অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
করোনা মহামারির শুরু থেকেই আওয়ামীলীগ নেতাদের চুরির মহোৎসব চলছে। প্রধানমন্ত্রী নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বন্ধ করে দিলেন চাল। এরপর আবার চালু করলে থেমে থাকেনি গরিবের চাল আত্মসাতের ঘটনা। এবার শুরু হয় নতুন পদ্ধতি চাল চুরি। সরাসরি চুরি না করে তারা এখন নিজেদের পরিবারের সদস্যদের নামে কার্ড করে ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতা ও বিশেষ ওএমএসের চাল আত্মসাত করতে থাকে। এরপর এবার শুরু হয়েছে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার এক অভিনব কৌশল।
দেখা গেছে, আওয়মীলীগ নেতার নাম্বার ব্যবহার করে একাধিক জনের টাকা উঠানো হচ্ছে। হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে গরিবের টাকা। অসহায় হয়ে পড়ছেন গরিবরা।
জানা যায়, বাগেরহাটের শরণখোলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডে এই টাকা আত্মসাত করেছে আওয়ামী মেম্বার। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের মেম্বার রাকিব হাসান ১০০ ব্যক্তির তালিকার নামের ভেতরে ৪০ ব্যক্তির নামের সঙ্গে নিজের মোবাইল নম্বর দেয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তালিকা চেক করার সময় বিষয়টি তার নজরে আসে। পরে তিনি মেম্বার রাকিবের দেওয়া এই তালিকা আটকে দেন। পরবর্তীতে সংশোধন করে দরিদ্র মানুষের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মুড়িয়াউক ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মলাই এর বিরুদ্ধে নগদ প্রণোদনার তালিকায় একই ব্যক্তির নামে একাধিক নম্বর ব্যবহার করেছে। এর মাঝে একটি নম্বরে ৯৯ জন, একটিতে ৯৭ জন, একটিতে ৬৫ জন ও একটিতে ৪৫ জনের নাম দেওয়া হয়েছে। নম্বরগুলো চেয়ারম্যানের আত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠজন বলে জানা গেছে। আবার একটি ওয়ার্ডে কোনো হিন্দু পরিবার বসবাস না করলেও সেই ওয়ার্ডের তালিকায় তিনজন হিন্দু ব্যক্তির নামও রয়েছে। রয়েছে অনেক বিত্তশালী ব্যক্তির নাম। আবার স্বামী-স্ত্রীর নামও এসেছে তালিকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুড়িয়াউক ইউনিয়নের নগদ টাকা পাওয়ার তালিকায় ১১৭৬ জনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাঝে ৩০/৩৫টি নম্বর একাধিক নামের সাথে প্রদান করা হয়েছে। ০১৯৪৪৬০৫১৯৩ নম্বরে দেওয়া হয়েছে ৯৯ জনের নাম। চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই আক্তার মিয়ার ০১৭৪৪১৪৯২৩৪ ব্যবহার করা হয়েছে ৯৭ জনের নামে। চেয়ারম্যানের চাচা শাকিল হক এর ০১৭৮৬৩৭৪৩৯১ নম্বর দেওয়া হয়েছে ৬৫ জনের নামে। চেয়ারম্যানের গোত্রের নবীর মিয়ার ০১৭৬৬৩৮০২৮৪ নম্বর দেওয়া হয়েছে ৪৫ জনের নামে। ১০/১২ জন করে নাম ব্যবহার করা হয়েছে অন্তত ৩০টি নম্বরে।
এদিকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো হিন্দু লোকের বসবাস না থাকলেও তালিকার ৯৫৮, ৯৬৫ ও ৯৭৩ সিরিয়ালের তিনটি নাম হিন্দু ব্যক্তি। আবার ওই ইউনিয়নের বিত্তশালী আক্কল আলীর ছেলে সাবউদ্দিন এর নাম এসেছে তালিকায়। আরো অনেক বিত্তশালীর নাম পাওয়া গেছে তালিকায়। তালিকার ১৬১ ও ১৬৩ নম্বর লোক দুজন স্বামী-স্ত্রী। তালিকার ৯৫১, ৮৫৫, ৮৫৩, ৮৫২, ৮৫১ ও ৭৮৪ নম্বর এর ছয়জন একই পরিবারের।
মুড়িয়াউক ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মলাই জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং এর নির্দেশে তিনি ১১৭৬ জনের মধ্যে আমরা ৭৩০ জনের নাম মেইল করি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, তার সিএ, স্টাফ দুর্লভ ও পিআইও অফিসের মঈন উদ্দিন মিলে অবশিষ্ট তালিকা করে। পরে ইউএনও এবং তার সিএর করোনা হলে তারা আইসোলেশনে যান। ফলে তালিকার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আর তালিকাটি ছিল খসড়া। আমার কোনো স্বাক্ষর নেই। কোনো টাকাও দেওয়া হয়নি। মূলত আমার প্রতিপক্ষ আমাকে ঘায়েল করতে খসড়া তালিকা নিয়ে অপপ্রচার করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার সরকারি নম্বরটি কেউ রিসিভ করেননি। লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ জানান, শুধু মুড়িয়াউক ইউনিয়নই নয় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নেই তালিকায় এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তালিকা প্রণয়নে আমাদের কোনো পরামর্শ নেওয়া হয়নি। চেয়ারম্যান মেম্বাররা নিজেদের লোকের নাম ও এক নম্বরে অনেক নাম ব্যবহার করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষক প্রেরণ করে যাচাই করলেও অনেক অনিয়ম রয়েছে।
এর আগে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা ও তার পরিবারের চার সদস্যই সরকারের নিয়মিত একাধিক সুবিধা ভোগ করছেন। সুবিধাভোগী ওই আওয়ামীলীগ নেতার নাম আবদুল বারেক মুন্সী। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, কোনো পরিবারের একই ব্যক্তি সরকারি একাধিক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। অথচ উপজেলার কেশবপুরে আবদুল বারেক মুন্সী ও তার পরিবারের চার সদস্য মিলে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির নিয়মিত নয়জনের সুবিধা ভোগ করছেন।