জুনায়েদ আব্বাসী
ভারত সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ২২টি চুক্তি ও ৪টি সমঝোতা স্মারকে সই করেছেন। সমঝোতা স্মারকের অধিকাংশই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংক্রান্ত বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি তিস্তা চুক্তি ছাড়াই ভারতের পক্ষের এসব চুক্তিতে সই করেছেন শেখ হাসিনা। ১৬ কোটি মানুষকে অন্ধকারে রেখে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের নিরাপত্তা নামক বক্সটির চাবি ভারতের হাতে তুলে দিয়েছেন বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমান বিশ্বে ভারতই একমাত্র দেশ কোনো প্রতিবেশির সঙ্গেই তাদের সম্পর্ক নেই। এর কারণ হল দেশটির দখল ও আগ্রাসীনীতি। পূর্ব বাংলাকে গ্রাস করার লক্ষ্যেই তারা আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল। আর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করার জন্য ভারত বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে আসছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে ভারত তখনই এদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে গ্রাস করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সহযোগিতায় ক্ষমতায় আসার পরই ভারত তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নটি পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। অনেকের মতে, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির পিলখানা হত্যাকাণ্ডটি ছিল ভারতের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন। আর এ কাজে সহযোগিতা করেছে শেখ হাসিনার সরকার। বাবার হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতেই শেখ হাসিনা সেদিন বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সাহসী ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলেন। আর এ নারকীয় হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ যাতে কেউ করতে না পেরে সেজন্য বেছে বেছে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শুধু এদেশের ১৬ কোটি মানুষেরই নয়, বিশ্বের শান্তিকামী সব মানুষের গর্বের প্রতীক। জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আন্তর্জাতিকভাবেও সুনাম অর্জন করেছে সেনাবাহিনী। ভারতের সেনাবাহিনীর এমন রেকর্ড নেই। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এ জায়গাগুলোই মেনে নিতে পারছে না বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারত। তারা এখন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিরক্ষা চুক্তির জন্য বর্তমান সরকারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, চুক্তি এবং এমওইউ’র প্রথম তিনটি সমঝোতা স্মারক হচ্ছে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত। এর প্রথমটি হচ্ছে ‘ডিফেন্স কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক’ বা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কাঠামো বিষয়ে। অপর দুটি ভারতের দুটি ডিফেন্স স্টাফ কলেজের সঙ্গে বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত কারো সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা দিলে তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও তারা পাশে চাইবে। আর যুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ কৌশলে প্রত্যেক দেশের সেনাবাহিনী অভ্যন্তরীণ নীতি অবলম্বন করে। বাংলাদেশের প্রতিবেশি হল ভারত। ভারত কখনো বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এমন প্রশিক্ষণ দেবে না যাতে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে পারে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধ কৌশল সবই ভারতের সেনাবহিনীর চেয়ে উন্নত।
প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে সই করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রতিরক্ষাবাহিনীকে ভারতের হাতে সোপর্দ করে দিয়েছেন বলে মনে করছেন তারা।
লেখক: রাজনীতি বিশ্লেষক
Discussion about this post