অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নভেম্বরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেছিল সরকার। নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে মোট ৭৫টি রাজনৈতিক দল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সংলাপে অংশ নিয়েছিল। বিএনপি ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়া সবগুলো দলই মূলত সংলাপে গিয়েছিল নিজেদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কথা বলতে। জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে কেউই কথা বলেনি। অপরদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কিভাবে করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করা। বিশেষ করে বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিটাই ছিল ঐক্যফ্রন্টের সংলাপে যাওয়ার প্রধান ইস্যু।
ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে শেখ হাসিনার দুই দফা সংলাপ হলেও ৭ দফা দাবির এক দফাও মানেননি শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা শুধু তাদেরকে এতটুকু আশ্বাস দিয়েছেন যে, এবারের নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্টু ও নিরপেক্ষ হবে। মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কমিশনের কাজে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। প্রধানমন্ত্রীর এসব কথায় বিশ্বাস রেখেই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল জতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট।
১১ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর থেকে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন পর্যন্ত যা ঘটেছে সেটাকে এককথায় বলা যায় নজিরবিহীন। নির্বাচনী প্রচারে বিরোধীদলগুলো মাঠেই নামতে পারেনি। আর ভোটতো ছিল দিবারাত্রি। ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতেই ব্যালটে সিল মেরে ভোটের কাজ অর্ধেক সেরে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। ড. কামাল হোসেন ঘোষণা দিয়েছিলেন ফজরের পর থেকে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তাহাজ্জুদের আগেই সিল মারার কাজ শেষ করেছেন। আর ভোটের দিনতো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের কাছেই যেতে পারেনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে সবদল অংশগ্রহণ করলেও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনের ভোট ডাকাতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের গৃহপালিত বিরোধীদল জাতীয় পার্টি ছাড়া বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত ৭ জন শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের সকল প্রার্থী ভোট ডাকাতি নিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কিন্তু, এরই মধ্যে রোববার হঠাৎ করে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আবারো সংলাপে বসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুব শিগগিরই নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
হঠাৎ কেন আবার সংলাপ? এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সবখানে চলছে আলোচনা সমালোচনা। আগের সংলাপ সফল না হওয়ায় এখন আবার সংলাপের আহ্বান নিয়ে অনেকে মশকারাও করছেন।
বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, নির্বাচনে বিশাল জয় পেলেও আসলে সরকার স্বস্তিতে নেই। কারণ, দিন যত যাচ্ছে ভোট ডাকাতির বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ ততই বেরিয়ে আসছে। বিবিসির তথ্য প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে এখন আন্তর্জাতিক অনেক প্রভাবশালী গণমাধ্যম ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে ঐক্যফ্যন্টের ৭ জন শপথ না নেয়ায়ও সরকার বড় ধরণের চাপের মধ্যে আছে। এরপর ঐক্যফ্যন্টের প্রার্থীরা ভোট ডাকাতির সকল তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করছেন। এসব নিয়ে যেকোনো দিন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করবেন। এসব নিয়ে সরকার এখন বড় ধরণের চাপেরমুখে আছে। তাই, একটি সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতিটাকে স্বাভাবিক করতে চাচ্ছেন শেখ হাসিনা। মূলত: ভোট ডাকাতির বৈধতা নিতেই রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে নিয়ে একটু আদর-যত্ন করবেন।
সরকারের জন্য আরেকটি শঙ্কার বিষয় হলো-স্থানীয় নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করে কোনো সুরাহা না হলে এবার তথ্য প্রমাণ নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারস্থও হবেন। তখন সরকারের জন্য আরো বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। মূলত এসব থেকেই সরকার বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সামাল দিতেই আবারো সংলাপের আয়োজন করছেন।