অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, কথিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও বিএনপির পরামর্শক হিসেবে পরিচিত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে এর আগে অ্যানালাইসিস বিডিতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর বাংলাদেশি এজেন্ট এটাও তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি থেকে জামায়াতকে আলাদা করার জন্য জাফরুল্লাহ চৌধুরী দুই বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে, জাফরুল্লাহ চৌধুরী একাধিকবার খালেদা জিয়াকে বলেছেন-জোট থেকে জামায়াতকে বের করে দেয়ার জন্য। কিন্তু খালেদা জিয়াকে তিনি কোনোভাবেই ম্যানেজ করতে পারেন নি।
এরপর কথিত দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে গেলে তিনি তার মুক্তির জন্য রাস্তা-ঘাটে মায়া কান্না করছেন। তলে তলে ড. কামালকে নিয়ে কথিত ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য গণআন্দোলনের কথা বলে জাফরুল্লাহ বিএনপিকে এই কথিত ঐক্যফ্রন্টে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে কোনো দাবি আদায় না করেই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। শুধু নির্বাচনে নয়, এক পর্যায়ে তারা ভোট ডাকাতির অবৈধ সংসদেও যেতে বিএনপিকে বাধ্য করে। এই জাফরুল্লাহকে দিয়েই ভারত ও আওয়ামী লীগ তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।
তবে, ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত থেকে জাফরুল্লাহরা এখনো বিরত থাকেনি। আওয়ামী লীগের মতো জাফরুল্লাহও কথিত যুদ্ধাপরাধের ইস্যুতে জামায়াতকে কোনঠাসা করার চেষ্টায় লিপ্ত আছেন। বুধবার এলডিবির একটি অনুষ্ঠানে জাফরুল্লাহ বলেছেন- জামায়াত যদি সত্যিকার অর্থে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় তাহলে জাতির কাছে তাদেরকে ক্ষমা চাইতে হবে।
এখন প্রশ্ন হলো- খালেদা জিয়ার মুক্তির সঙ্গে জামায়াতের ক্ষমা চাওয়ার সম্পর্ক কি? খালেদা জিয়া কারাবন্দি হয়েছেন মাত্র এক বছর হলো। আর জামায়াতের সঙ্গে জোট করে একসঙ্গে আন্দোলন করছেন প্রায় ২০ বছর ধরে।
দেখা গেছে, বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন এই ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার জন্য সরকার শুধু জামায়াতের ওপরই জুলুম-নির্যাতন করেনি।শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতারা জামায়াত ছাড়ার জন্য খালেদা জিয়াকেও সভা-সমাবেশে অশালীন ভাষায় গালি দিচ্ছে। নিজেরা ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে সরকার আন্তর্জাতিক মহলকে দিয়েও জামায়াত ছাড়ার জন্য খালেদা জিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু খালেদা জিয়া কারো চাপের মুখেই তিনি জামায়াতকে জোট্ থেকে বাদ দেয়ার চিন্তা করেনি নি। দেখা গেছে, জোট ভাঙ্গার জন্য সরকার যত বেশি চাপ দিয়েছে, জামায়াতের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিএনপির অন্যান্য নেতারা বিষয়টি না বুঝলেও খালেদা জিয়া ঠিকই বুঝতেন যে, কথিত যুদ্ধাপরাদের অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে জোট থেকে বের করতে চাচ্ছে। কারণ, ৯৬ সালের নির্বাচনের আগে যখন আওয়ামীলীগ-জামায়াত জোট হয়ে আন্দোলন করেছে তখন জামায়াত যুদ্ধাপরাধী ছিল না। এখন বিএনপির সঙ্গে জোট করার কারণেই জামায়াত যুদ্ধাপরাধী হয়ে গেছে। এজন্য দেশি-বিদেশি চাপ থাকার পরও খালেদা জিয়া জামায়াতকে ছাড়েননি।
আর বিগত ২০ বছরে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের কাছ থেকে খালেদা জিয়া এমন কিছু পায়নি যা বিশ্বাসঘাতকতার পর্যায়ে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো সময় দলের নেতাকর্মীদের চেয়ে খালেদা জিয়া জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের ওপর বেশি আস্থা রাখতেন। এসবের যথেষ্ট প্রমাণও আছে। ২০১৩ সালে একটি হরতাল সফল করতে ছাত্রদলকে বাদ দিয়ে শিবিরের সভাপতি-সেক্রেটারি সঙ্গে রাতে খালেদা জিয়া গোপনে একটি বৈঠক করেছিল এমন তথ্যও আছে। বিগত দিনগুলোতে খালেদা জিয়া একদিনও জামায়াতকে ক্ষমা চাইতে বলেননি।
বিশিষ্টজনসহ সচেতন মানুষ মনে করেন, জাতির কাছে ক্ষমা যদি চাইতে হয় তাহলে বেইমানির জন্য জাফরুল্লাহকে চাইতে হবে। কারণ, জাফরুল্লাহ গোটা জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে। কথিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে জাফরুল্লাহ সরকারের এজেন্ট হয়ে কাজ করেছে। কথা ছিল-খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি না মানলে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু, দাবি মানা ছাড়াই জাফরুল্লাহরা কৌশলে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়েছে। এরপর অবৈধ সংসদকে বৈধতা দিতে তারা বিএনপিকে সংসদেও নিয়েছে।
জাফরুল্লাহ এখানেই থেমে থাকেনি। এখন তিনি বিএনপি থেকে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকেও বাদ দেয়ার চেষ্টা করছেন। এনিয়ে তিনি বিভিন্ন টকশোতে একাধিকবার প্রকাশ্যে বক্তব্যও দিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ভাঙ্গন ধরানোর জন্য যে জাফরুল্লাহ সরকারের এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন এটা এখন প্রমাণিত। সুতরাং, জামায়াত নয়, বেইমানির জন্য জাফরুল্লাহকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।