অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত বছর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও প্রশাসনের লোকজন বলেছিল সড়ক পরিবহনের অরাজকতাগুলো শিশুরা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এখন থেকে এসব অরজকতার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব কথা বলেই শিক্ষার্থীদেরকে রাস্তা থেকে স্কুলে পাঠিয়েছিল সরকার।
কিন্তু, এরপর সড়ক দুর্ঘটনা কি কমেছে? শৃঙ্খলা ফিরেছে সড়কে? শিক্ষার্থীদের দেয়া দাবিগুলো কি সরকার বাস্তবায়ন করেছে? বেপরোয়া চালকদেরকে কি সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে? এসব প্রশ্নের উত্তর একটাই – না। বরং আগের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনা আরও বেড়েছে। চালকরা দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিকবার স্বীকারও করেছেন যে, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরেনি। মূলত সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতি সরকার রক্ষা করেনি। যার কারণে প্রতিদিনই সড়কে ঝরছে নারী-পুরুষ ও শিশুদের প্রাণ।
সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে বসুন্ধরা এলাকয় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বাড্ডা-রামপুরা রোডের দানব হিসেবে পরিচিত সু-প্রভাত পরিবহনের বাসের চাপায় প্রাণ গেল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেসনালস এর শিক্ষার্থী আবরার আহমদ চৌধুরীর। জানা গেছে, দুটি বাস যাত্রী নেয়ার জন্য ধাক্কাধাক্কি করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আবরারকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ও ১২ দফা দাবিতে তার সহপাঠীরা ওই এলাকায় সারাদিন বিক্ষোভ করেছে। মেয়র আতিকুল ইসলামসহ প্রশাসনের লোকজন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি নিয়ে গেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সাড়া দেয়নি। শিক্ষার্থীরা মেয়রকে জানিয়ে দিয়েছে যে, গত বছরও আপনারা এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু একটি দাবিও বাস্তবায়ন করেননি। যার কারণে আজও আমাদের একজন সহপাঠীকে আমরা হারালাম। শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবারের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করেছে। বুধবার সকাল থেকে ১২ দফা দাবিতে তারা আবারো রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে বুধবার সকালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে অভিভাবকদেরকেও আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর আরও একাধিক এলাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামবে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন কোটা আন্দোলনের নেতা ও ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি একাত্মতা ঘোষণা করে বলেছেন, ছাত্রদের আন্দোলনে যদি আগের মতো এবার আঘাত আসে তাহলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে।
রাজনীতিক বিশ্লেষক ও সচেতন মানুষ মনে করছেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সরকার গত বছর শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিশ্রতি দিয়েছিল। এক বছর পার হলেও সড়কে কোনো শৃঙ্খলা ফিরেনি। সরকারের এই ভাওতাবাজির কারণেই মূলত শিক্ষার্থীরা আবার মাঠে নামছে। কারণ, শিক্ষার্থীরা এখন আর সরকারের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। এবার যদি রাস্তায় নামে তাহলে দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা নাও ছাড়তে পারে।