অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বৃহস্পতিবার ভোটার অনুপস্থিতিতেই অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা সিটি উত্তরের মেয়র পদের উপনির্বাচন। এর সঙ্গে দুইটির নবগঠিত কয়েকটি ওয়ার্ডেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনের ধরণ-প্রকৃতি নিয়ে মনে হয় বেশি কিছু বর্ণনা দেয়ার আর প্রয়োজন নেই। কারণ, সরকারের মন্ত্রী, ডিএমপি কমিশনার ও খোদ নির্বাচন কমিশনই স্বীকার করেছে যে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। যেহেতু তারা নির্বাচনের আয়োজক সেহেতু তারাতো আর একথা বলতে পারে না যে ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেনি। আত্মসম্মান বজায় রেখে বাস্তবতাকে যতটুকু স্বীকার করা যায় সেটা তারা করেছেন।
গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশবাসী ঢাকা সিটির ভোটের দৃশ্য দেখতে পেয়েছে। ভোটের এই বেহাল অবস্থা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে হাসি-মশকরা চলছে। সোজা কথায় বললে-সিটি নির্বাচন সারাদেশের মানুষের কাছে একটি হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে।
প্রথম কথা হলো-ঢাকা সিটি উত্তরের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত অনেকেই জানতেন না যে ২৮ ফেব্রুয়ারি সিটিতে ভোট হবে। এনিয়ে জার্মান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলেতে একটি প্রতিবেদনও করেছে। সেখানে ঢাকা শহরের অনেকেই বলেছেন যে তারা জানেন না ২৮ তারিখে কী হবে। শুধু নবগঠিত কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদেরই জানা ছিল যে ২৮ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলর নির্বাচন হবে। এছাড়া কিছু লোক জেনেছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ঢাকা সিটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর। বিশেষ করে যানবাহন বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর। এই ছিল সিটি নির্বাচনের প্রাথমিক অবস্থা।
দ্বিতীয়ত: সিটির ভোট নিয়ে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ডাকঢোল পেটালেও ভোটাররা এতে সাড়া দেয়নি। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী ছাড়া ভোট দিতে কোনো মানুষ কেন্দ্রে যায়নি। বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে যার বাস্তব চিত্র দেশবাসী দেখেছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ভোটার না আসায় কেন্দ্রের ভেতর পোলিং এজেন্টরা ঘুমাচ্ছেন, বসে বসে একে অপরের সঙ্গে ব্যক্তিগত, সাংসারিক ও বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করছেন, প্রিজাইডিং অফিসাররা কেন্দ্রের বাইরে গিয়ে চা পান করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আশপাশে ঘুরাফেরা করছেন। হঠাৎ করে গণমাধ্যমকর্মীরা আসলে সবাই একটু ঠিকঠাক মতো যার যার জায়গায় গিয়ে বসে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে তারা দায়িত্ব পালন করছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও মিলেনি কোনো ভোটারের দেখা। মূলত এভাবেই সম্পন্ন হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটির ভোটগ্রহণ।
তবে অল্প কিছু এলাকায় কেন্দ্রে কিছু ভোটারের দেখা মিলেছে। সেটাও যেখানে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন হয়েছে। প্রার্থীদের আত্মীয়-স্বজনরা ভোট দিতে কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। তবে, সেখানেও ভোটারদের উপস্থিতি খুবই কম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২১ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচন হয়েছে। উত্তর বাড্ডা খানবাগ এলাকায় একটি স্কুল কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার। জানা গেছে, এখানে ভোট পড়েছে মাত্র ১ হাজারের কিছু বেশি। ভোটার অনুপস্থিতির কারণে প্রার্থীরাও হতাশ হয়েছেন।
অনেকেই বলছেন, জন্মের পর ভোটের এই বেহাল অবস্থা আর কখনো দেখিনি। ভোটাররা মন থেকে এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। যার কারণে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেনি।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ বলছেন, বিরোধীদল নির্বাচন বর্জন করায় জনগনও ভোট বর্জন করেছে। সিটি নির্বাচনই এটার বাস্তব প্রমাণ। দলীয় লোকদেরকে মেয়র-কাউন্সিলর বানানোর জন্য নির্বাচনের নামে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচ করার কোনো মানে হয় না। নির্বাচনের আয়োজন না করে কে মেয়র, কে কাউন্সিলর ও কে উপজেলা চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান হবে সেটা ঘোষণা দিয়ে দিলেইতো হয়।
আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই রসিকতা করে বলছেন-নির্বাচন যা-ই হোক বিনোদনের একটি ব্যবস্থা হয়েছে।