তারিকুল ইসলাম
গত ৭ বছর ধরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) কলকাতা নাইট রাইডার্সকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কলকাতার দুটি শিরোপা জয়ে দিয়েছেন সামনে থেকে নেতৃত্ব। ২০১২ সালে জ্যাক ক্যালিসের মতো অলরাউন্ডারকে পেছনে ফেলে হয়েছেন আইপিএলের সেরা অলরাউন্ডার। ফাইনাল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল সাকিববের ছোট্ট ঝড়ো ইনিংস। যার সুবাদে কলকাতা পায় প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ। আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি পরিনত সাকিব। অথচ এখন কলকাতা দলে অবহেলার পাত্র সাকিব।
কলকাতার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক সাকিব। ৪২ ম্যাচে ৪৩ ইউকেট শিকারি সাকিব। সর্বোচ্চ ৭০ ম্যাচ খেলে ৮৭ উইকেট নিয়ে এক নম্বরে আছেন সুনিল নারিন। ২০১৪ সালে পাঞ্জাবের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে যেখানে নারিন ৪ ওভারে দিয়েছিল ৪৮ রান। সেখানে মিতব্যয়ী সাকিব ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে তুলে নেন ১ ইউকেট। হাইভোল্টেজ সেই ম্যাচে পাঞ্জাবের দেওয়া ২০০ রান টপকে চ্যাম্পিয়ন হয় কলকাতা। কিন্তু কলকাতার সেই চ্যাম্পিয়ন দলের মূল কারিগর আজ ড্রেসিং রুমের সদস্য।
কেন সাকিব উপেক্ষিত? এমন প্রশ্ন খোদ কলকাতাবাসীর। যেখানে সাকিবের পরিবর্তে খেলছে দুই অলরাউন্ডার নিউজিল্যান্ডের কলিন ডি গ্রান্ডহোম ও ইংলিশ ক্রিস ওকস। তাদের চেয়ে সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার গড়েও দলের বাইরে সাকিব। এখন পর্যন্ত এবারের আইপিএলে ওকস ৪ ম্যাচে ৯৯ রান খরচায় নিয়েছেন মাত্র ৩ ইউকেট এবং ব্যাট হাতে করেছেন মাত্র ১০ রান। অন্যদিকে গ্রান্ডহোম দুই ম্যাচ খেলে রানের খাতাই খুলতে পারেনি। এছাড়া বল হাতে নিয়েছেন মাত্র ১ ইউকেট।
জাতীয় দলের হয়েও নিজের সর্বশেষ টি-২০তে ম্যাচসেরা পারফরম্যান্স করেন সাকিব। অভিজ্ঞতা ও পারফরম্যান্সের বিচারে এগিয়ে থেকেও যদি নাইট রাইডার্সের প্যাভিলিয়ন হয় সাকিবের ঠিকানা, তবে দেশে ফিরে প্রিমিয়ার লিগ খেলা কি ভাল নয়? এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খায় ক্রিকেট প্রেমিদের মনে।
অন্যদিকে এক ম্যাচের বোলিং পারফরম্যান্সেই বাদ পড়ে গেছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদে খেলা আরেক বাংলাদেশি কাটার মাষ্টার মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম বারের মতো গত মৌসুমে হায়দরাবাদের শিরোপা জয়ে বল হাতে দলের মূল অস্ত্র ছিলেন দ্যা ফিজ। অথচ যার কাঁধে চড়ে শিরোপা জয় সেই মুস্তাফিজকে মূল্যয়নের জন্য কি একটি ম্যাচই যথেষ্ট? মুদ্রার উল্টো পিঠ বোধ হয় একেই বলে। ঢাকা থেকে মুম্বাই তারপর সরাসরি স্টেডিয়ামে দীর্ঘ ভ্রমন ক্লান্তি নিয়েই মাঠে নামতে হয়েছিল মুস্তাফিজকে। সেই বিষয়টি কি একবারও আমলে নেওয়া দরকার ছিল না টিম ম্যানেজম্যান্টের।
প্রশ্ন হলো সমস্যা কি সাকিব – মুস্তাফিজের পারফরম্যান্সে নাকি অন্য কিছু। কেন এই নাটক? গত মৌসুমে ট্রেন্ট বোল্ট মুস্তাফিজের কারনে হায়দরাবাদ একাদশে চান্স পায়নি সেই বোল্ট এখন বীর দর্পে খেলে যাচ্ছে কলকাতা টিমে। তবে কেন দুই বাংলাদেশি আইপিএলের বলীর পাঠা হচ্ছে। তার চেয়ে বরং কি ভাল নয় দেশে ফিরে চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা।
মোস্তাফিজকে একাদশে দেখার ইচ্ছার কথার প্রতিফলন দেখা গেছে জনপ্রিয় ক্রিকেট সাইট ক্রিকইনফোতেও। সেখানে বলা হয়েছে, মোস্তাফিজের আগের পারফরম্যান্সের পরও যদি আজকের(বুধবারের) ম্যাচে একাদশে না রাখা হয় তাহলে সেটা হবে বিস্ময়ের। বেন কাটিং ভালো তবে বিস্ময়কর কোনো পারফরম্যান্স এখনঅব্দি করতে পারেননি।
এদিকে বেন কাটিংয়ের পরিবর্তে মোস্তাফিজকে দলে রাখার মতামত জানতে ক্রিকইনফোতে ভোট নেয়া হয়। যেখানে ৬৬ দশমকি ৯১ শতাংশ পাঠক মোস্তাফিজকে দলে নেয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
তারপরও মোস্তাফিজকে হায়দরাবাদের আজকের খেলায় নেয়া হয়নি। এটা শুধু মুস্তাফিজকে নয়, বাংলাদেশকেই অপমান করার সামিল। তাদেরকে যদি বসিয়েই রাখবে তাহলে কি দরকার চিলো কিনে নেয়ার?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে টাইগারপ্রেমীদের ক্ষোভের অন্ত নেই। কেউ কেউ বলছেন, বিশ্বের এক নাম্বার অলরাউন্ডারকে টানা একের পর এক ম্যাচে বসিয়ে রাখা মানে বাংলাদেশকে অপমান করা।
নাহিন নামে একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আরে ভাই সাকিব, আইপিএল তো ঘরে বসেই দেকতে পারতিস। ওখানে যেয়ে অপমানিত হয়ার দরকার কি? শুধু বাংলাদেশি প্লেয়ার বলেই দলে জায়গা পাচ্ছে না সাকিব। অস্ট্রেলিয়ার না ইংল্যান্ডের হলে তার দাম কমপক্ষে ৮-১০ কোটি রুপি হতো। তাকে বসায়ে রাখায় শুধু সে নিজে না, ছোট হচ্ছে পুরা বাংলাদেশ।’
অনেকেই সাকিব ও মুস্তাফিজকে সেখানে বসে থেকে অপমানিত না হয়ে আইপিএল বর্জন করে দেশে চলে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন। এমনকি ভবিষ্যতে আইপিএলে বাংলাদেশি কোনো খেলোয়াড়কে না যাওয়ারও অনুরোধ জানায় অনেকে।
Discussion about this post