অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশ ভারত সফর করছেন। রোববার দিনের যেকোনো সময় তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু ভারত সফর থেকে ফেরার আগেই শুরু হয়েছে নানা উত্তেজনা। প্রতিবার ভারত সফরে শেখ হাসিনা উজাড় করে দিয়েই আসেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটাই শেখ হাসিনার প্রথম দিল্লী সফর। এর আগে ২০১৭ সালে তিনি সর্বশেষ দিল্লি সফর করেন। কিন্তু যেসব ইস্যুকে বাংলাদেশ এর আগে গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন, সেগুলো নিয়ে বৈঠকে কী কথাবার্তা হয়েছে?
এসব প্রশ্নে উত্তর পরে খোঁজা যাবে তার আগে বরং স্বামী স্ত্রীর কিছু সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা যাক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু দিন আগে বলেছিলেন-ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক হলো স্বামী-স্ত্রীর মতো। বাংলাদেশের বর্তমান নতজানু সরকারের পক্ষে স্বামীর ভুমিকা পালন করা সম্ভব নয়। তাই, স্ত্রীর বলতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মূলত বাংলাদেশ তথা শেখ হাসিনাকেই বুঝিয়েছেন। শশুর বাড়ির সম্পদের ভাগ আনার পরিবর্তে শেখ হাসিনা তার বাবার বাড়ির সম্পদের অংশ উল্টো শশুর বাড়ির লোকজনকে লিখে দিয়েছেন। তাই, তার এই বেড়ানো নিয়ে সারাদেশে এখন উত্তাপ-উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শনিবার অ্যানালাইসিস বিডির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো যে, শেখ হাসিনার পক্ষে স্বামীর বাড়ি থেকে কোনো কিছুই আদায় করা সম্ভব হবে না। কারণ, প্রথম ধাক্কা খেয়েছেন তিনি শশুর বাড়ির বিমানবন্দরে নেমে। শেখ হাসিনাকে তারা নজিরবিহীন অপমান করেছে। ওই প্রতিবেদনে যেটা আশঙ্কা করা হয়েছিল বাস্তবে সেটাই হলো।
দেখা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে (দ্বিপাক্ষিক নয়) এক এক পাক্ষিক বৈঠকে যেসব চুক্তি হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো-ফেনী নদী থেকে ভারতের ত্রিপারায় পানি নেয়ার অনুমতি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারপর বাংলাদেশ থেকে ভারতে তরল গ্যাস রপ্তানি করা হবে।
কিন্তু বিপরীতে শেখ হাসিনা কি পেয়েছেন? এদেশের মানুষের যা প্রত্যাশা ছিল তার একটিও হয়নি। তিস্তার পানি চুক্তি বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। শুকনা মৌসুমে পানির অভাবে উত্তরাঞ্চল মরুভুমি হয়ে যায়। আর বর্ষায় ভারত তিস্তার বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ডুবিয়ে দেয়। যুগ যুগ ধরে ভারত তিস্তা চুক্তির আশা দিয়ে আসছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু নিয়ে গেছে কিন্তু তিস্তার কোনো সুরাহা করেনি। আর নতজানু শেখ হাসিনার সরকারও একের পর এক ভারতকে সব কিছু উজাড় করে দিয়ে যাচ্ছে। আনতে পারছে না কিছুই। স্বামীর কাছে গেলেই তার মাথা নত হয়ে যায়।
এরপর, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এরআগেও ত্রিপুরার জন্য ট্রানজিট দিয়ে বাংলাদেশের চরম ক্ষতি করেছে সরকার। এছাড়া, আরেকটি আত্মঘাতী কাজ হলো তরল গ্যাস রপ্তানি করা। কারণ, আমাদের দেশের মধ্যেই এখন গ্যাসের চরম সংকট চলছে। আবাসাকি এলাকায় কোনো গ্যাস পাচ্ছে না। এ অবস্থায় ভারতে গ্যাস রপ্তানি করলে বাংলাদেশের জন্য চরম ক্ষতি বয়ে আনবে।
আর ফেনী নদীর পানি চুক্তির মাধ্যমে সরকার মূলত ওই এলাকাটাকে আরেকটি মরুভুমি বানাতে চাচ্ছে। ভারত যদি ফেনী নদীর পানি নেয় তাহলে পানির অভাবে কৃষি আবাদের সমস্যা হবে। এমনকি একটি সময়ে এসে কৃষি আবাদ একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে।
এদিকে তিস্তার কোন সমাধান না করেই ফেণী ছাড়া আরও ছয়টি অভিন্ন নদীর (মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার) জল কীভাবে ভাগাভাগি করা যায়, অবিলম্বে তার একটি খসড়া কাঠামো প্রস্তুত করতে দুই নেতা যৌথ নদী কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ।
খায়ের নামে একজন লিখেছেন, না পাইলাম রহিঙ্গাদের ব্যাপারে সহযোগিতা , না পাইলাম তিস্তার পানি, না পাইলাম গরু, না পাইলাম পেয়াজ , না পাইলাম সীমান্তে ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের বিচার , না পাইলাম কাটা তার বিহীন বর্ডার তবুও কেন ভারতকে এত কিছু উজার করে দেয়া লাগবে ? পাইলাম শুধু স্বার্থপর দেশ।
জাওয়াদ লিখেছেন, আজ বাংলাদেশের জন্য একটি কালো দিন। এর খেসারত বহু যুগ ধরে বাংলাদেশকে দিতে হবে। সুই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোবে ভারত এই চুক্তির ফলে মনে নাই মাত্র কয়েকদিনের পরীক্ষামূলক চালু ফারাক্কার পরীক্ষা ৪৬ বছরেও শেষ হয়নি।
শিশির লিখেছেন, মানে বুঝলাম না। জন্মের পর থেকেই তিস্তার পানি চাই তিস্তার পানি চাই বলতে বলতে গলা ফাটাই ফেললাম কিন্তু পাইলাম না আর উল্টা ভারতকে ফেনি নদীর পানি দিয়ে দিলেন? এতে আমাদের কি লাভ হলো সেটা জানতে চাই?
ইমরান লিখেছেন, যাারা সামান্য পেয়াজ দেয় না তাদেরকে এত কিছু দেয়া কি ঠিক? দেয়ার খাতা অনেক লম্বা হলো এবার পাওনার খাতাটা একটু খোলেন প্লিজ।
এছাড়া রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার ভারত সফর বাংলাদেশের জনগণের কোনো উপকারে আসবে না। এই সফরে শুধু ভারতের স্বার্থ রক্ষা হয়েছে। সরকার দেশের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। স্বামীকে সব কিছু দিয়ে খালি হাতে ফিরছেন শেখ হাসিনা।