অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশি-বিদেশি সব মহলের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের নেতাকর্মী ছাড়া দেশ-বিদেশের কেউ একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ বলে স্বীকৃতি দেয়নি। আওয়ামী লীগের টাকার বিনিময়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষন করতে আসা সার্কের কথিত একটি মানবাধিকার সংস্থাও পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ভুল স্বীকার করে বলেছেন, নির্বাচনের পরের দিন প্রকাশ করা তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ভুল ছিল। আসলে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। আমরা সব জায়গায় গিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পারিনি। ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে প্রমাণ এসেছে। প্রকৃত অর্থে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। মানুষ তাদের ভোট দিতে পারেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লক্ষ্মীপুরে দায়িত্ব পালন করা একজন এই প্রতিবেদককে বলেছেন, আমাদের এখানে নির্দেশনা ছিল ৫০ শতাংশ ব্যালটে সিল মারার। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যালটে সিল মেরেছিল। পরে দিনের বেলায় ভোট গ্রহণের জন্য অন্যা জায়গা থেকে ব্যালট সংগ্রহ করে কর্তৃপক্ষ। আর রাতে সিল মারা ব্যালটের মধ্য থেকে কিছু নষ্ট করে ফেলে।
মূলত, সারাদেশেই লক্ষ্মীপুরের মতো সিল মারা হয়েছিল। যেমন, খুলনায়তো সিল মারতে গিয়ে অতিরিক্ত আরও ২২ হাজার বেশি মারা হয়েছিল। যেটা রিপোর্ট করার কারণে একজন সাংবাদিকের নামে আইসিটি আইনে মামলা করা হয়। তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল।
ভোট ডাকাতির এই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন নির্বাচন কমিশনও। নির্বাচনের পর তারা বলেছেন-অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে পারায় তারা তৃপ্ত। এজন্য মহা আনন্দে ভোজন অনুষ্ঠানও করেছেন।
তবে, সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ভোট ডাকাতির এই নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে দাবি করে আসলেও থলের বিড়াল আস্তে করে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এতদিন শুধু বিরোধীদল ও বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকে বলা হতো যে নির্বাচনে আগের রাতেই নৌকায় সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে রাখা হয়েছে। সেই ভোট ডাকাতির কথা এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দলের এমপি এবং খোদ নির্বাচন কমিশনের লোকজনের মুখ থেকেই শুনা যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সুনামগঞ্জে গিয়ে একটি সভায় বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে যদি ভোটের আগের রাতে ব্যালট দিয়ে বাক্স ভর্তি করা হয় তাহলে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাচনে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। ওই দিনই তার এই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্টজনেরাও বলছেন, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগের রাতে যে ব্যালট দিয়ে বাক্স ভর্তি করা হয়েছে সেটা তিনি স্বীকার করেছেন।
এরপর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি ভোলা গিয়ে একটি সভায় বলেছেন, এবার দিনের বেলায় ভোট ডাকাতি হবে। নির্বাচন ব্যবস্থা যেদিকে যাচ্ছে সেটা ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত। মেননের এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর আবারো বিভিন্ন মহলে আলোচনার ঝড় উঠে। অনেকেই বলছেন, চাওয়া-পাওয়ার বেদনা থেকে হোক কিংবা অন্য কোনোভাবে হোক রাশেদ খান মেনন সত্যটা উচ্চারণ করেছেন সেটাই বড় কথা। শেখ হাসিনার থলের মধ্যে থাকা বিড়ালটা আস্তে করে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
সর্বশেষ শুক্রবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাতো স্বীকারই করেছেন যে, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আগের রাতেই বাক্স ভর্তি করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ভোটের আগের রাতে ব্যালটে বাক্স ভর্তি বন্ধে ইভিএম ব্যবহার করতে হবে। ইভিএম ব্যবহার করলে নির্বাচনের আগের রাতে আর ব্যালট দিয়ে বাক্স ভর্তি করার সুযোগ থাকবে না।
নুরুল হুদার বক্তব্যই এখন রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রে। সত্যটা স্বীকার করার জন্য রাজনীতিবিদসহ অনেকেই তাকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিইসির বক্তব্যে সরকারের ভেতর তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গেছে। ইসি রফিকুল ইসলাম, এমপি রাশেদ খান মেনন ও সিইসি নুরুল হুদার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। হঠাৎ করে কেন তারা এমন বক্তব্য দিচ্ছেন এতে করে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই হতভম্ব হয়ে গেছেন।
জানা গেছে, এসব বক্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া না জানাতে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দলের নেতাদেরকে এখনো কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এজন্য আওয়ামী লীগ নেতারা সিইসির বক্তব্য নিয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন না। তবে, সিইসির এমন বক্তব্যে তারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।