অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে সরকার বিরোধী বক্তব্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের। নির্বাচন কমিশন একটি সাজানো নির্বাচন করার চেষ্টা করছে এবং সেই সাজানো নির্বাচন করা আগামীতে সহজ হবে না বলেও তিনি বলেছেন।
জাপা চেয়ারম্যানের এসব বক্তব্য অনেকটাই হাসির খোরাক যোগাচ্ছে জনগণকে। অনেকেই বলছেন, তারা মনে হয় এবার আওয়ামী লীগের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসবে। আবার অনেকে বলছেন, জাতীয় পার্টির বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। কারণ, তারা হল নাটকবাজ। সকালে একটা বললে আবার বিকেলে গিয়ে আরেক কথা বলে। তবে দলটির মহাসচিবের কথাই এটাই স্পষ্টযে নির্বাচন কমিশন যতই কারচুপি করুক না কেন তারা নির্বাচনে অংশ নিবেন।
দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, তারা সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না। তারা ৩০০ আসনে নির্বাচন করবেন। যদিও চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কন্ঠেও একই সুর।
দেখা গেছে সম্প্রতি বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর ছেলের বিবাহ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন জিএম কাদের। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পাশাপাশি বসেছিলেন। সেই থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল ঝড় উঠেছে যে বিএনপির সাথে জাতীয় পার্টির সরকার বিরোধী ঐক্য হচ্ছে।
তারপর, এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ বরাবরই সরকারের কথিত বিরোধীদল নামে পক্ষে কাজ করে আসছে। তাকে বাদ দিয়ে জিএম কাদের এখন বিরোধী দলীয় নেতা হওয়ার জন্য স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন। তারপর ওরশনের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত মশিউর রহমান রাঙ্গাকেও দল থেকে বাদ দিয়েছেন জিএম কাদের। এসব ঘটনা থেকেও অনেকে বলছেন, জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগের সাথে থাকবে না।
এখন প্রশ্ন হল-জাতীয় পার্টি আসলে কি করতে চাচ্ছে? তারা কি সত্যিই সরকার বিরোধী অবস্থানে যাবে? শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে কি তারা সেই নির্বাচন বর্জন করবে? আওয়ামী দু:খশাসন থেকে মুক্তি পেতে তারা কি অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জনগণের সাথে কি সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে?
যদিও এসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি, তবে শুক্রবার দেয়া জিএম কাদেরের একটি বক্তব্য থেকে ধারণা করা যায় যে জাতীয় পার্টি আসলে সরকারের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে চায় না।
জাপা চেয়ারম্যান শুক্রবার বলেছেন, আওয়ামী লীগ যদি জনগণের আস্থা হারায় তাহলে আমরা আগামীতে তাদের সাথে নাও থাকতে পারি।
তবে দলীয় নেতারা এটাও বলছেন তারা সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাননা। জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মোস্তফা সেলিম বেঙ্গলও বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক জাতীয় পার্টি একক নির্বাচন করবে ও প্রার্থী দেবে। এ প্রক্রিয়া চলছে। যদিও কারও সঙ্গে জোটে থাকবে কি না, সেটি সময়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই নেতা।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্কার যে, তারা এখনো সরকারের সাথে আছে। আর সরকারের বিরুদ্ধে যেসব বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছে সেগুলো তাদের পুরনো অভ্যাস অনুযায়ী। এর আগে তার বড় ভাই এরশাদও দিন রাত ২৪ ঘণ্টা সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতেন। আবার নির্বাচন আসলে আওয়ামী লীগের সাথেই থাকতেন। শুধু সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর জন্য মাঝে মধ্যে একটু নড়াচড়া দিতেন। জিএম কাদেরের বক্তব্য শুনেও মনে হচ্ছে-আগামীতে আরও সুযোগ সুবিধার জন্যই মূলত তিনি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তারা মনে করছেন, জাতীয় পার্টি কখনো সরকারের বলয় থেকে বেরিয়ে আসবে না। আগামী নির্বাচনে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে দিলেই তারা আবার চুপ হয়ে যাবে। আর সরকারের বিরুদ্ধে যা বলছেন, এটা তাদের অভিনয়।
Discussion about this post