শাহমুন নাকীব
একটি দেশের জনগনের মাঝে সর্বদা দুটি পক্ষ বিরাজ করে। একটি হুজুগে পক্ষ অপরটি সচেতন পক্ষ। তবে শুনতে খারাপ শোনালেও এ কথা সত্য যে, সামগ্রিক বিচারে তুলনামূলক সুখি জীবনযাপন করে হুজুগে পক্ষটাই।
যেমন ধরুণ, সরকার বলল আগামী ২০২৫ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ স্বপ্ল আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। প্রমাণস্বরূপ বলা যায়, রাজধানী ঢাকার বুকে চলমান মেট্রো রেল প্রকল্প। বিভিন্ন সময় নির্মিত হওয়া ফ্লাইওভার এবং বিশ্বব্যাংকের সহায়তা না পাওয়ার পরও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারা এ কথাই প্রমাণ করে দেশ অর্থনৈতিক দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আর যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ২০২৫ সাল কেন, তার আগেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
সরকারের এই কথায় হুজুগে পক্ষ সুখ অনুভব করতে শুরু করবে। আজন্ম গরীব থাকার পর হঠাৎ করে বড়লোক হলে কথাবার্তা, চলাফেরায় যেমন পরিবর্তন আসে তাদেরও তেমন পরিবর্তন আসা শুরু করবে। হয়তো মনে মনে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলে, ‘উন্নত দেশগুলো এতোদিন আমাদের গরীব গরীব বলে বহু লজ্জা দিয়েছে। এবার আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো এবং নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা জানান দিবো।’
হুজুগে পক্ষ যখন এমন তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে ঠিক তখন সচেতন পক্ষ রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারছে না। কারণ, তাদের হিসাব বলছে এসব উন্নয়ন বা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার বক্তব্য ফাও বুলি ছাড়া আর কিচ্ছু না। কারণ, দেশের অর্থনীতি দিনকে দিন যেদিকে যাচ্ছে তাতে মধ্যম আয়ের দেশ কেন, ফকির দেশের নিচে আর কিছু থাকলে কদিন পর তা-ই বলা হবে।
তবে সরকারের জন্য আশার দিক হল, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অধিকাংশরাই হুজুগে। যার দরুন, সরকার একদিকে উন্নয়ন আর অর্থনৈতিক অগ্রগতির বয়ান দিয়ে যাচ্ছে। আর অন্যদিকে ব্যাংকগুলোতে ঋণ খেলাপির সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি হিসাব মতে ঋণ খেলাপির হার ৯ শতাংশ হলেও বাস্তবে তা ২৩ শতাংশেরও বেশি।
ঋণ খেলাপি কারা?
সবচেয়ে ভয়ানক সংবাদ হচ্ছে, ঋণ খেলাপি হল ব্যাংক মালিক নিজেরাই। অর্থাৎ বেড়ায় ধান খেয়ে ফেলতেছে। যেমন, বেসিক ব্যাংকের মালিকরা ফার্মাস ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে এবং ঋণ খেলাপি হয়েছে। আবার ফার্মাস ব্যাংকের মালিক বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছে এবং ঋণ খেলাপি হয়েছে। অর্থাৎ মাঝখান থেকে লসের ভাগিদার হচ্ছে জনগণ। আর সব টাকা চলে যাচ্ছে ব্যাংকের মালিকদের পকেটে।
ঋণ খেলাপি রোধে সরকার কঠোর হচ্ছে না কেন?
সহজ বাংলায় বললে, চোর নিজে কখনো চুরি বন্ধ করতে চায়? ঋণ খেলাপির টাকাগুলো কাদের পকেটে যাচ্ছে? ব্যাংক মালিকদের হাত ঘুরে কখনো সরাসরি খেলাপির টাকাগুলো সরকার দলীয় নেতাদের পকেটেই যাচ্ছে। যেমন, সালমান এফ রহমান। শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তিনি দেশের শিল্পপতি বনে গেছেন। অথচ ঋণ পরিশোধ করার সময় এসে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে খেলাপি বনে গেছেন।
আমি সচেতন নাগরিক কিনা জানি না! তবে আমি দিনমজুর মানুষ। কাজ করে খাই। আয় সামান্য। তাই হিসাব করে চলতে হয়। আর এই হিসাব করে চলতে গিয়ে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল সাহেবের মুখের বড় বড় কথা বিশ্বাস করতে পারি না। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উন্নয়ন নিয়ে হম্বিতম্বিতে আশ্বস্ত হতে পারি না। আর প্রধানমন্ত্রীর বক্তেব্যে দেশ যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে, এসব ভোগাস বাক্য শুনে নিশ্চিন্তে না ঢেকে ঘুমাতে পারি না।
দেশের অর্থনীতি দিনকে দিন গভীর খাদের কিনারে যাচ্ছে, আর সরকার উন্নয়নের বাঁশি বাজিয়েই চলেছে! ভয় হয়, এই দেশটার শেষ রক্ষা করবে কে?