অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বন্ধ হচ্ছে না গরিবের চাল আত্মসাতের ঘটনা। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলররা এখন চাল চুরির নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। সরাসরি চুরি না করে তারা এখন নিজেদের পরিবারের সদস্যদের নামে কার্ড করে ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতা ও বিশেষ ওএমএসের চাল আত্মসাত করছে। ইতিমধ্যে পটুয়াখালীতে এক আ.লীগ নেতা দিনাজপুরে এক কাউন্সিলর ধরা খেয়েছে। এনিয়ে এখন দুই জেলাতেই তোলপাড় চলছে।
জানা গেছে, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা ও তার পরিবারের চার সদস্যই সরকারের নিয়মিত একাধিক সুবিধা ভোগ করছেন। সুবিধাভোগী ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম আবদুল বারেক মুন্সী। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, কোনো পরিবারের একই ব্যক্তি সরকারি একাধিক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। অথচ উপজেলার কেশবপুরে আবদুল বারেক মুন্সী ও তার পরিবারের চার সদস্য মিলে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির নিয়মিত নয়জনের সুবিধা ভোগ করছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল বারেক মুন্সীর নাম রয়েছে বয়স্ক ভাতা এবং জেলেদের ভিজিএফের ৪০ কেজি ও ফেয়ার প্রাইজ কার্ডের ৩০ কেজি চালের সুবিধাভোগীদের তালিকায়। তার স্ত্রী গোলেনুর বেগমের নাম রয়েছে বয়স্ক ভাতার তালিকায়, তার ছেলে কামাল মুন্সী ও শহিদুল মুন্সীর নাম রয়েছে জেলেদের জন্য ৪০ কেজি ভিজিএফ এর তালিকায়। এ ছাড়া ৩০ কেজি ফেয়ার প্রাইজ কার্ডের সুবিধা ভোগ করছেন। আরেক ছেলে রিয়াজুল মুন্সী ঢাকায় অবস্থান করেও জেলেদের ভিজিএফের ৪০ কেজি চাল সুবিধা ভোগ করছেন।
অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল বারেক মুন্সী স্বচ্ছল পরিবারের লোক। দোতলা টিনের ঘর আছে। আর্থিকভাবে তারা স্বচ্ছল পরিবার।
এরপর, দিনাজপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বিশেষ ওএমএস এর কার্ড পেয়েছেন কাউন্সিলরের ছেলে। ১০ টাকা কেজি দরে সরকারিভাবে এই বিশেষ ওএমএসের কার্ড পাওয়ার কথা দুস্থ ও গরীব মানুষদের। কিন্তু দিনাজপুর পৌরসভার সংরক্ষিত ১০, ১১ ও ১২ নং ওর্য়াডের নারী কাউন্সিলর মোছা. মাজতুরা বেগম তার ছেলে মো. মিরেজ হোসেনের নামে বিশেষ ওএমএস কার্ড পাইয়ে দিয়েছেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অনেকেই ওই নারী কাউন্সিলর তার নিজের ছেলের নামে ওএমএস এর কার্ড করার বিষয়ে সামালোচনাও করেছেন।
বিশেষ ওএমএস- এর কার্ড থেকে জানা যায়, দিনাজপুর পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ডের মো. খাইরুল ইসলামের ছেলে মো. মিরেজ হোসেনকে ওএমএস এর কার্ড দেওয়া হয়েছে। পেশা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি একজন ব্যবসায়ী। যার কার্ড নং-৫৬১০। যদিও কাউন্সিলর মাজতুরা বেগম ছেলে মিরেজ হোসেন কৃষি কাজ করে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম বলেন, ‘আমরা এরকম অভিযোগ আরও কিছু পেয়েছি। যার প্রেক্ষিতে এখন দিনাজপুর পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের ৬ হাজার বিশেষ ওএমএস-এর কার্ড জেলার ১২টি সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে পুনরায় যাচাইবাছাই করা শুরু করেছি। সরকারের এই বিশেষ ওএমএস এর কার্ড দুস্থ ও অসহায় মানুষদের পাওয়ার কথা। প্রকৃতভাবেই যেন দুস্থ ও অসহায় মানুষরাই এই কার্ডগুলো পায় আমরা সেটা নিশ্চিত হবার জন্য বাছাইয়ের কাজ করছি। কোনো অসঙ্গতি কিংবা অনিয়ম সহ্য করা হবে না বলেও জানান তিনি।’