অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সম্প্রতি সুয়েডেন ভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চাটুকার খ্যাত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরর বিরোদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ এনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর এই সংবাদ মাধ্যমটি ক্ষমতাসীন সরকার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
নেত্র নিউজের ঐ প্রতিবেদনে মন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয় তার হাতে এই দামী ঘড়ির উৎস কি? এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার জন্ম নেয়। অনেকেই বলছেন, আওয়ামী লীগের যে কয়জন নেতা নিজেদেরকে কথিত সৎ রাজনীতিক হিসেবে দাবি করেন তাদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের অন্যতম। সেই কাদের এবার ফেঁসে গেলেন ঘড়ি কেলেঙ্কারিতে। যদিও ওবায়দুল কাদের বলছেন, এসব তাকে কর্মীরা উপহার দিয়েছে। তারপরও তার এই উপহার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ওবাযদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, তার দামি দামি ঘড়ি, স্যুট, টাই, কোর্ট, ট্যান্ট সবই উপহারের। তিনি কখনো এগুলো কিনে ব্যবহার করেন নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-ঘড়িটা যদি উপহারের হয়ে থাকে তাহলে নিউজ সাইটটি ব্লক করে দেয়া হল কেন?
কোন কর্মী তাকে ২৮ লাখ টাকার ঘড়ি উপহার দিয়েছে তার নামও প্রকাশ করেননি তিনি। নেত্র নিউজ বলছে মোটা অংকের একটি কন্ট্রাক্ট পাশ করে দেয়ার বিনিময়ে মন্ত্রী কাদের বিলাসবহুল একটি ব্র্যান্ডের খুবই দামী একটি হাতঘড়ি উৎকোচ হিসেবে নিয়েছেন। কাদের যে কোনো কাজের বিনিময়ে উৎকোচ হিসেবে গ্রহণ করেছেন সেটা এখানে প্রমাণিত। ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করে এখন তিনি সম্মান বাঁচানোর জন্য উপহার হিসেবে বলছেন বলে মনে করছেন অনেকেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি মন্ত্রী সত্যই উপহার পেয়ে থাকেন তারপরেও তিনি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন। আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী কিংবা কোন এমপি ৩০ হাজার টাকার বেশি দামের কোনো উপহার পেলে সেটা অবশ্যই সরকারী কোষাগারে জমা দিতে হবে। সেটা না করে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করলে সেটা আত্মসাত হিসেবে গণ্য হবে , যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ; যেমনটি এরশাদ শাস্তি পেয়েছিলেন।
দেখা গেছে, দুর্নীতির একাধিক মামলায় হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সাজা হয়েছিল। তার মধ্যে একটি ছিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে পাওয়া উপহার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেওয়া। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকাকালে পাওয়া বিভিন্ন উপহার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেননি এরশাদ। এমন অভিযোগে ১৯৯২ সালে তিন বছরের সাজা হয় তার। উচ্চ আদালতে আপিলের পর আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহপালিত বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালীন ২০১৭ সালে অভিযোগ থেকে খালাস পান। তিনি আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন পাওয়া উপহার সামগ্রী তিনি ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাত করেননি। সরকারি বাসভবনে সেগুলো ডিসপ্লে করা ছিল। সরকারি বাসভবন ব্যক্তিগত নয়। কাজেই সেখানে ডিসপ্লে করা উপহার সামগ্রীকে সরকারী কোষাগার হিসেবে গণ্য করে আদালত যেন সুবিবেচনা করে। উচ্চ আদালত সেই যুক্তি বিবেচনা করেছিল।
অনেকেই বলছেন, এই আইনে ওবায়দুল কাদেরও আত্মসাতের মামলায় ফেঁসে যাবেন। মামলা হলে তারও এরশাদের মতো শাস্তি হবে। কাদেরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার বাসায় কোটি টাকার উপহার সংরক্ষিত আছে। কিন্তু নির্বাচনী হলফনামায় সেগুলোর কথা উল্লেখ করেননি তিনি। তিনি সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নির্বাচনী আইনে তার এমপি পদ বাতিল হতে পারে বলে মনে করছেন আইনবিদরা।
এদিকে ওবায়দুল কাদেরের বক্তৃতার সমালোচনা করে তিনটি প্রশ্ন রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, জনাব ওবায়দুল কাদের বলেছেন তাকে ভালোবেসে মানুষ ৩০/৪০ লাখ টাকা দামের ঘড়ি দিয়েছেন। জানতে ইচ্ছে করে ভালবাসার এ মানুষরা কারা?
সন্দেহজনক কোন উপহার পেলে তা গ্রহন করতে হবে এমন কোন কথা নেই। ওবায়দুল কাদের, নিজের বৈধ উপার্জনের সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিহীন এসব উপহার গ্রহন করা ও পরিধান করা আপনার ঠিক হয়েছে কি?ভালোবাসার জিনিস গ্রহনে কোন সমস্যা না থাকলে এ সংবাদ প্রকাশেও সমস্যা থাকার কথা না। তাহলে সংবাদটি প্রকাশ করা নেত্র নিউজের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল কেন? সংবাদটি গোপন রাখার চেষ্টা হয়েছিল কেন বলে প্রশ্ন রাখেন এই আইনবিদ।
এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের দামি ঘড়ির আলোচিত সংগ্রহের ব্যাখ্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ ও অপর্যাপ্ত বিবেচনা করে এসব সামগ্রী কেন যথানিয়মে ও যথাসময়ে রাষ্ট্রীয় তোশাখানায় জমা দেয়া হলো না, তা দেশবাসীকে জানাবার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসাথে সংগৃহীত এ ধরনের উপহার কী ঘড়িতেই সীমাবদ্ধ, এরূপ সংগ্রহ কী শুধু সড়ক ও সেতু মন্ত্রীরই, না কী এর স্বরূপ ও বিস্তৃতি আরো ব্যাপক ও গভীর, তা খতিয়ে দেখে দেশবাসীকে জানাবার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।