি জটিল বিষয়, যার পরিকল্পনা ২৫ বছর আগে নিয়ে রাখতে হয়।
সাপ্তাহিক : এরপরেও নগরে থাকতে হচ্ছে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো উপায় আছে কিনা?
ড. সামছুল হক : ২০০৫ সালে রেল, নৌ এবং সড়কপথ নিয়ে সমন্বিত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হলো। বাসগুলোকে একত্রিত করার কথা বলা হলো। বলা হলো, বাসকে গুরুত্বপূর্ণ লেনে ছেড়ে দাও। এরপর মেট্রোতে যাও। উপরে দুটি এমআরটি, নিচে একটি বিআরটি কর।
সাপ্তাহিক : সরকার তো এমআরটি এবং বিআরটিতে যাচ্ছে।
ড. সামছুল হক : বিআরটি হবে না। ফ্লাইওভার হয়ে গেছে। অমিত সম্ভাবনাগুলো কবর দেয়া হয়েছে। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাওভার ছিল না। সেখানে চারটি এমআরটি এবং দুটি বিআরটি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন আর একটিও হবে না। সরকার বিআরটি-৩-এর কথা বলছে। মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারের কারণে সেটাও আর হবে না।
সবক্ষেত্র নষ্ট করে এখন পেছাতে পেছাতে উত্তরার দিকে যাচ্ছে সরকার। অযৌক্তিক উন্নয়নই এখন সর্বনাশের মূল। কথিত উন্নয়ন কী ক্ষতি করছে, তা দুটি প্রকল্প আমলে নিলেই পরিষ্কার হয়। তিনটি এমআরটি এবং দুটি বিআরটি সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ৩১টি জেলা থেকে মানুষ এসে কেউ বাসে, কেউ মেট্রোতে, কেউ বিআরটিতে আবার কেউ সিএনজি অথবা রিকশায় করে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারত। এক মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারই সব শেষ করে দিয়েছে।
এই সর্বনাশ বিশ্লেষণ না করে আবার মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারে গেল। ন্যাড়া নাকি একবার বেল তলায় যায়। আর আমাদের সরকার গেল দুইবার। বিআরটি-৩ বনানী আসার কথা ছিল। তাও আর হচ্ছে না।
সাপ্তাহিক : এখন কোথায় ঠেকবে?
ড. সামছুল হক : এখন আর এটি হচ্ছে না। এর বর্ধিত অংশ হচ্ছে অর্থাৎ মূল অংশ হচ্ছে না। গাজীপুর থেকে এসে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ঠেকবে।
সাপ্তাহিক : এয়ারপোর্ট থেকে মানুষ যাবে কীভাবে?
ড. সামছুল হক : একই প্রশ্ন আমিও সরকারকে করেছিলাম। জবাব নেই। ২০১০ সালে নেয়া হয়েছিল এয়ারপোর্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত একটি করিডর। তা আর হলো না। এখন সরকার বিআরটি-৩ মহাখালী পর্যন্ত আনার জোড়াতালির পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানতে পারলাম।
কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না। যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে অযৌক্তিক ফ্লাইওভারের কারণে, তা আর কোনো দিনই পূরণ হবার নয়।
অযৌক্তিক উন্নয়নের ভাগিদার অনেক। ডিসিসি না করলে বিবিএ করছে। নতুবা সেনাবাহিনী করছে। সেনাবাহিনী না করলে এলজিআরডি বা সড়ক বিভাগ করে ফেলছে। সবাই তো ব্যবসা, কমিশন নিয়েই ব্যস্ত।
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের দুটি সিগন্যালের কথা আমি তিন বছর আগে বলেছিলাম। কেউ কানে তোলেনি। এখন সিগন্যাল উপরে উঠছে। অন্ধ লোকের উন্নয়ন মানুষের কাজে আসে না।
সাপ্তাহিক : সিগন্যাল ফ্লাইওভারে!
ড. সামছুল হক : হ্যাঁ। মগবাজার এবং মৌচাকের দুটি জায়গায় ফ্লাইওভারের উপরে সিগন্যাল বসাতে হবে। এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে, রাস্তা ধ্বংস করে, ফুটপাত নষ্ট করে, তাহলে কী লাভ হলো?
