মো. জাকির হোসেন
অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বয়স বিবেচনায় পাঁচ দশক পেরিয়ে ষষ্ঠ দশকে পদার্পণ করেছি। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে অমোঘ বাঁশি বেজে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছি। আফসোস কিছু বিষয় বোধগম্য হয়নি আজও। মরণের আগে হবে কি না তা-ও জানি না।
এমনই একটি বিষয় গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা বুঝতে চাইলে হাজারো সংজ্ঞার মধ্যে আপনি পুরোদস্তুর বিভ্রান্ত হবেনই গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাস গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে বলেন, গণতন্ত্র এক ধরনের শাসনব্যবস্থা, যেখানে শাসনক্ষমতা কোনো শ্রেণি বা শ্রেণিসমষ্টির ওপর ন্যস্ত থাকে না, বরং তা সমাজের সদস্যদের ওপর ন্যস্ত থাকে। এমন বাস্তবতা পৃথিবীর কয়টি রাষ্ট্রে আছে?
হিনস হাও গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় হেরোডোটাসের ঠিক উল্টোটা বলেছেন। তাঁর মতে, রাজনৈতিক দৃষ্টিতে গণতন্ত্র বলতে এমন এক মতবাদকে বোঝায়, যেখানে জনগণ রাষ্ট্রকে তার ইচ্ছামতো এমন এক জবরদস্তি শক্তি সংগ্রহ করে দেয়, যার আনুগত্য করতে ভূখণ্ডের সব মানুষ বাধ্য থাকবে। অ্যারিস্টটলের মতে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ধনী মানুষের চেয়ে গরিব মানুষের ক্ষমতা বেশি হবে। কেননা তারা সংখ্যায় বেশি। গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছাই প্রাধান্য পাবে।
পৃথিবীতে এমন কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব আছে কি, যেখানে গরিব মানুষদের ইচ্ছা ধনীদের ওপর প্রাধান্য পায়? মানবসমাজে যে বৈচিত্র্য, বৈষম্য ও অমিল বিদ্যমান, তার কারণেই গণতন্ত্রের প্রয়োজন বলে দাবি করা হলেও গণতন্ত্রের সাম্য নিশ্চিত করার সক্ষমতা সীমিত। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ৩৫ লাখ আর বাসিন্দাহীন ঘরের সংখ্যা এক কোটি ৮৬ লাখ।
গণতন্ত্রকে সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার বলে আখ্যায়িত ও প্রচার করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার হতে পারে না।
ধরুন, কোনো দেশে ১০০ জন মানুষ, আর নির্বাচনে তিনজন প্রার্থী। নির্বাচনের ফলাফলে একজন ৪০ ভোট, দ্বিতীয়জন ৩৫ ভোট, তৃতীয়জন ২৫ ভোট পেলেন। গণতন্ত্রের বিচারে ৪০ ভোট যিনি পেয়েছেন তিনি নির্বাচিত হবেন। তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোথায়? ৪০-এর বিপরীতে ৬০ জনের সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য।
কাজেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বয়ং গণতন্ত্রের সংজ্ঞারই বাস্তবতা নেই। প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ, ওয়েস্টমিনস্টার, জ্যাকসনিয়ান, উদারনৈতিক, ধর্মীয়, তৃণমূল, অংশীদারি, সামাজিক, ডেমার্কি বা লট্টোক্রেসি (কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও অন্টারিও প্রদেশে বিদ্যমান) বা লটারিভিত্তিক গণতন্ত্রসহ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রায়োগিক দিক থেকে এ পর্যন্ত গণতন্ত্রের ৩২টিরও বেশি প্রকারভেদ দেখা যায়।
পরিস্থিতির প্রয়োজনেই এসব প্রকারভেদের জন্মলাভ ও বিকাশ ঘটেছে। আমাদের দেশের জন্য কোন ধরনের গণতন্ত্র উপযুক্ত, সেটা বাছাই করাও কম ঝক্কির ও ঝুঁকির নয়। ৫ শতাংশ মানুষের বাংলাদেশি গণতন্ত্রকে ৯৫ শতাংশ মানুষের গণতন্ত্রে রূপদানের চেষ্টা করতেই গণতন্ত্র হত্যার অজুহাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোকে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে গণতন্ত্রের র্যাকিং প্রকাশ করে আসছে। ক্যাটাগরি চারটি হলো পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, হাইব্রিড শাসন ও কর্তৃত্বপূর্ণ শাসন। ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনেও গণতন্ত্রের গোলকধাঁধার নানা চমকপ্রদ তথ্যের সন্ধান মিলবে।
১৬৭টি দেশকে নিয়ে প্রকাশিত সর্বশেষ র্যাংকিংয়ে ২০১৬ সালে বিশ্বের মাত্র ১৯টি দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র চালু ছিল। ৫৭টি দেশে গণতন্ত্রের অবনমন ঘটেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবনমন হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের র্যাংকিংয়ে প্রায় ২৫০ বছরের পুরনো আমেরিকান গণতন্ত্রের পদাবনতি হয়েছে। দেশটি ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ দেশের শ্রেণি থেকে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ শ্রেণিতে নেমে গেছে।
অন্যান্য কারণের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভাবনীয় বিজয়ের কারণে আমেরিকান গণতন্ত্রের পদাবনতি হয়েছে বলে ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সূচকে উল্লেখ করা হয়েছে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গদিনশিন এক ট্রাম্প সাহেবের তুরুপে ২৫০ বছরের পুরনো আমেরিকান গণতন্ত্র পূর্ণ গণতন্ত্র শ্রেণি থেকে এক লহমায় ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রে অবনমন ঘটল। কত ঠুনকো আমেরিকান গণতন্ত্র!
