বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে যতগুলো সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অধিকাংশ নির্বাচন হয়েছে একতরফা এবং ক্ষমতাসীন দলের পছন্দ অনুযায়ী।
বিগত দিনের বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দল তাদের পছন্দ অনুযায়ী ‘বিরোধী দল’ ঠিক করতে চেয়েছে এবং সে অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছে।
১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে বিরোধী দল ক্ষমতাসীনদের পছন্দমতো হয়নি।
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দেখা হচ্ছে বিরোধী দলের আসনে কারা বসবে সেটি সরকারের ইচ্ছার ওপর নীর্ভর করছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দল কারা হবে সেটি ঠিক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অতীতের বিভিন্ন সংসদে বিরোধী দল কারা ছিল সেটি তুলে ধরা হয়েছে এ লেখায়
প্রথম জাতীয় সংসদ
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ। সে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তখন ব্যাপক বিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল।
নির্বাচনে মোট ১৫টি দল অংশ নিয়েছিল। নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসনে জয়লাভ করে।
জাতীয় লীগ এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একজন করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী পাঁচজন জয়লাভ করেছিলেন নির্বাচনে।
এই সংসদের মেয়াদ ছিল ১৯৭৩ সালের সাতই এপ্রিল থেকে ১৯৭৫ সালের ৬ই নভেম্বর। অর্থাৎ সংসদের মেয়াদ ছিল দুই বছর ছয় মাস।
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির ব্যানারে অংশ নিয়েছিলেন হায়দার আকবর খান রনো।
মি. রনো তার আত্মজীবনী ‘শতাব্দী পেরিয়ে’ বইতে লিখেছেন, নির্বাচনের ফলাফলে তারা বিস্মিত হয়েছিলেন।
“আমরা জানতাম, আওয়ামী লীগ জিতবে, কিন্তু কিছু আসন বিরোধী শিবিরেও যাবে।”
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে মাত্র সাতটি আসন আওয়ামী লীগের বাইরে অন্যরা জয়লাভ করেছিল।
হায়দার আকবর খান রনোর ধারণা, পনের থেকে বিশটি আসনে বিরোধী দল নিশ্চিতভাবে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু তাদের জোর করে হারিয়ে দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনের পর শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন – দেশে কোন বিরোধী দল নেই। এই শিরোনামে খবর তৎকালীন দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল।
দ্বিতীয় সংসদ
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি। তখন জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতায়।
এই নির্বাচনটিও ছিল বিতর্কিত এবং সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় পরিচালিত। সামরিক আইন জারী থাকায় অবস্থায় সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নির্বাচনে বিএনপি ২০৭টি আসনে জয়লাভ করে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (মালেক) ৩৯টি, জাতীয় লীগ দুটি, আওয়ামী লীগ (মিজান) দুটি, জাসদ আটটি মুসলিম ও ডেমোক্রেটিক লীগ ২০টি, বাংলাদেশ গণফ্রন্ট দুটি আসন পায়।
এছাড়া ন্যাপ, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল ও জাতীয় একতা পার্টি একটি করে আসনে জয়লাভ করে। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৬টি আসনে জয়লাভ করে।
মোটি ৩০টি রাজনৈতিক দল সে নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছিল।
সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রথমে অংশ নিতে রাজি ছিলনা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক সেটি চাননি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা তখন কারাগারে।
এক সময় জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রীসভায় ছিলেন মওদুদ আহমদ। ‘চলমান ইতিহাস ১৯৮৩-১৯৯০’ বইতে মি. আহমদ লিখেছেন – প্রেসিডেন্ট জিয়ার কৌশল ছিল আওয়ামী লীগকে জব্দ করা – দেশের রাজনীতির মূল স্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করা।
“জিয়া আওয়ামী লীগের সাথে আপোষ করতে একদম নারাজ। তাই তাকে আবারো নতুন করে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যোগদানের আবশ্যকতা এবং গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝাতে হলো।তিনি বুঝতে নারাজ,” লিখেছেন মি. আহমদ।
সে সংসদের নেতা হয়েছিলেন শাহ আজিজুর রহমান, যাকে নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। মি. আজিজকে অনেকে ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ হিসেবে বর্ণনা করেন। সেই সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হন আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান খান।
কারণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মালেক উকিল নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন। শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন আসাদুজ্জামান খান।
রাজেনৈতিক পর্যবেক্ষক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘বিএনপি সময়-অসময়’ বইতে লিখেছেন, দ্বিতীয় সংসদে প্রথমবারের মতো কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতা সংসদে জায়গা পান।
এরা হচ্ছেন – ন্যাপের সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের মোহাম্মদ তোয়াহা, জাতীয় একতা পার্টির সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং জাসদের শাজাহান সিরাজ।
তৃতীয় সংসদ
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালের ৭ই মে। এই সংসদের মেয়াদকাল ছিল মাত্র ১৭মাস।
তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন এইচএম এরশাদ। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সে নির্বাচন বর্জন করলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তাতে অংশ নিয়েছিল।
সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসনে জয়লাভ করেছিল। নির্বাচনের মাত্র কয়েকমাস আগে জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টি আত্মপ্রকাশ করে।
এছাড়া আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছিল ৭৬টি আসনে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি পাঁচটি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) তিনটি, জাসদ (রব) চারটি, জাসদ (সিরাজ) তিনটি, জামায়াতে ইসলামী ১০টি, মুসলিম লীগ চারটি, ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি আসনে জয়লাভ করে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩২টি আসনে জয়লাভ করে।
সংসদ নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা।
মওদুদ আহমদের বর্ণনায় – ব্যাপক সন্ত্রাস ও কারচুপির মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
“বহু সংখ্যক এলাকায় ভোটাররা হয় ভোটদানে নিরুৎসাহিত ছিলেন কিংবা তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য নির্বাচন কেন্দ্রে যেতেই দেয়া হয়নি।”
সে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছিলেন, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির কারণে তার দল জয়লাভ করতে পারেনি।
কিন্তু তারপরেও শেখ হাসিনা সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রীর ভূমিকা নেন এবং সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন।
“শেখ হাসিনা তার বাবার মতো প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, কেবল নির্বাচনের মাধ্যমেই একটি গণতান্ত্রিক ও গণভিত্তিক রাজনৈতিক দল জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার অর্জন করতে পারে,” লিখেছেন মওদুদ আহমদ।
জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন যখন জোরদার হতে শুরু করে তখন পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে রাখার জন্য তিনি সংসদ ভেঙ্গে দেন। সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙ্গে দেবার ৯০ দিনের মধ্যে নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা বাধ্যতামূলক।
চতুর্থ সংসদ
১৯৮৮ সালের তেসরা মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই সংসদের মেয়াদ ছিল দুই বছর সাত মাস।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে মাত্র ছয়টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল।
সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৫২টি আসনে জয়লাভ করে। সংসদ নেতা নির্বাচিত হন মওদুদ আহমদ। অন্যদিকে বিভিন্ন ছোট ছোট দলের সমন্বয়ে গঠিত সম্মিলিত বিরোধী দল ১৯টি আসনে জয়লাভ করে।
বিরোধী দলীয় নেতা জাসদ-এর আ স ম আব্দুর রব। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২৫টি আসনে, জাসদ (সিরাজ) তিনটি ও ফ্রিডম পার্টি দুটি আসনে জয়লাভ করে।
কোন প্রতিযোগিতা না থাকায় মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তেমন ছিলনা এবং সারাদেশে ভোটার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। বিদেশি সংবাদমাধ্যম এবং পর্যবেক্ষকদের মতে ভোট পড়েছিল ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।
পঞ্চম সংসদ
সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সে নির্বাচন ছিল নানা কারণে ভিন্নমাত্রার। প্রথমবারের মতো নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সে নির্বাচনে সবগুলো রাজনৈতিক দল নিয়েছিল। নির্বাচনে ১৪০টি আসন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৮৮টি আসন, জাতীয় পার্টি ৩৫টি আসন এবং জামায়াতে ইসলামী ১৮টি আসন। এছাড়া আরো কয়েকটি দল কয়েকটি আসনে জয়লাভ করেছিল।
