‘আমাদের শরীরে তিতুমীর, মাস্টারদা সূর্য সেন ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের রক্ত। আমরা যোদ্ধার জাতি। যোদ্ধারা কখনো ভয় পায় না। আমরা কেন ভয় পাব, ভয় পেলে তো আর রাস্তায় নামতাম না। যত বাধাবিপত্তি ও হুমকি আসুক, আমরা ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হুমকি–ধমকি দিয়ে আমাদের আন্দোলন থেকে বিরত করা যাবে না।’ পুলিশের বাধার মুখে আপনারা দুজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেলেন কেন? প্রথম আলোর সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে কথা গুলো বলছিলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের এক শিক্ষার্থী সোহাগী শামীয়া।
সড়ক আন্দোলনের আরও এ শিক্ষার্থী সেঁজুতি খন্দকার বলছিলেন, দুপুর ১২টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা রামপুরা ব্রিজের ওপর জড়ো হচ্ছিলাম। হঠাৎ পুলিশ এসে আমাদের হাতের প্ল্যাকার্ড ছিনিয়ে নেয়। আমাদের ধাক্কা দিতে দিতে রামপুরা ব্রিজ থেকে বনশ্রী রোডে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে আমাদের নাম–ঠিকানা, মুঠোফোন নম্বর রেখে জোরপূর্বক সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। আমরা পুলিশের এ ধরনের হুমকি–ধমকিতে ভয় পাই না।
এরপর প্রথম আলো প্রশ্ন করে মালিক সমিতি শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি মেনে নিয়েছে। তারপরও আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এভাবে কত দিন আন্দোলন করবেন?
প্রশ্নের উত্তরে সোহাগী শামীয়া বলেন এটা তো মালিকদের ব্যাপার নয়। রাষ্ট্রকে আইন করে অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করতে হবে। শিক্ষার্থীরা শুধু ঢাকার মধ্যে নয়, ঢাকার বাইরেও রয়েছে। আবার বলা হচ্ছে, সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হবে। এ সময়ের পরে কি আমরা ছাত্র থেকে কামলা হয়ে যাই? রাষ্ট্র কেন শর্ত দেবে অর্ধেক ভাড়ার জন্য? বিনা শর্তে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া নিতে হবে।
আন্দোলন নিয়ে আপনাদের আগামী দিনের ভাবনা জানতে চাইলে সোহাগী শামীয়া: বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের পরিকল্পনা, যে কদিন এইচএসসি পরীক্ষা চলবে, সেই কদিন আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করব, যাতে কারও চলাফেরায় বাধার সৃষ্টি না হয়। যেদিন পরীক্ষা থাকবে না, সেদিন আমরা রাস্তায় অবস্থান করব, মিছিল করব—এভাবেই আমাদের কর্মসূচি পালন করব। দাবি মানা না হলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
চলমান আন্দোলনের কারণে রাস্তায় যানজট হচ্ছে, মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ছে। আন্দোলন চালিয়ে গেলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে কি না জানতে চাইলে সোহাগী শামীয়া বালেন, আমরা যখন আন্দোলন করি না, তখন কি যানজট হয় না। এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে সরকারের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা সংবর্ধনার নামে ঢাকায় শোভাযাত্রা করেছেন, যার ফলে ব্যাপক যানজট হয়ে অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষাই দিতে পারেনি। ভিআইপিরা যখন চলাচল করেন, তখন তো রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা বন্ধ থাকে। মানুষের দুর্ভোগ হয়। কই তখন তো কেউ কিছু বলেন না।
সেঁজুতি খন্দকার আরও যুক্ত করে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তো অ্যাম্বুলেন্স যানজটে পড়ে থাকে। আমাদের আন্দোলনের সময় আমরা অ্যাম্বুলেন্স, শিক্ষার্থীদের গাড়ির জন্য জরুরি লেন করে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের কারণে অ্যাম্বুলেন্স আটকা পড়ে রাস্তায় কোনো রোগী মারা যায়নি। অথচ স্বাভাবিক সময় যানজটে অ্যাম্বুলেন্স আটকা পড়ে রোগী মারা যাওয়া ঘটনা আমরা প্রায়ই খবরে দেখি। রাষ্ট্র কখনো কি এই জরুরি লেনের প্রয়োজন অনুভব করেছে?
উল্লেখ্য, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সীমিত কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন নিরাপদ সড়ক দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের ওপর শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে গেলে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাক্কাধাক্কিও হয়। তবে এর মধ্যেও দুই শিক্ষার্থী পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই কর্মসূচি চালিয়ে যান। এই দুই শিক্ষার্থী হলেন সোহাগী শামীয়া ও সেঁজুতি খন্দকার। তাঁরা সেখানে ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন।
Discussion about this post