অন্যদিকে মাত্র ১৯টি পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে প্রথম সারির গণতান্ত্রিক দেশ হলো সুইজারল্যান্ড। অথচ সুইজারল্যান্ড হলো পৃথিবীর বিখ্যাত (!) বড় বড় চোরের স্বর্গরাজ্য। পৃথিবীর গরিব রাষ্ট্রের শিক্ষা, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত শত শত কোটি মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে গরিবের রক্তচোষা দুর্নীতিবাজরা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে অর্থবিত্ত জমা করে। এর পরও সুইজারল্যান্ড পূর্ণ গণতন্ত্রের হাতে গোনা কয়েকটি রাষ্ট্রের মধ্যে শীর্ষ তালিকাভুক্তদের অন্তর্ভুক্ত!
অন্যদিকে মাত্র ১৯টি পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে প্রথম সারির গণতান্ত্রিক দেশ হলো সুইজারল্যান্ড। অথচ সুইজারল্যান্ড হলো পৃথিবীর বিখ্যাত (!) বড় বড় চোরের স্বর্গরাজ্য। পৃথিবীর গরিব রাষ্ট্রের শিক্ষা, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত শত শত কোটি মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে গরিবের রক্তচোষা দুর্নীতিবাজরা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে অর্থবিত্ত জমা করে। এর পরও সুইজারল্যান্ড পূর্ণ গণতন্ত্রের হাতে গোনা কয়েকটি রাষ্ট্রের মধ্যে শীর্ষ তালিকাভুক্তদের অন্তর্ভুক্ত!
সুইজারল্যান্ডে দুর্নীতি ও গণতন্ত্র সহবাস করতে পারলেও তৃতীয় বিশ্বে দুর্নীতি ও গণতন্ত্রের কেমিস্ট্রির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংক ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত রাষ্ট্রগুলো। কি স্ববিরোধিতা? গণতন্ত্র সূচকে ভারত দ্বিতীয় ক্যাটাগরি অর্থাৎ ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত আর বাংলাদেশ তার নিচের ক্যাটাগরি হাইব্রিড শাসনের অন্তর্ভুক্ত।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০ বছরে ভারতে তিন লাখ কৃষক ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে কিংবা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে সামাজিকভাবে অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা করেছে; যার মানে গড়ে প্রতিবছর ১৫ হাজার কৃষক আত্মহনন করেছে। গণতন্ত্র সূচকে বাংলদেশের চেয়ে ওপরের ক্যাটাগরিতে থেকেও ভারতীয় গণতন্ত্র লাখ লাখ কৃষকের আত্মহনন ঠেকাতে পারেনি। অন্যদিকে অনাহার আর ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশে কোনো কৃষকের মৃত্যু বহু বছর থেকে বিরল ঘটনা।
সমসাময়িক বিশ্বে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে যে গণতন্ত্রের অনুশীলন চলছে বা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে, তা মূলত পশ্চিমা বহুদলীয় গণতন্ত্র। ইসলাম এ ধরনের গণতন্ত্র অনুমোদন করে না। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে যে ধরনের শাসনব্যবস্থা কায়েম ছিল, সেখানে জবাবদিহি, নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন, জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, সংখ্যালঘুদের প্রতি সহনশীলতা, সমাজের সব শ্রেণির মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ইত্যাদি বিষয় থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমা ধরনের গণতন্ত্রকে ইসলাম ও আল্লাহর প্রেরিত রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইসলাম যে কারণে পশ্চিমা গণতন্ত্র বর্জন করেছে তার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। আমি দুটি কারণ উল্লেখ করছি।
এক. পশ্চিমা গণতন্ত্র পার্লামেন্টের ইচ্ছাধীন মানবরচিত আইনের দ্বারা পরিচালিত হয়। মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য তা কোরআন-সুন্নাহর পক্ষে বা বিপক্ষে হোক। আর এই অবস্থাকে ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। ইসলামে সমকামিতা ও মদপান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কোরআনে উল্লেখ আছে, সমকামিতার অপরাধে নবী লুত (আ.)-এর জাতিকে আল্লাহ মাটি ওলটপালট করে ধ্বংস করে দিয়েছেন। বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার ২২টি গণতান্ত্রিক দেশে সমকামিতা ও সমলিঙ্গে বিবাহ আইন করে বৈধ করা হয়েছে। আর মদপান তো বহু আগেই বৈধ হিসেবে স্বীকৃত। পার্লামেন্টের ইচ্ছাধীন মানবরচিত আইনের বিপরীতে ইসলামের অবস্থান হলো, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো আইন প্রদান করার কোনো ক্ষমতা নেই। কোরআনের অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী সমাধান করে না, তারাই কাফির, জালিম ও পাপাচারী। ’ (সুরা মায়িদা : ৪৪-৪৬)
