অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দীর্ঘ ২৯ বছর পর আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন। ২৯ বছর ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসে যে ধরণের উৎসব বিরাজ করার কথা ছিল তা নেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যকোনো প্যানেল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে কোনো আনন্দ লক্ষ্য করা যায়নি। সবার মধ্যেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ নিয়ে একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
এর আগেও অ্যানালাইসিস বিডিতে একাধিক অনুসন্ধ্যান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ডাকসু নির্বাচনটা একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতোই হবে। আওয়ামী লীগকে জেতাতে সিইসি নুরুল হুদা যে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছিলেন, ঢাবি ভিসি ড. আখতারুজ্জামানও ছাত্রলীগের প্যানেলকে জয়ী করতে ঠিক সেই পরিকল্পনা মাফিক সব কিছু করেছেন। যেমন-তড়িগড়ি তফসিল ঘোষণা, বিরোধী প্যানেলের সম্ভাব্য বিজয়ী প্রার্থীদের প্রার্থীতা বাতিল, নির্বাচনী প্রচারে সুযোগ না দেয়া, অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীদের প্রচারে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করলেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়া। মূলত ছাত্রলীগের বিপক্ষের কোনো প্যানেলের প্রার্থীদের অভিযোগকে পাত্তাই দেননি ঢাবি ভিসি।
সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় ছিল, হলে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীদেরকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারে বাধ্য করেছে ছাত্রলীগ। কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে ঢাবি প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত ঢাবি ক্যাম্পাসে সব কিছুই ছিল ছাত্রলীগের অনুকূলে। সবই ছিল ছাত্রলীগকে জেতাতে ঢাবি প্রশাসনের মাস্টার প্লান।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগের প্যানেলকে জয়ী করতে যা যা করার দরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন করেছে।
প্রথমত: ভোট হবে হলে আর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবে ক্যাম্পাসে। হলগুলো এমনিতেই ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। ভোটগ্রহণের সময় ছাত্রলীগ যা খুশি তাই করতে পারবে। এখানে বাধা দেয়ার মতো সাহস কেউ দেখাতে পারবে না।
দ্বিতীয়ত: গণমাধ্যমের ওপরও নিয়ন্ত্রণ করবে ঢাবি প্রশাসন। কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হলেও সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। বিষয়টা পরিষ্কার যে ভোট ডাকাতি চাপা দিতেই মূলত ঢাবি প্রশাসন গণমাধ্যমের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
তৃতীয়ত: বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নামে অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দিয়েই ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এর সঙ্গে হলগুলোতে ব্যালট বাক্স পাঠানো হয়েছে রাতেই। বিরোধী প্যানেলের প্রার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রাতেই ব্যালট দিয়ে বাক্স ভর্তি করতে পারে।
চতুর্থত: একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজনের কথা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সূত্রেও এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগকে জেতাতে হবে এটাই সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ভিসি আখতারুজ্জামানকে বলে দেয়া হয়েছে আপনাকে এই পদে থাকতে হলে সরকারের নির্দেশ মতোই কাজ করতে হবে। ভিপি, জিএস, এজিএসসহ সব সম্পদক পদগুলোতে অবশ্যই ছাত্রলীগের নেতারা থাকতে হবে। আর সদস্য পদ কিছু চলে গেলে সমস্যা নেই।
জানা গেছে, ঢাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকার ও ছাত্রলীগকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, তারা সব কিছুই ব্যবস্থা করেছেন। ছাত্রলীগকে বলে দেয়া হয়েছে তোমরা তোমাদের মত কাজ কর। বাকীটা আমরা দেখবো।