অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
লজ্জা শরমের সবটুকুই যেন খেয়ে ফেলেছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। সর্বোচ্চ আদালত থেকে বার বার ভৎর্সনা করার পরও তার বোধোদয় ফিরে আসছে না। রাষ্ট্রের যেসব সেক্টর থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে সেসব সেক্টরের দিকে দুদক চেয়ারম্যানের কোনো নজর নেই। অথচ যেখানে তার যাওয়ার প্রয়োজন নেই সেখানে গিয়ে তিনি নাক গলাচ্ছেন।
কিছু দিন আগে তিনি চট্টগ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাসে উপস্থিতি তদন্ত করতে গিয়েছিলেন। এনিয়ে পরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাকে চরমভাবে ভৎর্সনা করেছেন। আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে সেদিকে তার কোনো নজর নেই, দুদক ব্যস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাজিরা নিয়ে।
এরপর দেখা গেছে, দেশের সবচেয়ে আলোচিত দুর্নীতিবাজ স্বাস্থ্যখাতের আবজাল দম্পতি দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। অথচ দুদকের কাছে কোনো খবর নেই।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ রোববার ঘোষণা দিয়েছেন- বনানীর এফআর টাওয়ারের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে তিনি তদন্ত করবেন। এটার অনিয়ম দুর্নীতি তদন্ত করার জন্যতো সরকার কয়েকটি কমিটি গঠন করেছে। এখানে দুদকের যাওয়ার কি দরকার আছে?
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির আখড়া হলো পেট্রোবাংলা ও তিতাস গ্যাস। এখান থেকে রাষ্ট্রের লাখো কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর এই টাকার পুরোটাই যাচ্ছে ক্ষমতাসীনদের পকেটে। তাদের লুটপাটের কারণে যখনই প্রতিষ্ঠান দুইটিতে সংকট দেখা দেয় তখনই আবার বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে। তাদের দুর্নীতির দায় বহন করতে হয় জনগণকে। এইভাবেই চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত রোববার বলেছেন, পেট্রোবাংলা ও তিতাসের দুর্নীতির ৫০ ভাগও যদি কমানো যায় তাহলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না। আদালতের এই মন্তব্য থেকেই বুঝা যায় যে, এই দুইটি প্রতিষ্ঠানে কি পারিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে।
অথচ দুর্নীতি দমন কমিশনের এদিকে কোনো খবরই নেই। তারা যেন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। তারা দুর্বল নির্দোষ জাহালমকে জেলে ভরতে সক্ষম। কিন্তু পেট্রোবাংলা ও তিতাসের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই দুর্বল হয়ে পড়ে। পেট্রোবাংলা ও তিতাসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্টও। রোববার আদালত বলেছেন, দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আইনে তাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার। অথচ তারা পেট্রোবাংলা ও তিতাসের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে প্রতিষ্ঠান দু’টির কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছে। এই চিঠি চালাচালি কেন? দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে সেখানকার কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করা উচিত।
আদালতের এমন মন্তব্যের পর অনেকেই বলছেন, দুদক চেয়ারম্যানের আসলে লজ্জা শরম বলতে আর কিছু নেই। আদালত বার বার ভৎর্সনা করার পরও তিনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এখানে তার ভূমিকা রহস্যজনক। রাষ্ট্রের যেসব দুর্নীতির সঙ্গে ক্ষমতাসীনরা সরাসরি জড়িত সেখান থেকে তিনি দূরে থাকছেন।