দুই. পশ্চিমা গণতন্ত্রে অযোগ্য লোকের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অর্থবিত্ত, আবেগ, দল বা প্রতীকের প্রতি অনুরক্ত হয়ে এমনকি দুর্নীতিবাজ, ধর্ষক, খোদাদ্রোহীও নির্বাচিত হতে পারে। এ বিষয়ে আল্লাহ রাসুল (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন, ‘যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথামতো চলো, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। ’ (সুরা আন’আম : ১১৬) পশ্চিমা গণতন্ত্রের সঙ্গে ইসলামের এ ধরনের সাংঘর্ষিক সম্পর্কের কথা জেনেও এ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোর রাজনৈতিক জোটবদ্ধ হওয়া, আন্দোলন-সংগ্রাম আর জ্বালাও-পোড়াও তাণ্ডবে যুক্ত হওয়া গোলকধাঁধা নয় কি?
ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের র্যাংকিং অনুযায়ী ২০১৫ সালের গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ হাইব্রিড ক্যাটাগরিতে ৮৬তম অবস্থানে ছিল। আর ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। অর্থাৎ গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশের দুই ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। গোলকধাঁধা হলো বহু বছর ধরে শুনছি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে অনেকবার হত্যা করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট ও তাদের সমর্থিত সুধী ও বুদ্ধিজীবীরা বলে আসছেন, এবার গণতন্ত্রকে শুধু হত্যা নয়, গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। কবরবাসী সে গণতন্ত্র সম্পর্কে ব্রিটিশ পত্রিকার র্যাংকিং বলছে দুই ধাপ অগ্রগতি হয়েছে।
মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) জনমত জরিপে উঠে এসেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। জরিপের ফলাফলে আরো বলা হয়, পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে জরিপে অংশগ্রহণকারী উত্তরদাতাদের মধ্যে বিভক্তি সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরদাতাদের বেশ ভালো সমর্থন আছে। বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের পক্ষে পরিচালিত এক জনমত জরিপেও দেখা যায়, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে খালেদা জিয়া ও বিএনপির চেয়ে এগিয়ে আছে। এবার ঠ্যালা সামলান গণতন্ত্রের গোলকধাঁধার।
তবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জান বড় শক্ত। নিহত গণতন্ত্র নানামুখী চিকিৎসায় বারবার জীবন ফিরে পেয়েছে। স্কুলে বাংলা ব্যাকরণে বাগধারায় পড়েছি ‘কৈ মাছের প্রাণ’। এখন চাষের কইয়ের প্রাণ খুব একটা শক্তিশালী না, তদুপরি কই মাছের চেয়ে আমাদের গণতন্ত্রের জান অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই বাগধারাটি পাল্টে লেখা উচিত বাংলা গণতন্ত্রের জান।
অনেকের মতে, গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন হলেও এ ব্যবস্থার সৌন্দর্য হলো এখানে সংখ্যালঘুদের অধিকারের পুরো নিশ্চয়তার বিধান রয়েছে। অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রধান গোষ্ঠীর হাতে সংখ্যালঘুরা, আবার কখনো সংখ্যালঘুদের হাতে সংখ্যাগরিষ্ঠরা নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে মুসলিমদের ওপর হামলার পরিমাণ ৬৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতি বৈষম্য তো সর্বজনবিদিত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন ক্রমাগত হারে বাড়ছে। রোমা জনগোষ্ঠী ইউরোপজুড়ে মারাত্মক অবহেলার শিকার।
বিশ্বের অনেক দেশে রাজনৈতিক-শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক, বংশপরম্পরায় পরিবারের সদস্যরা শাসনক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছেন। নানা কারণে সম্মোহিত মানুষদের ভোটে উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতার পালাবদল হচ্ছে। রাজতন্ত্রের আধুনিক এ সংস্করণ তবু গণতন্ত্র নামেই অভিহিত হচ্ছে। অন্যদিকে গণতন্ত্রের নামে, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন, হরতাল, অবরোধ করে নিরীহ মানুষ হত্যা, সম্পদ ধ্বংস আর অর্থনীতি বিকল করা হলেও গণতন্ত্রেরই জয়গান। গণতন্ত্র তুমি বড়ই মহান। জয়তু গণতন্ত্র।
Discussion about this post