অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আমার মতে সাম্প্রতিক রাজনীতির ময়দানে মাহী বি চৌধুরীর ‘প্ল্যান বি’ যথেষ্ট আলোড়ন তৈরী করতে পেরেছিলো। অনেককেই দেখতাম বসে বসে ভাষনগুলো শুনতো। প্ল্যান বি’র ফেসবুক পেইজেও লাইকের সংখ্যা বেড়েছিল অনেক। ব্যক্তিগতভাবে আমি প্ল্যান বি’র বা মাহী বি চৌধুরীর ভক্ত কোনকালেই ছিলাম না, হতেও পারিনি। কেননা আমার কাছে গোটা ব্যপারটিকেই সুবিধাবাদী রাজনীতির আরেকটি আবর্জনা বলেই মনে হয়েছে প্রথম থেকেই।
ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন, সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি মাশরাফি যেমন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনে নিজেকে বিতর্কিত করে ফেলেছেন, ঠিক তেমনি প্ল্যান বি নিয়ে মাহী বি চৌধুরী যতটুকু ভাইরাল হয়েছিলেন তার কয়েকগুন তারা মাত্র একদিনেই পঁচে গেছেন যখন মানুষ জেনে গেছে যে গতকাল আওয়ামী লীগের অফিসে মাহী বি চৌধুরী ও বিকল্পধারার পুতুল মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান গিয়েছিলেন। তারা একসাথে নির্বাচন করার বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছেন এবং খুব সম্ভবত মহাজোটের ব্যানারেই বিকল্পধারা নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে।
কতটুকু পঁচে গেছেন তারা সেটা বুঝলাম গতকাল রাতের একাত্তর টিভির সংবাদ পর্যালোচনাভিত্তিক অনুষ্ঠান একাত্তর জার্নাল দেখে। সেখানে সরাসরি মেজর (অব.) মান্নানকে সংযুক্ত করা হয়েছিল। আর আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক গোলাম মুর্তুজা, আওয়ামী পন্থী সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন মিথিলা ফারজানা। অতিথি আর উপস্থাপক সবাই মিলে মেজর (অব.) মান্নানকে যেন ধুয়ে দিলেন। গোলাম মুর্তুজা বিকল্পধারার মহাসচিবকে প্রশ্ন করলেন, আপনাদের সাথে আওয়ামী লীগের চেতনাগত একটি পার্থক্য আছে। দুদিন আগেও আপনারা আওয়ামী লীগকে দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচার হিসেবে আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন। আজ আপনারা কেন সেই আওয়ামী লীগের কাছে গেলেন? আপনাদের সেই অবস্থানের সাথে আজকের অবস্থান কিভাবে তুলনা করবেন? আপনাদের আদর্শ ও চেতনা কি দুদিনেই এতটা পাল্টে গেলো যে আপনারা এক মেরুর থেকে পুরোপুরি বিপরীত রাজনৈতিক মেরুতে চলে যাবেন?
মেজর (অব.) মান্নান আমতা আমতা করে কিছু উত্তর দিলেন বটে কিন্তু তার সেই কথা যে কেউ খায়নি তা সহজেই বোঝা যাচ্ছিলো। আসলে মান্নান বেচারাই বা কি করবেন। তিনি হলেন পুতুল মহাসচিব। বাপ-বেটা যা সিদ্ধান্ত নেয় তিনি জ্বী হুজুর বলে শুধু তা তামিল করেন। তার উপর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যেই শমসের মুবীন চৌধুরীকে তিনি গুলি করেছিলেন, সেই লোক আবার এত বছর ঘুরে ফিরে তার দলেই জায়গা করে নিয়েছে। কবে যে তার দলীয় অবস্থানটাও দখল করে নেয়, সেই ভয়ে মান্নান সাহেব এখন পুরোই কোনঠাসা হয়ে আছেন।
অন্যদিকে রাত একটা দেড়টা পর্যন্ত ইয়ং ছেলে মেয়ে নিয়ে ফেসবুক লাইভ করে মাহী বি চৌধুরী যে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রেজ তৈরীর চেষ্টা করলেন, সেটার মুল উদ্দেশ্য ছিল তাহলে এই। অর্থাৎ ঐক্যফ্রন্টে ঢুকে বিএনপিকে জামায়াতের থেকে সম্পুর্ন দূরে নিয়ে বিএনপিকে চাপে ফেলে তার থেকে ১৫০টি আসন নেয়া আর তা না হলে প্ল্যান বি হলো পুরোই ইউটার্ন নিয়ে মহাজোটে যোগ দেয়া!! সেল্যুকাস! বড়ই বিচিত্র এই রাজনীতি। শেখ হাসিনা একটা সময় বি চৌধুরীকে বদু কাকা বলে তিরস্কার করলেন, আর বি চৌধুরী সাহেব যেই নাম বিকৃতি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখালেন। অথচ সেই বদু কাকা শেষমেষ মহাজোটেই যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।।
মাহী বি চৌধুরী যখন তার প্রথম ভাষনেই ঘাটের, মাঠের, হাটের ইজারার হিসেব কষলেন তখনই আমি বুঝেছিলাম বি চৌধুরীর বিকল্পধারা এখন সুবিধা পাওয়ার নেশায় পাগল হয়ে আছে। দীর্ঘ ১০ বছর কোন ইজারার শেয়ার না পাওয়ায় তারা এখন বিপর্যস্ত। তাই আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে তার সাথে থাকলেই বরং মেগা প্রকল্পগুলোর কমিশন পাওয়া যাবে- হয়তো এই সম্ভাবনা থেকেই বিকল্পধারা মহাজোটে আসতে চায়। সংগে দালাল মিডিয়াগুলোর সাপোর্ট তো আছেই। হয়তো টিভিগুলোতেও মাহী বি চৌধুরী নানা ধরনের প্রোগ্রাম নিয়ে আসার সুযোগ করে নেবেন।
এদের দিয়ে দেশ ও জাতির কোন কল্যান হবেনা। কেননা ওদের প্ল্যান বি হলো প্ল্যান বেনিফিট। যেখানে বেনিফিট আছে সেখানেই যাবে মাহী বি চৌধুরী আর তার প্ল্যান বি। তাই ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে একটা ডিগবাজি দিলো। আর গতকাল মহাজোটের সাথে হাত মিলিয়ে আরেকদফা ডিগবাজি দিলো তারা। জাতি প্ল্যান বি’র আরো ডিগবাজি দেখার অপেক্ষায়।