জামায়াতে ইসলামীর সহায়তা নিয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। সংসদ নেতা নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া এবং বিরোধী দলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা।
৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ
১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকারের অধীনে একতরফা ও বিতর্কিত ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল সে নির্বাচন বর্জন করে। মাত্র তিনটি দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।
একতরফা সে নির্বাচনে বিএনপি ২৭৮টি আসনে জয়লাভ করে। বাকি দুটি দলের মধ্যে একটি হচ্ছে ফ্রিডম পার্টি। তারা একটি আসন পায়।
এছাড়া ১০টি আসনে জয়লাভ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১দিন। খালেদা জিয়া সংসদ নেতা হলেও বিরোধী দলীয় কোন নেতা ছিলনা।
৭ম জাতীয় সংসদ
সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার পর ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে আওয়ামী ১৪৬টি, বিএনপি ১১৬টি, জাতীয় পার্টি ৩২টি, জামায়াতে ইসলামী তিনটি আসনে জয়লাভ করে।
জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে ২১ বছর পরে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা সংসদ নেতা হন এবং বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন খালেদা জিয়া।
অষ্টম জাতীয় সংসদ
২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে।
নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩টি আসনে, আওয়ামী লীগ ৬২টি আসনে, জামায়াতে ইসলামী ১৭টি এবং জাতীয় পার্টি ও ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১৪টি আসনে জয়লাভ করে।
জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। সংসদ নেতা হন খালেদা জিয়া এবং বিরোধী দলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা।
নবম জাতীয় সংসদ
সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও কিছু বামপন্থী দলের সাথে একত্রিত হয়ে ‘মহাজোট’ গঠন করে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি, বিএনপি ৩০টি, জাতীয় পার্টি ২৭টি, জাসদ তিনটি, জামায়াতে ইসলামী দুটি, ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি আসনে জয়লাভ করে।
আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং সংসদ নেতা হন শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা হন খালেদা জিয়া।
দশম জাতীয় সংসদ
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি একতরফা ও বিতর্কিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে কোন গ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের শরীকরা এসব আসনে বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে।
১৪৭টি আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ ৯৬টি আসন, জাতীয় পার্টি ১২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি চারটি ও জাসদ দুটি আসনে জয়লাভ করে।
সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগের ঝুলিতে আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩৪টি, জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসন পায়। সংসদ নেতা নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা হন রওশন এরশাদ।
সে সংসদে জাতীয় পার্টি একদিকে সরকারের মন্ত্রীসভায় ছিল, অন্যদিকে তারা বিরোধী দলের আসনেও বসেছিল।
একাদশ জাতীয় সংসদ
এই নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘মহাজোট’ এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়।
ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বে থাকলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চালিকাশক্তি ছিল বিএনপি। নির্বাচনে মোট ৩৯টি দল অংশ নেয়।
কিন্তু অভিযোগ ওঠে যে অনেক মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি এবং নির্বাচনের আগের রাতেই অনেক জায়গায় ব্যালট-বাক্স নৌকা মার্কায় সিল মেরে ভর্তি করা হয়। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৮টি আসন পায়।
এছাড়া জাতীয় পার্টি ২২টি আসনে জয়লাভ করে। সে নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ৮টি আসনে জয়লাভ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা।
সংসদে বিরোধী দল হয় জাতীয় পার্টি এবং বিরোধী দলীয় নেতা হন এইচ এম এরশাদ। তার মৃত্যুর পর সংসদে বিরোধী দলের নেতা হন রওশন এরশাদ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
Discussion about this post