মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও সংগঠনটির পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদণ্ডের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক ৭২টি সংস্থা। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকারসংস্থা রবার্ট এফ কেনেডির ওয়েবসাইটে এই সম্মলিত বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানকে মুক্তি দিতে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নথিভুক্ত করার জন্য প্রতিশোধ হিসেবে আদিলুর রহমান খান এবং এলানকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। স্বাক্ষরিত ৭২টি সংস্থা মনে করে, আদিলুর এবং এলানের বিরুদ্ধে সমস্ত ‘প্রতিশোধ মূলক কাজ’ বন্ধ করা উচিত। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সেক্রেটারি ও পরিচালক যথাক্রমে খান ও এলানের বিরুদ্ধে অবিরাম শ্লীলতাহানিমূলক প্রচারণা শুরু করেছে। অধিকার বাংলাদেশে একটি আন্দোলনের সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নথিভুক্ত করে। প্রতিবেদনটি ২০১৩ সালে প্রকাশের পর তাদের আটক করা হয়েছিল। সে সময় আদিলুর রহমান খানকে ৬২ এবং এলানকে ২৫ দিনের জন্য আটক রাখা হয়। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর, ২০১৩ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ‘ভুয়া, বিকৃত এবং মানহানিকর’ ছিল অভিযোগ তুলে তাদের ‘মিথ্যা’ অভিযোগে বিচারিক হয়রানির সম্মুখীন করতে থাকে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ তাদের মামলার শুনানি ত্বরান্বিত করেছে। যার জন্য অধিকারের মতো মানবাধিকার সংস্থাকে দায়ী করেছে।
অধিকারের নেতাদের টার্গেট করার পাশাপাশি, সরকার তাদের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করেছে। সেই সাথে ২০১৪ সাল থেকে সংগঠনের নিবন্ধন পুনঃনবীকরণের আবেদন মুলতুবি রেখে সংগঠনের মানবাধিকারের কাজ পরিচালনা করার ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর, সরকার তাদের বিরুদ্ধে নজরদারি ও হয়রানি বাড়িয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকার প্রতিনিয়ত সংস্থাটিকে প্রকাশ্যে তিরষ্কার করতে থাকে, এমনকি অধিকারের ডকুমেন্টেশনের ওপর নির্ভর করার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২২-এর কান্ট্রি রিপোর্ট অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিস : বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতার সমালোচনা ও প্রশ্ন তোলে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, মানবাধিকারকর্মীরা যাতে হুমকি ও প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই তাদের প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনা করতে পারেন, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা উচিত। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন নথিভুক্ত এবং প্রকাশ করে তাদের বিচার ও শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে, সরকারের উচিত এসব অভিযোগ তদন্ত করা এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা। বিবৃতির শেষে ওই ৭২ মানবাধিকার সংগঠন বলে, আমরা আদিলুর রহমান খান এবং এলানের সঙ্গে রয়েছি। আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে তাদের মুক্তি দেয়ার অনুরোধ করছি, কারণ তাদের শুধুমাত্র মানবাধিকার নিয়ে কাজের জন্য আটক করা হয়েছে।
স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে, অ্যাডভোকেসি ফোরাম নেপাল, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়ান নেটওয়ার্ক, এশিয়া অ্যালায়েন্স অ্যাগেইনস্ট টর্চার, অ্যাসোসিয়েশন প্রো বুস্কেদা ডি নিনাস ই নিনোস ডেসাপারেসিডোস, আওয়াজসিডিএস-পাকিস্তান, বালাওড মিন্দানাউ, বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম), বেলারুশিয়ান সলিডারিটি ফাউন্ডেশন, বীর ডুইনো, অস্ট্রেলিয়া সেন্টার ফর দ্য সাসটেইনেবল ইউজ অফ ন্যাচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল রিসোর্সেস (সিএসএনআর), অবজারভেটরি ফর প্রোটেকশন অফ হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস ফোরাম, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার (ওএমসিটি)।
Discussion about this post