যে দুটি সিগন্যালের কারণে মৌচাক-মগবাজারে যানজট হতো, সেই দুটি সিগন্যাল রয়েই গেল। অন্ধ জনবলের কারণেই জনগণের এই সর্বনাশ হচ্ছে।
ফ্লাইওভারের কারণে শত শত নতুন গাড়ি আসবে। পুলিশ ফ্লাইওভারে বসে সিগন্যাল দেবে। বিশ্ববাসীর কাছে হাসির কারণ হবে। পুলিশের বসার বা হাঁটারও কোনো জায়গা নেই।
এসব না করে যদি ফুটপাতটি দখলমুক্ত করে, আরো প্রসারিত করে দিত, মানুষ দুই-তিন কিলোমিটার হেঁটেই যেত। মানুষ হাঁটার জায়গা পায়না বলেই গাড়িতে বসে থাকতে বাধ্য হন। অথচ এর জন্য অর্থ ব্যয় করতে হতো না।
ফ্লাইওভারের কারণে ফুটপাত সংকীর্ণ হয়ে গেল। মূল সড়কে খুঁটি বসল। চাইলেও আর মেট্রো বা বিআরটি করা সম্ভব হবে না। অপেশাদার জনবলই আত্মঘাতী উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। খাম্বা বা দৃশ্যমান খুঁটিই এদের কাছে উন্নয়নের দর্শন।
সাপ্তাহিক : তাহলে কি এই ফাঁদ থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই?
ড. সামছুল হক : দুটি সিগন্যাল আছে, এটি বুঝতেই সময় লাগল তিন বছর। তাহলে ফাঁদ থেকে বের হবেন কি করে!
মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে যান। কোনো ড্রেনেজ সিস্টেম পাবেন না। যারা এটি তৈরি করেছেন, তারা জানেন এটি উজবুকের জাতি। যা দিবেন তাই খাবে। কোনো হৈচৈ হবে না। ফ্লাইওভারের বৃষ্টির পানি সরাসরি পড়ে নিচের রাস্তা নষ্ট করছে। নিচের রাস্তা ভালো থাকলে তো কেউ আর ফ্লাইওভারে উঠতে চাইবে না। নদীর উপরে ব্রিজ করলেও পিভিসি পাইপ দিয়ে বৃষ্টির পানি নিচে নামানো হয়। অথচ তদারকি প্রতিষ্ঠান ডিসিসি কোনোদিন এ নিয়ে জবাবদিহি করেনি।
সরকারে কোনো সজ্ঞানের লোক আদৌ আছে কিনা আমার জানা নেই। থাকলে ফ্লাইওভারের নিচে লাখ লাখ মানুষকে এভাবে জিম্মি করে রাখার কথা নয়। অথচ এই আম জনতাকে দেখিয়েই প্রজেক্ট নিয়েছে, বিনিয়োগ করেছে।
সাপ্তাহিক : দাতা গোষ্ঠীও এমন প্রজেক্টে আসছে। তারা কি এর ফলাফল দেখছে না?
ড. সামছুল হক : দাতারাও বুঝে গেছে, এ দেশে যা দেবে তাই খাবে। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার কানাডার লিয়া নামের একটি কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান পেয়েছিল। কলসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান হচ্ছে একটি বাণিজ্যিক কোম্পানি। তারা পাঠিয়ে দিল কলকাতার অখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে, যারা আমার সামনে বসলে হাঁটু কাঁপত। কাজের প্রেজেন্টেশন দিত সাদারা আর কাজ করত কলকাতার লোকজন।
ভুল করলেও এখানে কেউ ধরতে পারে না, তাহলে ভালো প্রতিষ্ঠান বা পেশাদার জনবল পাঠানোর দরকার কি?
সাপ্তাহিক : একই চিত্র গোটা দেশেই?
ড. সামছুল হক : ঢাকার চাইতে চট্টগ্রামের অবস্থা আরও করুণ। চট্টগ্রামে আপনি ফ্লাইওভার ছাড়া কিছুই দেখতে পাবেন না। গণপরিবহনের নাম গন্ধ নেই সেখানে। মাথায় পচন ধরলে তো অন্য অঙ্গও অকেজো হয়ে যায়। ঢাকায় তাও দুই একটি গণপরিবহন মিলছে। অন্য শহরে তাও নেই। ইজিবাইকের ছড়াছড়ি। সিএনজির দখলে রাস্তা।
রাস্তাও আর বাড়ানোর সুযোগ নেই। রাস্তার পাশে বড় বড় ভবন হচ্ছে। এমন একটি ভঙ্গুর মেরুদণ্ডের ওপর শহর কতদিন বাঁচবে তা সহজেই অনুমেয়।
পুরো দেশটা যদি একটি শরীরের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে প্রত্যেকটা শহর হচ্ছে একেকটি ক্যান্সার সেল। ক্যান্সারের সেল অনিয়ন্ত্রিত বেড়েই শরীরে মৃত্যু ঘটায়। শহরগুলোর উন্নয়নও অনিয়ন্ত্রিতভাবে হচ্ছে। ফ্রি স্টাইলে যা ইচ্ছা তাই হচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রামগুলোও কথিত শহরের রূপ নেবে। তখন ক্যান্সার ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়বে না।
এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি আর কোনো সরকারই ম্যানেজ করতে পারবে না।
সাপ্তাহিক : এই ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়ার আর কোনে উপায় নেই?
