অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ইতিহাসের এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান কেন্দ্রবিন্দু চট্টগ্রামে। গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৫১ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন কয়েকশ মানুষ। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে-মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হবে। অনেক লাশ পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে খুজে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, বিএম কন্টেইনার ডিপোর কোনো অনুমোদন ছিল না। প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই বছর পর বছর ধরে বিপজ্জনক এসব দাহ্য পদার্থ যেনতেন ভাবে সংরক্ষণ করে আসছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মুজিবুর রহমান। এক কথায় বললে-বেআইনিভাবে তিনি বিগত ১২ বছর ধরে বিজ্জনক এই রাসায়নিক পদার্থ ডিপোতে রেখে ব্যবসা করছেন।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে-তা হল আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমানের বেআইনি কর্মকান্ড ও খামখেয়ালির কারণে এতগুলো মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এছাড়া অগ্নি দগ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করতে হবে আরও বহু মানুষকে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেছেন-আগুন লাগার পর তারা রাসায়নিক কেমিক্যালের কথা গোপন রাখছিল। যার ফলে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটে ফায়ার সার্ভিসের ৯ জন কর্মী মারা গেছেন। তারা যদি বলতেন-এখানে কেমিক্যাল আছে তাহলে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন প্রথম থেকেই সাবধান হয়ে যেতেন। তাদেরকে জীবন দিতে হতো না।
তারপর সরকারের বিস্ফোরক অধিদপ্তরও বলছে-কেমিক্যাল রাখার এত বড় ডিপো করেছে তারা সেটা আমরা আগে জানি না। তারা আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমোদন নেয়নি। আর এমন জায়গায় দাহ্য পদার্থ রাখার কোনো আইন সুযোগও নাই।
এখন প্রশ্ন হল-যার বেআইনি কর্মকাণ্ডের কারণে এত মানুষকে জীবন দিতে হল-সেই আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমানকে এখনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? এত বড় ঘটনার এখনো কোনো মামলা করা হয়নি কেন? মুজিবুর রহমানের খুটির জোর কোথায়?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। বিগত ১২ বছর ধরেই মুজিবুর রহমানের অবৈধ ব্যবসা থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বখশিস পাচ্ছে সরকার। তারপর মুজিবুর রহমান মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক। সুতরাং মুজিবুর রহমানের খুটির জোর কোথায় সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এদিকে ২০১১ সালে নেদারল্যান্ডসের একটা ব্যবসায়ী গ্রুপের সাথে যৌথ মালিকানায় ডিপোটি প্রতিষ্ঠিত হয় এই স্মার্ট গ্রুপ। যার এমডি মজিবুর রহমান। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। জানা যায়, শুরু থেকেই এই বেসরকারি ডিপোর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিলো।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিরাপত্তা ও যন্ত্রপাতির শর্ত পূরণ না করার কারণে ২০১৭ সালে ‘বিএম কনটেইনার ডিপো’র লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ রেখেছিল কাস্টম কর্তৃপক্ষ। পরে নবায়নের সুযোগ পেলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হয়নি।
এছাড়া বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ব্যবহৃত ‘ফায়ার ডিস্টিনগুইসারের’ মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে। দুর্ঘটনার সময় ডিপোতে অবস্থান করা ট্রাক শ্রমিক মাহমুদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ক্যাজুয়াল নন-ক্যাজুয়াল তিনশোর অধিক শ্রমিক রয়েছে। এসব শ্রমিকদের অগ্নিনির্বাপণ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না। ভেতরে অবস্থান করা ট্রাক শ্রমিকদের জন্যও কোন নির্দেশনা ছিলো না।
সোহেল নামের আরেক শ্রমিক জানান, ‘ডিপোর ভেতরে পানি সঞ্চালন লাইনেও ত্রুটি রয়েছে। আগুন লাগার সাথে সাথে তাৎক্ষণিকভাবে পানি সংগ্রহ করতে সময় লেগেছে বেশি। এছাড়া ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পরও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। আগুন ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়লে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে সটকে পড়ে। যেকারণে ভোগান্তিতে পড়েন উদ্ধারকর্মীরা। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।
Discussion about this post