ড. সামছুল হক : ঢাকা এখনও ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছে। এরশাদ সরকারের নানা সমালোচনা আছে। কিন্তু তার আমলে কয়েকটি কাজ হয়েছিল, যা ঢাকাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়ত করেছিল। প্রগতি সরণি, বিজয় সরণি, রোকেয়া সরণির মতো প্রাইমারি সড়কগুলো এরশাদের আমলেই করা। বেড়িবাঁধ, পান্থপথও তার আমলে করা। এরশাদ যাওয়ার পর আর কোনো সরকার কিন্তু প্রাইমারি সড়ক করেনি।
ঢাকা ছিল তেজগাঁও পর্যন্ত। এরশাদ এসেই রামপুরা সড়ক করে ঢাকাকে প্রসারিত করল। আশির দশকের কথা। এরপর আর কী হলো? এক বা আধা কিলিমিটার দূরে আরেকটি সড়ক হওয়ার কথা ছিল না? কই হলো?
সাপ্তাহিক : এই ‘না’ করার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন?
ড. সামছুল হক : রাজনীতি। কথিত গণতন্ত্র আগে ভোটের হিসাবটাই করে। যেখানে উন্নয়ন করলে ভোট বাড়বে, চোখে দেখা যাবে, তা নিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়েও নানা সমালোচনা আছে। আমরা কেউই এমন সরকার চাই না। এরপরেও কথা থেকে যায়। তারা মাত্র দুই বছর ক্ষমতায় থাকল। হাতিরঝিল তারাই পেরেছে। কুড়িল, বনানী তারাই করেছে। সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল বিমানবন্দরের মধ্য দিয়ে একটি সড়ক করা। সেটিও সম্ভব হয়েছে তাদের আমলে। অথচ শক্তিশালী গণতন্ত্রের কথা বলেও মেট্রোরেল সেদিকে নিতে পারেনি।
জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় এসে এত বছর পরেও কেন একটি প্রাইমারি সড়ক করতে পারল না?
সাপ্তাহিক : তার মানে কথিত গণতন্ত্রই এখন জনস্বার্থবিরোধী?
ড. সামছুল হক : আমি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছি না। শুধু বলব, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ নয়। আরও দেশ আছে, সেখানে নগর আছে, উন্নয়ন হচ্ছে। তার তুলনায় আমরা কি করছি, সেটাই ভাবনার বিষয়। লোকদেখানো উন্নয়ন ঘটিয়ে অপার সম্ভাবনা নষ্ট করার কোনো অধিকার সরকারের নেই। একইভাবে ডিকটেটেড উন্নয়নও করতে পারে না সরকার। করতেই হবে এমন মনোভাব জনস্বার্থে যায় না। বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নয়ন ঘটলেই জনস্বার্থ রক্ষা হয়।
সাপ্তাহিক : এই অবস্থায় রাজধানী ঢাকার ভবিষ্যৎ কী?
ড. সামছুল হক : রাজধানী স্থানান্তরের আর কোনো বিকল্প নেই। এমন এলোমেলো শহরে রাজধানী থাকতে পারে না। পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এমনকি মিয়ানমারও রাজধানী পরিবর্তন করল। কারণ তারা দেখল একবিংশ শতাব্দীর রাজধানী আগের শহরে হতে পারেনি। তারা আর সময় নেয়নি।
সাপ্তাহিক : আপনার মতে কোথায় যেতে পারে রাজধানী?
ড. সামছুল হক : একমাত্র ভালো একটি জায়গা ছিল পূর্বাচল। সেটিও আর নেই। পূর্বাচল, সাভার, ন্যাশনাল পার্কের পুরো এলাকা লাল মাটি দিয়ে তৈরি। অবকাঠামোর জন্য সহায়ক। এখানকার মাটি শক্ত।
প্রতিষ্ঠান থাকলে, পেশাদার লোক থাকলে এতদিন রাজধানী স্থানান্তরের জন্য অস্থির হয়ে উঠত। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিজেই এখন ব্যবসার দোকান খুলে বসেছে। পূর্বাচল দখলে নিয়ে প্লট বিক্রি করে টাকা আয় করছে।
সাপ্তাহিক : তাহলে রাজধানীর উপায় কী?
ড. সামছুল হক : রাজধানী স্থানান্তর করতেই হবে। শুধু আমরাই বলছি না। দাতা সংস্থাগুলোও এখন নানা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রাজধানী স্থানান্তরের কথা বলছে। অনেক দূরে হয়তো যেতে হবে। অধিক জনবসতির দেশ। তাতে আবার আশি শতাংশ জায়গা পলি মাটির। হয়তো কোনো চর এলাকা বেছে নিতে হবে। কিন্তু সেটা প্রাকৃতিকভাবে অর্থনৈতিক শহর হবে না। অনেক অর্থ ব্যয় করে সাজাতে হবে।
Discussion about this post